মোঃ নেজাম উদ্দিন,
প্রকৃতিকে ধ্বংস করে কোন স্থাপনা নয় । কক্সবাজারে ইট পাথর দিয়ে উন্নয়ন হবে না। প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়ন করতে হবে। তিনি লাল কাঁকড়া, কচ্ছপ, ডলফিন, সাগরলতা, গাছপালা, পাহাড় , ঝাউগাছ রক্ষা করতে হবে। নতুন করে ঝাউগাছ লাগাতে হবে। আমি ফোরকানকে ( লেফট্যানেন্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ) বলেছি যেখানে লাল কাকড়ার চলাচল সেখানে যেন ঘোরও করে রাখা হয়।প্রাকৃতিক কোন কিছু যেন ধ্বংস করা না হয়। সোনাদিয়া,সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রকৃতি রেখেই পর্যটন উন্নয়ন করতে হবে। কক্সবাজার পর্যটন খাতে সম্ভবনাময় জেলা । কক্সবাজারে বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হচ্ছে । সেই বিমানবন্দর হয়ে এক সময় লাখো পর্যটক সেখানে আসবে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মিেরন ড্রাইভ করে দেওয়া হয়েছে। আশা রাখছি এই মেরিন ড্রাইভ চট্রগ্রাম পর্যন্ত প্রসারিত করবো। বর্তমানে কক্সবাজারে সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র করা হয়েছে। আশা করছি দক্ষ জনবল নিয়ে সী একুরিয়াম করা হবে পর্যটকদের জন্য।পর্যটন খাতে যেমন গুরুত্ব বহন করে সেই সাথে কক্সবাজারের লবন খাতে সরকারের দৃষ্টি রয়েছে।দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদণ এলাকা কক্সবাজার যেখান থেকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করার সুযোগ রয়েছে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) ভবন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যকালে নিজের শৈশবের কথা তুলে ধওে বলেন, আমি বাবার সাথে বেশ কয়েকবার গিয়েছি। লাল কাকড়া ধরতে চাইতাম , কিন্তু কখনো পারিনি। তখন উখিয়াতে বেশ ঘন জঙ্গল ছিল । আমরা সেখানে একটি রেষ্ট হাউসেও ছিলাম। শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলেন, দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছেন তখনই জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে দেশের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করা হয়। আজ জাতির পিতার আদর্শের দল আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।
গত বুধবার (১৮ মে) সকাল ১১টার দিকে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে এই ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বহুতল এ ভবন করতে ব্যয় হয়েছে ১১০ কোটি ৭ লাখ টাকা। কক্সবাজারে বাহারছড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এরই মধ্যদিয়ে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিজ কার্যালয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ভবনটির পুরো কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, কক্সবাজারের অসহায় পরিবারের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে খুরুস্কুলে। সেখানে তাদের জন্য একটি আধুনিক শুটকী হাট করা হবে যেন তাদের উৎপাদিত শুটকী বিক্রি করতে পারে।
কউক চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ তার বক্তব্যে কউক ভবন করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
নির্মাণ তদারককারি প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, কউক চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) নিজস্ব অফিস ভবনের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ভূমি বরাদ্দ কমিটি এক দশমিক ২১ একর জমি বরাদ্দ দেন। একই বছর কউক’র বহুতল অফিস ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। একই বছর ভবনটি নির্মাণের জন্য একনেকে ১১২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তত্ববধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার দায়িত্বপান গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদপ্তর। ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০২০ সালে ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সময় বড়ানো হয়। একই সাথে আরো ২ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ে। ২০২১ সালে এসে শেষ হয়ে এ বছর ১৮ মে ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবার প্রাণন্তকর প্রচেষ্টায় ভবন নির্মাণে মোট প্রকল্প ব্যয় ১১৪ কোটি ৩৭ লাখ থেকে ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়। সাশ্রয় হওয়া টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের পর্যটন, সমুদ্র সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে ঘিরে সরকারের বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই পরিকল্পনার ভেতরে ২০১৬ সালে কক্সবাজারে যাত্রা শুরু করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন কউক চেয়ারম্যান লেফট্যানেন্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, একই মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার।
উপস্থিত ছিলেন কবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, জেলা প্রশাসক মো. মানুনুর রশীদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্র্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.