নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় বদরখালী ইউনিয়নের টুটিয়াখালী এলাকায় আপন চাচাকে অপহরণের পর নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় তিন ভাতিজাকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়াও এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ এবং অপর একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
রোববার (০৬ মার্চ) চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক একেএম মোজাম্মেল হক এই রায় দেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, চকরিয়া উপজেলার বদরখালী টুটিয়াখালী এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক, ইউনুছ হোসাইন মানিক ও ইব্রাহিম মোস্তফা আবু কাইয়ুম। একই এলাকার নুরুল আজিজের ছেলে সোহায়েতকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। শেফায়েত নামে মামলার আরেক আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছে আদালত।
রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবু বক্কর সিদ্দিক আদালতে উপস্থিতি থাকলেও অন্যরা ছিল পলাতক।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালের পাবলিক প্রসিকিউটর আইয়ুব খান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) অ্যাডভোকেট আইয়ুব খান বলেন, রায়ে দণ্ডবিধি-৩৬৪ ধারায় অপহরণের দায়ে আসামি আবু বক্কর সিদ্দিক, ইউনুছ হোসাইন মানিক ও ইব্রাহিম মোস্তফা আবু কাইয়ুম এবং সোহায়েতকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে খুনের দায়ে দণ্ডবিধি-৩০২ ধারায় আবু বক্কর ছিদ্দিক, তার ভাই ইউনুছ হোসেন মানিক ও ইব্রাহিম মোস্তফা আবু কাইয়ুমকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন। যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত অপর আসামি সোহায়েতকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অপর আসামি শেফায়েতকে খালাস দেয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, চিংড়িঘের ও জমি নিয়ে চাচার সঙ্গে ভাতিজাদের বিরোধ ছিল। এরই মধ্যে ইউপি নির্বাচন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্বাধীনতবিরোধীদের বিচার কার্যক্রম চলছিল। ২০১৬ সালের ৩০ জুন বদরখালী ফেরিঘাট এলাকায় একটি চা দোকানে বসে রাজাকারদের ফাঁসি হবে, এমন মন্তব্য করেন নিহত নুরুল হুদা। এ নিয়ে ভাতিজা আবু বকর সিদ্দিক চাচা নুরুল হুদার সঙ্গে তর্ক শুরু করেন। তর্কের একপর্যায়ে আসামিরা একটি অটোরিক্সায় তুলে নুরুল হুদাকে নিয়ে যান। পরে ফেরিঘাট থেকে অদূরে একটি স্থান থেকে নুরুল হুদার গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তের পর পুলিশ ২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলায় পাঁচ আসামিরা হলো-আবু বক্কর সিদ্দিক, ইউনুছ হোসাইন মানিক, ইব্রাহিম মোস্তফা আবু কাইয়ুম, সোহায়েত ও শেফায়েত। এর মধ্যে প্রথম তিনজন আপন তিন ভাই। বিচারিক পর্যায়ে মামলার ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রায় ঘোষণা করেন আদালত।
রায়ের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আসামিরা ন্যায়বিচার পাননি। পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে মক্কেলের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.