পেকুয়া ভূমি অফিসের কানুনগোর ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ

পেকুয়া প্রতিনিধি

কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসে বিগত ৬ বছর ধরে কর্মরত কানুনগো শান্তি জীবন চাকমার বিরুদ্ধে বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ ছাড়া কোন কাজই করেনা কানুনগো শান্তি জীবন চাকমা! পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিস কেন্দ্রীক কানুনগোর আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে একটি শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে পেকুয়ায় একই কর্মস্থলে বহাল তবিয়তে কর্মরত থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঘুষ বানিজ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কানুনগো শান্তি জীবন চাকমা! এ নিয়ে ইতিপূর্বে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে কানুনগোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেশ কয়েকজন সচেতন লোক লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।

এদিকে কানুনগো শান্তি জীবন চাকমা খতিয়ান সৃজনের জন্য মোটা অংকের ঘুষ দাবী করা এবং প্রতিনিয়ত সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে খতিয়ান সৃজন, করণিক ভুল এবং ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে মোটা অংকের ঘুষ হাতিয়ে নিয়ে জনসাধারণকে হয়রানী করায় তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দূর্নীতি দমন কমিশন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক এর দফতরে গতকাল ১৬ জানুয়ারী জনস্বার্থে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন পেকুয়া সদর ইউনিয়নের আদর্শ পাড়া গ্রামের রমিজ আহমদের পুত্র মোহাম্মদ আজমগীর। এছাড়াও ঘুষ দাবি ও খতিয়ান সৃজন না করে আটকে রাখায় আদালতে দূর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আজমগীর।

প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে দায়েরকৃত অভিযোগে মোহাম্মদ আজমগীর উল্লেখ করেছেন, তিনি দেশের একজন সচেতন নাগরিক। পক্ষান্তরে পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসে শান্তি জীবন চাকমা কানুনগো পদে কর্মরত থেকে প্রতিনিয়ত ভুমি সংক্রান্ত বিষয়ে ভূমি অফিসে আগত পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের লোকজনের কাছ থেকে খতিয়ান সৃজন, মিচ মামলা, করণিক ভুল ইত্যাদি কার্য্য সম্পাদন করতে নির্দিষ্ট অংকের ঘুষ গ্রহণ করেন। কানুনগো ঘুষ ছাড়া কোন ফাইল নাড়াছাড়াও করেন না। তাঁর ঘুষের বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে উল্টো হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করে।

অভিযোগ দায়েরকারী মোহাম্মদ আজমগীর বলেন, ‘আমার ছেলে আজিমুর রহমান সামির নামে জমি খরিদ করে নামজারী খতিয়ান সৃজনের জন্য ভুমি অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারি আমার ছেলের নামীয় খরিদা ভোগদখলীয় সম্পত্তি জিয়াউল করিম, পিতা- হাজী মৌং এমদাদুল হক, সাং- শিলখালী কর্তৃক নামজারী ও জমাভাগ মামলা নং- ২৯৭(১)/০৫-০৬ইং মূলে ১৬২১ নং খতিয়ান সৃজন করেছে।’ আমি উক্ত বিষয়ে অবগত হয়ে বর্ণিত নামজারী জমাভাগ মামলার বিরুদ্ধে পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসে একখানা লিখিত আপত্তি দাখিল করি। যাহার মিচ মামলা নং- ৭৭/২০২০ ইং। উক্ত মিচ মামলা পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিস থেকে তদন্তের জন্য পেকুয়া সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে তহশিলদার কর্তৃক সরেজমিনে তদন্তপূর্বক আমার অনুকূলে দখল পেয়ে পেকুয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিকট প্রতিবেদন দাখিল করেন। তিনি আরো বলেন, তহশিলদারের তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে পেকুয়া ভূমি অফিসের কানুনগো শান্তি জীবন চাকমা কর্তৃক গত ২৩/১১/২০২১ইং, গত ০৭/১২/২০২১ইং, গত ২১/১২/২০২১ইং তারিখ পর পর তিন বার শুনানীর দিন ধার্য্য করিয়া আমাকে নোটিশ প্রদান করেছেন। প্রতিবার আমি শুনানীকালে উপস্থিত হয়েছি। কিন্তু বার বার উক্ত মামলার বিবাদী তথা জিয়াউল করিম অনুপস্থিত থাকেন। সর্বশেষ শুনানীর দিন আমি পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগোর কার্যালয়ে উপস্থিত হলে কানুনগো শান্তি জীবন চাকমা খতিয়ান খোলার জন্য আমার নিকট থেকে তিন লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন। আমি একজন সামান্য মৎস্য ব্যবসায়ী এত টাকা কোথায় পাব কানুনগোকে বললে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হুংকার দিয়ে বলেন তার দাবিকৃত তিন লাখ টাকা ঘুষ না দিলে খতিয়ান সৃজন হবে না।

ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আজমগীর এ প্রতিবেদককে আরো বলেন,কানুনগো শান্তি জীবন চাকমা কর্তৃক দাবিকৃত মোটা অংকের ঘুষ দিতে না পারায় আমার ছেলের নামে খতিয়ান সৃজন করা সম্ভব হচ্ছেনা। সাম্প্রতিক সময়ে পেকুয়া মৌজার জমির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কানুনগো কর্তৃক দুর্লোভের বশবর্তী হয়ে খতিয়ান খোলার সময় আমার কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ দাবী করছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজার জনসাধারণের খতিয়ান সংক্রান্ত কোন কাজ ঘুষ ছাড়া কানুনগো অফিসে হয় না। যা প্রকাশ্যে ও গোপনীয়ভাবে সরেজমিনে দুদকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করলে সত্যতা পাওয়া যাবে। ঘুষখোর কানুনগোর কারণে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো শান্তি জীবন চাকমার সাথে যোগাযোগ করে বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.