নিজস্ব প্রতিবেদক:
টেকনাফে প্রেসক্লাবের ভবন নির্মাণে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে।
ভবন নির্মাণেযুক্ত এনজিও ফোরামের প্রকৌশলী মো. নাঈমকে পিটিয়ে শ্রমিকদের তাড়িয়ে দিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন সরকারি দলের সাবেক এই দাপুটে এমপি।
রোববার (২২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফ পৌরসভা কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, ১৯৯৬ সালে আবেদনের প্রেক্ষিতে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন একটি পুরনো ভবন টেকনাফ প্রেসক্লাবের নামে হস্তান্তর করেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেটি ভেঙে দাতা সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতায় নতুন একটি ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। যা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে।
রোববার সকালে হঠাৎ সাবেক এমপি বদি নির্মাণাধীন প্রেসক্লাব ভবনের দেখভালের দায়িত্বে থাকা এনজিও ফোরামের ইঞ্জিনিয়ার নাঈমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং মারধর করেন।
এনজিও ফোরামের প্রকৌশলী মো. নাইম বলেন, নির্মাণের কাজ চলাকালীন হঠাৎ নির্মাণাধীন প্রেসক্লাবের ভবনের সামনে একটা গাড়ি এসে থামে। এবং গাড়ির ভিতর থেকে আমাকে ডাকা হয়। গাড়ির পাশে যেতে গাড়ির ভিতরে বসে থাকা সাবেক এমপি বদি আমার শার্টের কলার চেপে ধরেন। এবং প্রেসক্লাব নির্মাণের অনুমতি কে দিয়েছে বলে পরপর দুই তিনটি ঘুষি মারেন।মারধরের পর তুই এখানে থাক আমি আবার আসতেছি বলে তিনি (বদি) ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সাংবাদিকরা জানান, প্রকৌশলী নাইমকে মারধরের পর পুণরায় প্রেসক্লাব ভবনে আসেন বদি। এরপর প্রেসক্লাবের নির্মাণাধীন ব্যানার টেনে ছিঁড়ে ফেলে দেন। এবং প্রেসক্লাবের নির্মাণাধীন ভবন ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়ে যান।
এদিকে এ ঘটনার পর টেকনাফে কর্মরত সাংবাদিকরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। সাবেক এমপি বদির এ ধরনের কাণ্ড মেনে নেয়া হবে না উল্লেখ করে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন টেকনাফ প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. ছৈয়দ হোছাইন, সাবেক সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, সাবেক সহ-সভাপতি মো. আশেক উল্লাহ ফারুকী, সাবেক সভাপতি কায়ছার হামিদ, সাবেক সহ-সভাপতি মো. তাহের নাঈম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম রাসেল প্রমুখ।
এর আগেও এমপি থাকাকালীন গত ২০১১ সালে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুর রহমানকে টেকনাফ পৌর নির্বাচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বদি।
একইভাবে ২০১৫ সালে টেকনাফ উখিয়া উপজেলা প্রশাসনের মাসিক উন্নয়ন সভা চলাকালে উখিয়া উপজেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মোস্তফা মিনহাজকে মারধর করেন।
এছাড়াও স্কুল শিক্ষক, ব্যাংকারসহ অনেকেই সাবেক এমপি বদির হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল বশর জানান, সমাজের অন্যায় অবিচার তুলে ধরা সাংবাদিকদের তীর্থ স্থান প্রেসক্লাব। আবদুর রহমান বদি প্রেস ক্লাবের চলমান কাজ বন্ধ করার জন্য নয়, সাংবাদিকদের কলম বন্ধ করতে এই হীন কাজটি করেছেন।
সরকারি খাস জমিতে প্রেস ক্লাব হলে বাঁধা দেওয়ার সে কে? প্রশ্ন নূরুল বশরের।
এধরনের হীন কাজ থেকে সরে এসে বদিকে দলের ভাবমূর্তি ধরে রাখার আহবান জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এ প্রসঙ্গে জানতে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিক কল দেওয়া হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
আবদুর রহমান বদির স্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার বলেন, সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে কাউকে কোন ধরনের মার্কেট নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। এ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে বন্ধ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, টেকনাফ থানার পাশের জমিটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত কিনা যাচাইয়ের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট টেকনাফকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট যাচাই-বাচাই করে জমিটি সরকারী খাস খতিয়ানের জমি হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। অবৈধভাবে দখল করার অপরাধে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.