বাংলাদেশে ধর্ম ব্যবসায়ীদের উত্থানে অতীত কাহিনী

জে,জাহেদ ফিচার ও কলাম লেখকঃ

আমার কাছের এক প্রিয় কথা সাহিত্যিক, যিনি বাংলাদেশ সরকারের সাবেক গবেষণা কর্মকর্তা ছিলেন । বর্তমানে দেশসেরা প্রোডাক্টিভিটি বিশেষজ্ঞ ট্রেইনার হিসাবে পরিচিত নাম তার আওলিয়া খানম। তার কাছ থেকে শুনা ছোট্র একটা কাহিনী নিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ীদের মুখোশ সম্পর্কে জানাতে চাই। কেনোনা মানুষের জানা উচিত আসল রহস্য কিভাবে ইসলাম আর ধর্মকে পুঁজি করে বেহেশতের টিকেট বিক্রি করছে ধর্ম ব্যবসায়ীরা। আসল ঘটনাটি হলো কিছু দিন পূর্বে এক জঙ্গি আহত অবস্থায় ধরা পড়ে সিলেটে। শুধু আহত নয় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল পরে তাকে আই,সি,ইউতে রাখার ২দিন পর তার জ্ঞান ফিরে আসে। জ্ঞান ফিরে আসছে দেখে দায়িত্বরত একজন নার্স এসে আই,সি,ইউ যন্ত্রপাতি খুলে দিতে সামনে আসে। তখন জঙ্গিটি নার্সকে বলে ওঠে -তুমি একা কেন? আসার কথাতো ৭০ জনের বাকীরা কোথায় ? নার্স তো অবাক তারপরেও হাসি চেপে ডাক্তারকে গিয়ে বলে, জঙ্গি রুগীর জ্ঞান ফিরেছে,তবে জ্ঞান ফেরার পর সে ভাবছে বেহেশতে আছে!! তাই সে বেহেশতের হুর-পরী খুজছে,কেনোনা ইসলামে আছে ৭০জন হুর গেলমান খাতির যত্ন করবে বেহেশতে!! কি আজব ব্রেইন ওয়াশ করেছে তাদের। আত্বঘাতীতে মারা গেলে নগদ বেহেশত আর ৭০ হুর পরী সেবা করবে। এবার বলি ধর্ম ব্যবসায়ীদের রুপকথার গল্প। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, সংবিধানের ৩৮নং অনুচ্ছেদে বলা ছিল “ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারি কোন সাম্প্রদায়িক সমিতি বা সংঘ বা অনুরুপ উদ্দেশ্যসম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারি ধর্মীয় নাম যুক্ত বা ধর্ম ভিত্তিক অন্য কোন সমিতি বা সংঘঠন করার বা তাহার সদস্য হইবার বা অন্য কোন প্রকারে তাহার তৎপরতায় অংশগ্রহন করিবার কোন অধিকার থাকিবেনা । এই অতীব গুরত্বপূর্ন সাংবিধানিক ধারাটি ১৯৭৮ সালের ২য় ঘোষনাপত্রে আদেশ নং(৪) ২য় তফসিল বলে বাতিল করে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সকল মৌলবাদীদের রাজনৈতিক ছাড়পত্র দিয়ে দিলেন। ৭২ এর আসল সংবিধানে কিন্তু এদের অস্তিত্ব অগ্রাহ্য করার চমৎকার ব্যবস্থা ছিল। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ: সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদে ছিল: ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক)সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িক (খ)রাষ্ট্র কতৃক কোন ধর্মকে মর্যাদা দান (গ)রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার (ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন বিলোপ করা হবে। এই অনুচ্ছেদটিও ১৯৭৮ সালে সামরিক ঘোষনা বলে সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। অথচ এই অনুচ্ছেদটি বলবৎ থাকলে কত সর্বনাশ, কত অঘটন,কত অপমৃত্যু থেকে রেহাই পেত বাংলাদেশ। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার এমন কদর্য আকার ধারন করত না। সংবিধানকে অপারেশন করা হয়েছে বারর বার ধারালো চুরি কিংবা কাঁচি ব্যবহার করে। জনগন কি করে সুফল পাবে বলেন!! মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী মৌলবাদিরা রাজনীতির নামে বেহেশতের টিকিট বিক্রি কিংবা ধর্মের নামে রাজনীতি করতে পারতোনা। সরকারী চাকুরী লাভের অযোগ্যতা: স্বাধীনতা বিরোধী হিসাবে কাজ করেনি, এমন একটি সত্যায়িত সার্টিফিকেট নেয়ার প্রথা ছিল, সরকারী চাকরী প্রার্থিদের ক্ষেত্রে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের পর,অন্যান্য ধারার মত এই ধারাটিও বর্জন করায় স্বাধীনতা বিরোধীদের সরকারী চাকুরী লাভে আর কোন বাধা রইল না। এভাবে একের পর এক বিতর্কিত বিধি বিধান কাটছাঁট করে সংবিধানকে নিজেদের হীন কাজে ব্যবহার করলে ন্যায় নীতি কিংবা গণতন্ত্রের সুফল কিকরে জনগণ পাবে তার আমাদের বোদগম্য নয়।

জে,জাহেদ সাংবাদিক ও লেখক

zahednews1987@gmail.com i

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.