প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য পারকি সমুদ্র সৈকত
জাহাঙ্গীর আলম:
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত পারকি সমদ্র সৈকত। আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নের পারকির সাগর চরে জেগে ওঠা বিশাল ঝাউবাগান নিয়ে এক অপরূপ প্রকৃতিতে গড়ে উঠেছে এ সমদ্র সৈকত। পারকি সমুদ্র সৈকত দেশের পর্যটক প্রেমীদের নিকট একটি প্রিয় স্থান। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য হিসেবে খ্যাত এই সমুদ্র সৈকত যেন এক দৃষ্টি নন্দন প্রকৃতি। সারিবদ্ধ হাজার হাজার ঝাউ গাছের সবুজ প্রকৃতিতে গড়ে উঠা এই সৈকত পর্যটকদের কাছে খুবই খ্রমণ প্রিয় জায়গা। সাগর ও প্রকৃতি প্রেমী হাজার হাজার পর্যটক এই সমুদ্র সৈকতের তিলোত্তমা রূপ দেখতে সৈকত এলাকায় ছুটে আসেন প্রতিনিয়ত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অধিকতর প্রচারের ব্যবস্থা না থাকলেও ইতোমধ্যে আপন মহিমায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আনোয়ারার এই সমুদ্র সৈকত।
প্রতিদিন দূর দুরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। আনোয়ারার সমুদ্র উপকুলে গড়ে উঠা এই সৈকতে গিয়ে দেখা যায় পারকির বিস্তীর্ণ বালু চরে প্রায় দশ হাজারেরও অধিক ঝাউ গাছের আদলে গড়ে উঠেছে পারকি সমুদ্র সৈকত। বিকেলের হেলে পড়া সূর্য্যরে আলোয় বালু চরের উপর শিশু কিশোরদের ছুটোছুটি এবং প্রিয়জনকে কাছে নিয়ে দূর দিগন্তে সুর্য অস্তের অপরূপ দৃশ্যে আত্মাহারা হয়ে উঠে পর্যটকরা। আপন মনে চেয়ে থাকা নব দম্পতিদের তৃপ্ত মুখই বলে দেয় এখানে এসে আনন্দের সীমা নেই। স্থানীয় পারকি গ্রামের আবদুল মতিন জানান, প্রতিদিনই এখানে ভ্রমনে আসেন অসংখ্য মানুষ। সিএনজি, মাইক্রো বা বাস যোগে আগত পর্যটকদের আগমনে কয়েক কিঃমি দৈর্ঘ্যরে এই সৈকত পযর্টকে মুখরিত থাকে সবসময়। তিনি আরও জানান, পারকি সৈকত নিয়ে দেশের পর্যটন সেক্টর ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ যদি একটু দৃষ্টি দেয় তাহলে অতি অল্প সময়ে দেশের অন্যতম আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট হিসেবে পরিণত হবে এই সমুদ্র সৈকত।
কোন রকম সুপরিকল্পিত ভাবে এই সমুদ্র সৈকত গড়ে না উঠলেও দিন দিন এই সৈকতে যেভাবে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে আনোয়ারা পারকি সমুদ্র সৈকতের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে বলেই পারকি সৈকত এলাকার বাসিন্দা অনুপ দত্ত। এখানে ভ্রমনে আসা এক পর্যটক রাঙ্গামাটির মো. গালাম জানান, রাঙ্গামাটির পাহাড় আর ঝুলন্ত ব্রীজের মতো আকর্ষনীয় পারকি সমুদ্র সৈকত।
একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরি করেন নাজমুল হাসান। ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থান ঘুরে এবার এসেছেন পারকি সমুদ্র সৈকতে। ভালোলাগার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানালেন, ঠিক কক্সবাজারের মত অতি দীর্ঘ না হলেও এখানেও রয়েছে সারি সারি ঝাউ গাছ আর বালু চর। একই ভাবে সূর্য্যাস্তের আবীর রঙের সমুদ্র এখান থেকেও দেখা যায়। তাই এখানে এসে তার ভালোই লাগছে। আর কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটার মত প্রচুর লোকের সমাগম এখনো না ঘটায় এই সৈকতের রূপের সাথে যোগ হয়েছে কিছুটা নিঃন্তব্দতাও। যা শহরের ব্যস্ত একঘেঁয়ে জীবনের অবসান ঘটিয়ে ভ্রমন পিপাসুদের দিতে পারে বাড়তি প্রশান্তি।
ঘুরতে আসা আরেক পর্যটক আসিফ বলেন, এখানে আসার রাস্তা উন্নত নয়, তাছাড়া এখনো ভালো দোকান পাট গড়ে না উঠায় থাকা বা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা অনেকটায় কম। যদি থাকত তাহলে তারা এখানে অন্তত একরাত কাটিয়ে যেতেন। অবকাঠামোগত এই দিকগুলো গড়ে তোলা হলে আরো বেশি পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে তিনি মনে করেন।
আনোয়ারায় পারকি সমুদ্র সৈকত ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় অবহেলায় পড়ে রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্য্যময় এই সমুদ্র সৈকতটি। একে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা একই সাথে পাহাড়, সমুদ্র, প্রাকৃতিক সহ সকল সুন্দর দর্শনীয় স্থান একসাথে দর্শনের সুযোগ পেয়ে প্রতিবছর আনোয়ারার লক্ষ লক্ষ ভ্রমনার্থীর আগম ঘটবে। আর তা হলে এ থেকে একদিকে সরকারও বার্ষিক কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে পারবে
বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ জানান, পারকি সৈকতের উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, সমুদ্র সৈকতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে এই সৈকতের মাধ্যমে সরকার ও আনোয়ারাবাসী অনেক লাভবান হবে।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গৌতম বাড়ৈ জানান, পারকি সমুদ্র সৈকতকে একটি পূর্নাঙ্গ পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারি পরিকল্পনা আছে। তাছাড়া সৈকতে পর্যটকদের আগমন ও অবস্থানের জন্য সরকার অনেক উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.