বর্ণাঢ্য আয়োজনে যশোরে বঙ্গাব্দ ১৪২৪ বিদায়ানুষ্ঠান
ইয়ানূর রহমান : চিরায়ত নিয়মে নতুনকে জায়গা দিতে কালের গর্ভে হারিয়ে গেল বঙ্গাব্দ ১৪২৪। নতুন দিনের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে বঙ্গাব্দ ১৪২৫। নতুন সূর্যের আবীর রংয়ে আলোকিত হয়ে দশদিকে শুধু নতুনের জয়গান।
নতুনের আহবানে নানা শোভাযাত্রা, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন, আলোচনা, আবৃত্তি আর সাংস্কৃতিক আয়োজনে ঢাক-ঢোল আর কাঁশির বাদ্যে বিদায় জানানো হল বঙ্গাব্দ ১৪২৪ কে। এ উপলক্ষে যশোরের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে চৈত্র সংক্রান্তির বিকেলে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বৈচিত্রময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ বর্ষ বিদায় ও নববর্ষকে স্বাগত জানানো হয়।
সংগীত বিদ্যায়তন, যশোর: যশোরে বর্ষবরণে ঐতিহ্যের ধারাবাহিতকতায় এ সংগঠন ১৪২৪ কে বিদায় ও ১৪২৫ কে সু-স্বাগত জানায় বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনে। ‘মুক্ত যে ভাবনা মোর ওড়ে উর্ধ্ব পানে’ এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চের শতাব্দী বটমূলে ৩০ চৈত্র বিকেল ৫টা ১ মিনিটে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক আয়োজনে শুরু হয় এ সংগঠনের সপ্তম ‘বৈশাখী উৎসব’। আবহবান বাংলার ঐতিহ্যময় বাদ্য যন্ত্র ঢাক-ঢোল, কাঁশি, মন্দিরা, দোতারা, একতারার মূর্ছণায় উদ্বোধন হয় এ অনুষ্ঠানের।
এরপর নববর্ষকে আবাহন করে সাড়ে ৪ ঘন্টার এ অনুষ্ঠানে ছিল বিশেষ আয়োজন অন্বেষা বিশ্বাস কথার রচনায় শিশু গীতিনাট্য ‘অতিচালাকের গলায় দড়ি’। যার পরিচালনা ও পরিকল্পনায় ছিলেন পান্না লাল দে ও অমিত আনন্দ রায়। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন ল²ী রাণী বৈদ্য। এছাড়া পরিবেশিত হয় সংগঠনের শিশু ও কিশোর বিভাগের নৃত্যানুষ্ঠান, পাঁচগীতি কবির একক, দ্বৈত ও সমবেত গান, ব্যতিক্রমী আয়োজনে আবৃত্তি, বড়দের সমবেত কণ্ঠে জীবনমুখী, লোকসংগীত ও একক আবৃত্তি, হারানো দিনের গান, এ প্রজন্মের গানসহ হাছন রাজা, লালন, রাধারমন, শাহ্ আব্দুল করিম, বিজয় সরকারের সহজিয়া গান, রবীন্দ্র ও নজরুলের গান।
এদিকে বর্ষ বিদায় ও নববর্ষের আগমনে বৈশাখী উৎসব মঞ্চে এসে যশোরবাসীকে শুভেচ্ছা জানান জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল। ভারতের চন্দন নগরের সংগীতা মিউজিক কলেজ ও নাট্য দল যুগের যাত্রী’র কলাকুশলীরাও যশোরবাসীকে শুভেচ্ছা জানান।
চাঁদেরহাট যশোর: কালেক্টরেট চত্বরের পুকুরের জলে শত প্রদীপ প্রজ্বালনের ভাসান আর বিদায়ী বছরের শেষ বসন্তের উচ্ছাসে নিশ্বাসে শুক্রবার সন্ধ্যায় চাঁদে হাট বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠান করেছে। চাঁদেরহাটের বন্ধু আর স্বজনদের বর্ণিল উপস্থিতিতে আগুনের পরশমণি প্রাণ ছুঁয়ে গেছে। চাঁদেরহাটের এ অনুষ্ঠানে প্রদীপ ভাসালেন জেলা প্রশসাক আবদুল আওয়াল, চাঁদের হাটের স্বজন, সদস্য, অভিভাবক আর ছোট্ট চাঁদমণি বন্ধুরা। কোন কথা নয় শুধু গান আর আলোর নাচন আলোকের এই ঝর্ণাধারায় এবং আলোয় ভূবন ভরা রাবীন্দ্রিক ছন্দগীতে সুর মেলালেন স্বজন বন্ধু তারাপদ দাস, মুক্তিযোদ্ধা অশোক রায়, ডা. ইয়কুব আলি মোলা, মবিনুল ইসলাম মবিন, সানেয়ার আলম খান দুলু, হিমাদ্রিসাহা মনি প্রমুখ।
বিদ্রোহী সাহিত্য পরিষদ, যশোর: বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে যশোরের বিদ্রোহী সাহিত্য পরিষদ শুক্রবার বিকেলে বাংলা ১৪২৪ কে বিদায় এবং ১৪২৫ কে স্বাগত জানিয়ে বিদ্রোহী সাহিত্য পরিষদ যশোরের উদ্যোগে কবিতা পাঠ, আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। প্রেসক্লাব চত্বর থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রা নেতৃত্ব দেন প্রধান অতিথি ছিলেন যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ও সংগঠনের উপদেষ্টা ডা. আবুল কালাম আজাদ। শোভাযাত্রা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেশব লাল রোডস্থ সংগঠন কার্যালয় এসে শেষ হয়।
সেখানে বাংলার ক্যালেন্ডার বিতরণ করা হয়। ক্যালেন্ডার বিতরণের উদ্বোধন করেন বিশিস্ট কবি আমিরুল ইসলাম রন্টু, ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. শাহনাজ পারভীন।
শোভাযাত্রার আগে প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে আলোচনা সভায়, প্রধান অতিথি ছিলেন যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ও সংগঠনের উপদেষ্টা ডা. আবুল কালাম আজাদ। সম্মানিত অতিথি ছিলেন যশোর জেলা শিল্পকলার একাডেমির কালচারাল অফিসার হায়দার আলী, কলামিষ্ট আমিরুল ইসলাম রন্টু, আলোচক ছিলেন শিক্ষাবিদ ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষাবিদ ড. শাহনাজ পারভীন।
শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মুন্না। সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক মোঃ সামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পদ্মনাভ অধিকারী, আজীবন সদস্য শহিদ জয়, সহ-সভাপতি কাজী রকিবুল ইসলাম, আমির হোসেন মিলন, সহ-সাধারণ সম্পাদক নূর জাহান আরা নীতি, প্রকাশনা সম্পাদক আহমদ রাজু, নির্বাহী সদস্য আহমেদ মাহাবুব ফারুক, রফিকুল পাশা ও আবুল হাসান তুহিন প্রমুখ।
যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়: শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উচ্ছাস ও উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে এ বিদ্যালয়ে ১৪২৫ বর্ষবরণ উদযাপন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দেবপ্রসাদ পাল ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম টুকু।
সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফাওজিয়া আক্তার। সঞ্চালনায় ছিল শিক্ষার্থী মাহজাবিন আহসান অপ্সরা, সানজিদা রহমান রিয়া, মালিহা ইসলাম ও ফারিহা শাহিন অত্রি। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয় মিলনায়তনে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ১১টি নৃত্য, ১২টি গান, ৩টি কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করে। সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত এ অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পর্বসহ প্রভাতী ও দিবা শাখার শিক্ষার্থীরা ২৫টি স্টল দেয়। যে স্টলে ফুল ও হাতে তৈরি পিঠা এবং অন্যাণ্য খাদ্য পণ্য বিক্রয় করে শিক্ষার্থীরা।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.