ডেস্ক নিউজ:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করে রেখে গিয়েছিল, এরপর যারা এসেছে তারা তো ঘুমিয়েই কাটাচ্ছিল। নিজেদের সম্পদ গড়তে ব্যস্ত ছিল। দেশের মানুষকে সম্পূর্ণ অবহেলা করেছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য রাজনীতি করে। কাজেই সেই আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের কল্যাণেই কাজ করেছে।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন কেউ আমাদের দাবায়া রাখতে পারবে না। বাঙালিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি। সঠিক দিক নির্দেশনা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আদর্শ নিয়ে চললে অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষকে কেউ কখনো দাবায়া রাখতে পারবে না। এটা আমরা বিশ্বাস করি এবং আমরা সেভাবেই দেশকে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। সকল দুর্যোগ মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আমরা এগিয়ে যাব।’
রোববার (২৩ মে) মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১১০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, ৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ৩০টি জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র ও ৫টি মুজিব কিল্লার উদ্বোধন এবং ৫০টি মুজিব কিল্লার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রান্ত থেকে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা ১২ বছর ক্ষমতায়, এরমধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ অর্থাৎ যে কথাটা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঘোষণা দিয়েছিলাম রূপকল্প-২০২১, আমরা তা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়, অবকাঠামো উন্নয়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া এবং ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি এবং ঘর তৈরি করে দিয়ে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল আমরা সেটাই বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি এবং করে যাচ্ছি। কাজেই বাংলাদেশের মানুষ গৃহহারা থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তখন বলেছিলাম কোনো ঘর কুঁড়েঘর থাকবে না, টিনের ঘর দিলেও দেব দিয়েছিলাম। এখন সেমি পাকা অথবা দুর্যোগ মোকাবিলায় সহনশীল ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। যাতে একটা জায়গা পেলে জীবন রক্ষা পায়। বাংলাদেশটা একটা ব-দ্বীপ যে কারণে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। আর তাছাড়া বাংলাদেশে মাঝে মাঝেই মনুষ্য সৃষ্টি দুর্যোগও আসে এ সব মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এগিয়ে যাবো। জাতির পিতা ঐতিহাসিক ৭মার্চের ভাষণে বলেছিলেন কেউ আমাদের দাবায়া রাখতে পারবে না। বাঙালিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না এটা আমরা বিশ্বাস করি। সঠিক দিক নির্দেশনা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আদর্শ নিয়ে চললে অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষকে কেউ কখনো দাবায়ে রাখতে পারবে না। এটি আমরা বিশ্বাস করি এবং আমরা সেভাবেই দেশকে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এরইমধ্যে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে গত কয়েক বছর ২৩০টি বন্যা আশ্রায় কেন্দ্র নির্মাণ করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্যোগ হ্রাসে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। স্যাটালাইটের মাধ্যমে সর্তক বার্তা পেতে পারি সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। দুর্যোগ বার্তা পেতে আরো উন্নত করতে হবে এবং আমাদের দ্বিতীয় স্যাটালাইট যেটা করব সেটা আরো বেশি শক্তিশালী যাতে হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি। তাছাড়া নদী ভাঙা বা বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত যারা হয় তাদের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, পাশাপাশি বন্যা আসলে তাদের যেন আশ্রয় দেওয়া যায় সে ধরনের বহুমুখী দুর্যোগের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করা এবং দুর্যোগের সময় যে কোনো অবস্থা মোকাবিলা করা যায় সেটি আমরা করছি। পাশাপাশি প্রতিবন্ধীরা তাদের নিরাপত্তার দিকে নজর রেখে সেভাবেই ভবনগুলো তৈরি করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুজিবকিল্লা উন্নতমানের করে সেখানে একদিকে মানুষ যেমন আশ্রয় নিতে পারে আবার গৃহপালিত পশুপাখি সেগুলো যেন আশ্রয় নিতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কারণ মানুষকে যেমন বাড়িতে সরাতে চাই সবার আগে চিন্তা করতে হবে সেই গৃহপালিত পশু পাখিগুলোর কী হবে। পুরনো মুজিব কিল্লাগুলো সংস্কার করা হবে। দুর্যোগের সময় মানুষের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কেননা কোনো সম্পদ চলে গেলে আবার পাওয়া যাবে, কিন্তু জীবন চলে গেলে আর পাওয়া যায় না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আগে প্রাকৃতি উপায়ে দুর্যোগ মোকাবিলা করা হতো, এটা কিন্তু মানুষ প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। বজ্রপাতে মানুষের যেন মৃত্যু না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া অর্থাৎ আধুনিক ব্যবস্থা তুলে ধরতে পারি সেটির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তা ছাড়া ভূমিকম্প,ভূমিধ্বস অথবা বজ্রপাত বা অগ্নিকাণ্ড সবকিছু থেকে মানুষকে সুরক্ষিত রাখার জন্য যা যা করণীয় সেই ব্যবস্থাগুলো আমরা করে যাচ্ছি। আমরা এরইমধ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় ২০২১-২০৩৫ জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা সেটা প্রণয়ন করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা ব-দ্বীপ এই ব-দ্বীপ অঞ্চলটা সুরক্ষিত করে সেদিকে লক্ষ্য রেখে আজকের জন্য নয় আগামী প্রজন্মের জন্য শত বছরের একটা পরিকল্পনা অর্থাৎ ২১০০ সালের জীবনযাত্রা কেমন হবে সেদিকে লক্ষ্য রেখে ডেল্টাপ্লান করেছি। ব-দ্বীপকে সুরক্ষিত করা বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষকে যাতে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে নিরাপদে বাঁচতে পারে সেই পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। আল্লাহর রহমতে আজকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি।’
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.