বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান সিএইচসিপি, পার করলো বঞ্চনার ১০ বছর!

এস.এম রেজাউল করিম:
আজ ২৬ এপ্রিল, কমিউনিটি ক্লিনিক দিবস। ২০০০ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকের যাত্রা শুরু হয়। ঝাঁকজমক পরিবেশে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ২১ তম কমিউনিটি ক্লিনিক দিবস উদযাপন হওয়ার কথা কিন্তু সারা পৃথিবীজুড়ে করোনা ভাইরাসের মহামারীতে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে সেবা প্রদানে ব্যস্ত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিবিএইচসি প্রতি জন্ম র্বাষিকীতে উপজেলা ও কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়ে দিবসটি গুরুত্বের সাথে পালনের উদ্যোগ নেয়।এ বছরও জন্মদিন পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করোনা কেড়ে নিলো জন্মদিন পালনের আনন্দ। এতে অনেকের মন ক্ষুন্ন।কেটে গেল দশ বছর না পাওয়ার বেদনায়। নিরানন্দে কেটে যাচ্ছে বহুল প্রতিক্ষিত ২১ তম জন্মবার্ষিকী। গত ১৬ এপ্রিল,২০২০ খ্রিঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রান্তিক পর্যায়ে করোনা সন্দেহ ব্যাক্তির নমুনা সংগ্রহে সিএইচসিপিদের একদিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সকল উপজেলা সাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবরে চিঠি প্রেরণ করে। সে থেকে করোনা যুদ্ধে সিএইচসিপি নিজেকে সপেঁ দিয়ে দেশে চলমান সাধারণ ছুটিতে অথবা লক-ডাউনে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী থেমে নেই,তারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা প্রদানে নিজেকে করোনা যোদ্ধা হিসেবে ফ্রন্ট লাইনে রেখেছে।সাধারণ রোগী দেখার পাশাপাশি নিয়মিত স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত সহ দেশের প্রশাসনের সকল নির্দেশনা মেনে চলার জন্য ক্লিনিকে আগত সেবা প্রত্যাশীদের কাউন্সেলিং করেন।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগীদের ভিড় কমলেও বেড়েছে গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে। সুরক্ষা পোশাক ছাড়াই ঝুঁকি নিয়েই সেবাপ্রত্যাশীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেবা প্রদানকারী কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের(সিএইচসিপি)। তারা ঝুঁকি নিয়েই অব্যাহত রেখেছেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা। গ্রামীণ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত সিএইচসিপিরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই সাধারণ মাস্ক পরেই রোগী দেখে দিচ্ছেন প্রাথমিক ঔষুধ। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সেবা প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার পালন করছেন বলে দাবি সেবা প্রদানকারী কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের।করোনা ভাইরাস আতঙ্কে হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাশাপাশি সাধারণ সর্দি, জ্বর ও কাশি বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা এখন জীবন বাঁচাতে ভিড় করছেন গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে। করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন সিএইচসিপি।কিন্তু আদৌ সরকার ঘোষিত প্রনোদনা বা স্বাস্থ্য বীমা বা নগদ অর্থ সহযোগিতা পাবে কিনা তারা জানে না,তারা মাদার অফ হিউমিন্যাটি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও করোনা যুদ্ধে মানবিক কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। মানবিকতা আর দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসার টানে নিজের পরিবার ভুলেই গেছে।তাদের চাকুরী প্রকল্প না ট্রাস্ট,সরকারি না বেসরকারি সেটাও আজ অজানা,তাই প্রনোদনা পাবে কিনা সন্দিহান। জানে একটা তারা করোনা যুদ্ধে মারা গেলে সাদা কাগজের শোক ছাড়া কিছুই পাবে না।কারণ বিগত দশ বছরে যারা মারা গেছে যারা শোক বার্তা ছাড়া কিছুই পায়নি। নাগরিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার প্রতিটি সাবেক ওয়ার্ডে ন্যূনতম একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন সেই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)।খোজ নিয়ে জানা গেছে প্রতিটি ক্লিনিকেই সেবা প্রত্যাশীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। দৈনিক গড়ে ৪০/৫০ জন রোগী আসে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে। যার ৫৫ শতাংশেরও বেশি রোগী সর্দি-জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত।সুরক্ষা পোশাক না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।দেশের তৃণমূল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার লক্ষ্যে নিভৃত গ্রামাঞ্চলে গড়ে তোলা প্রায় চৌদ্দ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থানীয় বাসিন্দদের স্বাস্থ্য সেবার প্রতীক হয়ে উঠেছে।সেখানে প্রসূতি মায়ের নিরাপদ প্রসব সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দেশের জনগণকে একটি নির্দিষ্ট মান সম্মত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গ্রামীণ জনগনের দোর গোড়ায় একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে ‘অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্যাকেজের’ মাধ্যমে সমন্নিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গ্রাম/ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন ও কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন করে কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আর জনগণ পাচ্ছে হাতের নাগালে স্বাস্থ্য সেবা। বর্তমান সরকারের গৃহীত রূপকল্পের ২০২১ ও ২০৪১ সালের ভিশন ও মিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মানব সম্পদের উন্নয়নের জন্য ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার অব্যবহিত পর পরই দেশের সাধারণ জনগণকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার পর্যায়ক্রমে উপজেলা হাসপাতাল,জেলা হাসপাতাল এবং টারসিয়ারী পর্যায়ে অধিক সংখ্যক মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার উদ্যেগ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে সরকার ২০০০ সাল নাগাদ (সকলের জন্য স্বাস্থ্য) অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করে এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত কার্যক্রমে ব্যাপকতা ও ব্যপ্তি আরো প্রসারিত করে ।দেশের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের তুলনায় জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। দেশের পল্লী এলাকার জনগণকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের সুবিধার্থে ও প্রাথমিক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র তথা কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্টার উদ্যোগ নেয়।এই উদ্যোগের অন্যতম কারণ ছিলো বাবা শেখ মুজিবের ডাইরীতে জনগণের দোড়-গোড়ায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপনের স্বপ্নের কথা উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু।সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেন তারই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের শহর এলাকায় সরকারী বেসরকারী পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মিত হওয়ার পর ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে সরকার পল্লী এলাকায় কমবেশী ৬০০০ জনগোষ্টির জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২০০১ সালের মধ্যে ১০,৭২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ এবং ৮০০০ কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করতে সক্ষম হয়। কিন্তু মাঝখানে বিএনপি সরকারে এসে ২০০১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো বন্ধ করে জনগণের স্বাস্থ্য সেবার পথ রুখে দেয়। আবার ২০০৯ সালে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ র্শীষক প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরায় চালু করে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৪,০০০ কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে।পল্লী এলাকার জনগণকে বিশেষতঃ দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্টিকে একটি কেন্দ্র থেকে সমন্বিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা। এই উদ্দ্যেশ্য অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকে যাত্রা শুরু হলেও আজ থেকে ২০ বছর পুর্বে ২০০০ সালে ২৬শে এপ্রিল দেশের প্রথম কমিউনিটি ক্লিনিক গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতি ইউনিয়নের গিমাডাঙ্গা গ্রামে তৎকালিন ও বর্তমান সরকার প্রধান মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গিমাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্ভোধন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু হয় ও বর্তমানে অব্যহত রয়েছে। মুজিব বর্ষে স্বাস্থ্য খাত এগিয়ে যাবে অনেক ধাপ এই শ্লোগান ধারণ করে স্বাস্থ্য বিভাগ ২০২০-২০২১ বর্ষ ব্যাপী অনেক কর্মসূচী ঘোষণা করেছে।কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের প্রতিষ্টান কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের চাকুরী র্দীঘ দশ বছর অতিবাহিত হতে চললেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেনি, এছাড়া ২০০৯ সাল থেকে পুনঃ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করে রিভাইটালাইজেসন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ প্রকল্প নামে।এই প্রকল্প জুন ২০১৪ সালে শেষ হয়ে পুনঃ মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৬ পর্যন্ত চলে এবং পরর্বতীতে অপারেশন প্ল্যান কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার নামে (২০১৭-২০২২) চলমান আছে কিন্তু এরই মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট বিল-২০১৮ পাশ করে অপারেশন প্ল্যান থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক কে ট্রাস্ট র্বোডের মাধ্যমে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। ২০১১ সাল থেকে আগস্ট ২০১৭ পর্যন্ত নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয় ৩ হাজার ১৩৮টি। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৮৬১টি। ২০২২ সালের মধ্যে নতুন আরো ১০২৯ টি সহ সারাদেশে ১৭ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ সংক্রান্ত সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিবিএইচসি।এরই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকের পথচলা শুরু হয়। আর ২০১১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগ দেওয়া হয় একজন করে সিএইচসিপি। স্বাস্থ্য খাতে জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে এগিয়ে। সারাদেশে ১৭ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের লক্ষ্যে চতুর্থবারের এ কর্মসূচি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে।কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সিএইচসিপি প্রদত্ত সেবাসমূহ হলো মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিশু রোগের সমন্বিত চিকিৎসা সেবা,প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা,ইপিআই বা টিকা, এআরআই-এর চিকিৎসা,সদ্য বিবাহিতা এবং অন্তঃসত্ত¡া মহিলাদের নিবন্ধীকরণ, সম্ভাব্য প্রসব তারিখ নিরূপণ ও সংরক্ষণ, পুষ্টি শিক্ষা ও সম্পূরক মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট প্রদান,সদ্য প্রসূতি মা, মারাত্মক পুষ্টিহীন ও দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের ‘ভিটামিন-এ’ ক্যাপসুল প্রদান, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে শিক্ষা ও পরামর্শ, সাধারণ রোগ ও জখমের চিকিৎসা, বয়স্কদের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য শিক্ষা,শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের শনাক্ত ও রেফার করা, জরুরি ও জটিল রোগী উচ্চতর পর্যায়ে রেফারের মাধ্যমে কার্যকরী রেফারেল পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা ও সেবাসমূহের তথ্য যথাযথভাবে সংশ্লিষ্টদের প্রেরণ করে। দেশের গ্রাম পর্যায়ে ক্লিনিকের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৮ কোটির অধিক ভিজিটর সেবা লাভ করেছেন যাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী ্ও শিশু ।দেশে- বিদেশে আজ রোল মডেল কমিউনিটি ক্লিনিক।দেশে রোগী সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট ,সরকার পাচ্ছে পুরস্কার কিন্তু দশ বছর ধরে কর্তৃপক্ষের দেয়া আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হ্ওয়ায় দিন দিন মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের প্রায় চৌদ্দ হাজার সিএইচসিপি। নিয়মিত বেতন ভাতা পায় না।একই বেতনে চাকুরী করছে র্দীঘ দশ বছর,নেই কোন ইনক্রিমেন্ট।পাচ্ছে না ওপির সুবিধাও। ৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএনএসডিপি)’র (২০১৭-২০২২) অধীন অপারেশনাল প্ল্যানে(ওপিতে) সিএইচসিপিদের ইনক্রিমেন্ট ও ধাপে ধাপে রাজস্ব খাতে চাকুরী স্থানান্থরের র্নিদেশনাও রয়েছে।কিন্তু অধ্যাবধি কোন কিছুর বাস্তবায়ন হয়নি,বারংবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সিএইচসিপিদের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সনে সিএইচসিপিদের চাকরী স্থায়ী করণ এর নীতিগত সিদ্বান্তের কথা চিঠির মাধ্যমে সিভিল র্সাজনদের জানান তৎকালীন পরিচালক প্রশাসন ডাঃ মোঃ শাহন্ওেয়াজ।আবার ২২ শে এপ্রিল ২০১৪ সনে তৎকালিন প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ডাঃ মাখদুমা র্নাগিস চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্থরের নিমিত্তে সিএইচসিপিদের সার্ভিস বুক খোলা ও র্বাষিক গোপনীয় প্রতিবেদন পাঠানোর কথা বলে চিঠির পাঠান সিভিল র্সাজনদের নিকট। ফলে সিএইচসিপিরা চাকুরী রাজস্বের স্বপ্ন দেখেছিলো ।গত র্দীঘ নয় বছরে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প অফিস স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়,জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সিএইচসিপিদের চাকুরী রাজস্বকরণের বিষয়ের আলোকে কয়েক দফা চিঠি চালাচালি করে।এরই অংশ হিসাবে গত তারিখ ১৬.০৬.২০১৩ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন ৩ অধিশাখা, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা স্মারক নং- ৪৫.১৭৪.০১৫.০১০০.০০১.২০১১-২১৬ এ রিভাইটালাইজেসন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ (আরসিএইসিআইবি)শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)দেরকে রাজস্বখাতে স্থানান্তর সম্পর্কিত প্রস্তাব প্রেরণ করেন। গত তারিখ ১৯/০৯/২০১৩, স্বাস্থ্য অধীদপ্তর, মহাখালী ঢাকা, স্মারক নং স্বা:অধি:/প্রশা-৩/বিবিধ-৩/২০০৮/৪৬৬৮ এ উলে¬খ করা হয় যে সিএইচসিপিদের চাকুরী স্থায়ী করনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তা প্রক্রিয়াধীন আছে। এর পর গত ১৭/০৪/২০১৪ ইং তারিখে স্বারক নং- আরসিএইচসিআইবি/প্রশা-১৩২/২০১২/৬৫৪ এ সিএইচসিপিদের চাকুরী বহি: খুলতে বলা হয়, এবং গত ২২/০৪/২০১৪ ইং তারিখে স্বারক নং- আরসিএইচসিআইবি/সিসি/সার্কুলার-১২৪/৬৭১ এ সিএইচসিপিদের হাল নাগাদ বার্ষিক/বিশেষ গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) চাওয়া হয়।এর ধারাবাহিকতায় গত তারিখ ১৯/০৬/২০১৪ স্মারক নং- আরসিএইচসিআইবি/কন:/শৃঙ্খলা-৯৭/২০১২/৯২৭ এ উলে¬খ করা হয় যে, কোন সিএইচসিপি অপরাধের দায়ে বা কোন মোকাদ্দমায় চার্জশীটভুক্ত হলে তা সার্ভিস বহিতে লিপিবদ্ধ করণ এবং তার চাকুরী রাজস্ব খাতে স্থানান্তর না হওয়া প্রসঙ্গে নোটিস প্রদান করা হয়।বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূলধারার সাথে সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে জুলাই ২০১১ হতে আরসিএইসিআইবি প্রকল্পের পাশাপাশি ৩য় স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচি (এইচপিএনএসডিপি)এর কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি)অপারেশনাল প¬ø্যান এর মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে যা ডিসেম্বর ২০১৬ তে সমাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ৪র্থ সেক্টর কর্মসূচীতে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশনাল প¬ান জানুয়ারী ২০১৭ হতে জুন ২০২২ মেয়াদে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। জুন/২০১৭ইং হতে অপারেশন প¬্যানভুক্ত করে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের র্কাযক্রম চালু রাখা হয়। কিন্তু নতুন প্রকল্প চালুর আগেই অধ্যাবধি চাকুরী রাজস্ব না হ্ওয়ায় হাইর্কোটের দ্বারস্থ হন সিএইচসিপিদের অনেকে।ইতির্পুবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সাড়ে ১৩ হাজার সিএইচসিপিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি)’ প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়। তাদেরকে আগামী ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পে স্থানান্তর করে গত ১৫ মে,২০১৭ চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু তাদের নতুন প্রকল্পে স্থানান্তরের আগেই রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে কমিউনিটি ক্লিনিকে কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরি প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।এ বিষয়ে হাইর্কোটের দেওয়া রায়ের অনুলিপি বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর-২০১৭) প্রকাশিত হয়েছে।যাহা বাস্তবায়ন করার জন্য গত ১৮/০১/২০১৮ খ্রী তারিখে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এ্যাসেসিয়েশন (বিসিএইচসিপিএ), দাবী আদায় বাস্তবায়ন কমিটি ২০/০১/২০১৮ খ্রী তারিখ হতে কর্মসুচী ঘোষনা করে। ঘোষিত কর্মসুচী বাস্তবায়ন করে রিক্ত হস্তে কমিউনিটি বেইজ হেলথ কেয়ার সিবিএইচসি স্মারক নং- স্বা:অধি/সিবিএইচসি/প্রশাসন-২২/২০১৮/৩১৭ তারিখ ২৭/০২/২০১৮ ইং মোতাবেক ০৩/০৩/২০১৮ খ্রী সিএইচসিপিরা কর্মে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। আর যোক্তিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দ্ওেয়ার কারণে স্মারক নং স্বা:অধি/সিবিএইচসি/প্রশাসন/সিএইচসিপি/শৃৃঙ্খলা ১৬/২০১৮/২১৩ তারিখ ০৩/০২/২০১৮ ইং মোতাবেক আটজন সিএইচসিপিকে প্রাথমিক বহিষ্কার করে,অপরাধ তাদের ডাকে আন্দোলন জমেছিলো-ন্যায্য অধিকার চেয়েছিলো।কারণ র্দশানো নোটিশ প্রেরণ করলে লিখিত জবাব দাখিল করেও তার সুরাহা হয় র্দীঘ সময় পরে।দেশে ন্যায্য অধিকারের জন্য পেশাজীবীদের আন্দোলন নতুন কিছু নয়। কিন্তু একটি মহল সিএইচসিপিদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম নিরুৎসাহিত করার জন্য সাসপেন্ডকে কৌশল হিসাবে ব্যবহার করছে। র্দীঘদিনের দাবী পুরণ না হ্ওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবায় সিএইচসিপিগন র্কমস্থলে ফিরে পূর্বের ন্যায় আন্তরিকভাবে মনোনিবেশ করতে পারছেনা,তব্ওু পেঠের তাগিদে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ।চাকুরী রাজস্বের আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হওয়াতে হতাশ সিএইচসিপি পরিবার। পরে সরকার দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে কমিউনিটি ক্লিনিককে স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে রুপ দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট-২০১৮ বিল পাশ করে। প্রবিধান প্রণয়ন পূর্বক সকল সুবিধা প্রদানের কথা প্রকাশিত গেজেটে রয়েছে। ট্রাস্ট র্বোড গঠন ও গেজেট প্রকাশের র্দীঘ তিন বছর অতিবাহিত হল্ওে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখনও প্রবিধান প্রস্তুত করে প্রকাশ করতে পারেনি। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের কারিগর খ্যাত কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা স্বত্বেও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছে না, নেই ইনক্রিমেন্টও । সিএইচসিপিরা তাদের চাকুরী রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত সহ বকেয়া ইনক্রিমেন্ট ,১১ তম গ্রেড ,তিন স্থরের পদোন্নতি ও ইন সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণ প্রদান দ্রæত বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছেন। এসব সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা।ফলে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার মান কমার আশংকা করছে সচেতন মহল। এ রকম চলতে থাকেলে ভবিষ্যতে এসডিজি অর্জন হুমকির মুখে পরতে পারে।দেশে প্রত্যেক পেশাজীবীদের আলাদা সংগঠন রয়েছে।তারই মতো বাংলাদেশ সিএইচসিপি এসোসিয়েশন হলো ১৪০০০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর প্রাণের সংগঠন,তাদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের নির্বাচন ছিলো গত ২৬ ফেব্রুয়ারী,২০২১ইং সরকারী ছুটির দিন শুক্রবার।কিন্তু ঐদিন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য সমেবেত হওয়ার অভিযোগ এনে নব নির্বাচিত সভাপতি সহ কয়েকজনকে সাসপেন্ড করে সিবিএইচসি।যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল।স্বাস্থ্য কর্মীদের ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত রাখার অপকৌশল প্রয়োগ করে স্বাস্থ্য বিভাগের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

-এস.এম রেজাউল করিম
সভাপতি
উপজেলা সিএইচসিপি এসোসিয়েশন, রামু শাখা,কক্সবাজার।
#০১৮১৪৮২৮১৮২

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.