প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পদ পুনর্বণ্টনের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দিক নির্দেশনা নেই

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখিত রাজস্ব আহরণ কৌশলকে গতানুগতিক এবং কোভিড মহামারীজনিত দারিদ্র মোকাবেলার ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত বলে অভিহিত করেছেন অধিকারভিত্তিক নাগরিক সমাজ।
শনিবার (৫ জুন) ইক্যুইটিবিডি’র উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেট সম্পদ পুনর্বণ্টনের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দিক নির্দেশনা নেই বলে অভিমত প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে দেশে থেকে অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধ এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাংক খাতের সামগ্রিক সংস্কারের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন ইক্যুইটিবিডি’র প্রধান সঞ্চালক রেজাউল করিম চৌধুরী।
আয়োজকদরে পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন একই সংস্থার আহসানুল করিম।
এতে বক্তৃতা করেন সুশাসনের প্রচারাভিযা (সুপ্র)-এর মোঃ আবদুল আউয়াল, কোস্টাল লাইভলিহুড এন্ড এনভায়রনমেন্ট এ্যকশন নেটওয়াক (ক্লিন) এর হাসান মেহেদী এবং কোস্ট ট্রাস্টের সৈয়দ আমিনুল হক ও মোঃ মোস্তফা কামাল আকন্দ।
আহসানুল করিম উল্লেখ করেন,’সরকার এনবিআরের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের এবং গ্রামীণ অঞ্চলে কর এবং ভ্যাট জাল সম্প্রসারণের প্রস্তাব করেছে। কিন্তু করোনার মহামারীজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্রমবর্ধমান ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং আয় কমে যাওয়ার চাপ সামাল দেওয়ার কৌশল প্রস্তাবিত বাজেটে নেই। বেকারত্ব বৃদ্ধির এই সময়ে সুষম সম্পদ পুনর্বণ্টণের দৃষ্টি থেকে এই বাজেট ন্যায় বিচার করতে পারছে না। সরকারের উচিৎ দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবিকার চাপকে সহজ করে তুলতে অন্তত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর উপর থেকে ভ্যাটের বোঝা কমিয়ে আনা।’ তিনি আয়োজকদের পক্ষ থেকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন, সেগুলো হলো: ১. আন্ডার ইনভয়েসিং এবং অবৈধ অর্থ পাচাার রোধে অর্থিক খাতে সুশামসন নিশ্চিত করতে বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, ২. আয়কর সংগ্রহকে শক্তিশালী করতে আধুনিক প্রযুক্তিগুলির সাথে এনবিআরকে সমৃদ্ধ করা, ৩. গরিব এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য কমপক্ষে দশটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যকে ভ্যাট অব্যাহতি ঘোষণা করি, ৪. কর্মহারাদের জন্য বিশেষ ভাতা বা সরাসরি আর্থিক সহযোগিতা, ৫. সরকারি অফিসগুলোতে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, বিশেষ করে সরকারি ক্রয় পদ্ধতিতে বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন।
আবদুল আউয়াল বলেন, যে সরকারের উন্নয়ন দর্শন এবং বাজেট পরিকল্পনা কোনওভাবেই দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছে না। আমরা কর ফাঁকি দেওয়া এবং অর্থ পাচারে সম্পৃক্ত ধনীদের বেশি সুবিধা দিচ্ছি। সুতরাং প্রথমে কর ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করা দরকার, সরকারকে এনবিআরের সাথে সেই লক্ষ্যেই কাজ করা উচিৎ।
হাসান মেহেদী বলেন, দেশের ঋণের বোঝা এখন জিডিপির প্রায় ৪০% এবং প্রস্তাবিত ঋণ গ্রহণের ফলে বোঝা আরও বাড়বে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, স্বাস্থ্য খাত গত অর্থবছরে ঋণের মাধ্যমে প্রায় ৩৭,০০০ কোটি টাকা পেলেও করোনার সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে।
আমিনুল হক বলেন, অবৈধ অর্থ পাচারের অন্যতম সহযোগী ব্যাংক খাত। আর তাই অবৈধ অর্থ পাচার প্রতিরোধে ব্যাংক খাতের সামগ্রিক সংস্কার প্রয়োজন । অতি মুনাফা রোধে ব্যাবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুষম প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে বারবার বিভ্রান্তি তৈরি করছে, প্রস্তাবিত বাজেটে অবৈধ অর্থ পাচার রোধে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে কোনও কিছু উল্লেখ নেই। অর্থ অর্থ পাচার বন্ধ করা গেলে তা হতে পারে রাজস্ব আদায়ের অণ্যতম উৎস্য। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে এটি এক ধরনের অবিচার।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.