পুলিশ বক্সে পিএস’র নেতৃত্বে নেতার হামলা!

ডেস্ক নিউজ:
হেফাজতের সমর্থনে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে গিয়ে চট্টগ্রামে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে ব্যাপক ‘ককটেলবাজি ও অগ্নিসংযোগের’ পর কাজীর দেউড়ির মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ‘হামলা’ চালিয়ে ভাঙচুর করে। এতে নেতৃত্ব দেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের পিএস মারুফুল হক চৌধুরী! পুলিশের মামলায় এমন বলা হলেও বিষয়টিকে হাস্যকর ও অবাস্তব বলছেন আইনজীবীরা। এসব রাজনৈতিক মামলায় সচারচর পদের ধারাক্রম অনুযায়ী আসামি করা হয়। এরকম ব্যক্তিগত কর্মচারীকে কখনও প্রধান আসামি করে শীর্ষ নেতাদের পরে আসামি করা হয় না।
পিএস মারুফের নেতৃত্বে এ হামলায় অংশগ্রহণ বাস্তবায়ন ও অর্থায়ন করেন তারই বস ডা. শাহাদাত ও নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর। এমনকি বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমও মারুফের নেতৃত্বে এ হামলায় অংশ নেন—এমনটাই উল্লেখ করে সিএমপির ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের সার্জেন্ট আমজাদ হোসেন শনিবার রাত ২টার দিকে কোতোয়ালী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয় ডা. শাহাদাতের পিএস মারুফুল হক চৌধুরীকে। তার পরে আসামি করা হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদ শামীমসহ চট্টগ্রাম বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের শীর্ষ ৪৩ নেতাকর্মীকে।

সার্জেন্ট আমজাদ হোসেনের দায়ের করা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৪৩, ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৮৬, ১৮৯, ৩০৭, ৩৩২, ৩৩৩, ৩৫৩ এবং বিস্ফোরক আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ এর ৩ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। হামলার পর কাজীর দেউড়ির পুলিশ বক্স থেকে ১৫টি ভাঙা ইটের টুকরো, ৪টি অবিস্ফোরিত ককটেল, কয়েকটি বিস্ফোরিত ককটেলের অংশ, ১০টি কাঠের লাটি ও কয়েকটি ভাঙা কাচের অংশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এ মামলায় সার্জেন্ট আমজাদ আসামিদের বিরুদ্ধে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ককটেল বিস্ফোরণ করে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করা, পুলিশকে হুমকি, পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করা, কর্তব্য পালনে বাধা দানের অভিযোগ আনেন। তারা শনিবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত পুলিশ বক্স ও আশপাশে হামলার ঘটনা ঘটান বলে অভিযোগ আনেন। শাহাদাতের পিএস মারুফকে এক নম্বর আসামি করে করা এ মামলায় এজহার নামীয় আসামি করা হয় ৪৩ জনকে। অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে। সেই মামলায় মারুফই এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি।

বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দদের এড়িয়ে পিএস মারুফকে প্রধান আসামি করায় মামলাটি হাস্যরসে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম চট্টগ্রামের প্রচার সম্পাদক রেজাউল করিম রনি সিভয়েসকে বলেন, ‘প্রথমত মারুফকে অনস্পট আটক করা হয়নি। তিনিই যে হামলার মূলে তার কোনও ভিডিও ফুটেজ বা ছবিও নেই। এসব রাজনৈতিক মামলাগুলোতে সাধারণত দলীয় পদ অনুযায়ী আসামির সিরিয়াল দেয় পুলিশ। কিন্তু ডা. শাহাদাত হোসেনকে দুই নম্বর আসামি করে তার পিএসকেই এক নম্বর আসামি করার বিষয়টি হাস্যকর। এমনিতে এসব মামলার তেমন কোনও মেরিট থাকে না, এটাও সেই ধরনের সাজানো আরেকটি মামলা। তাই পুলিশ যা মন চায় তাই করছে।’

বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বাদ দিয়ে পিএস মারুফকে কেন প্রধান আসামি করা হলো—সে বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি মামলার বাদি সার্জেন্ট আমজাদ হোসেন। তবে কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দীন বলেন, ‘ওই মামলায় মারুফ গ্রেপ্তার বলে তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। পার্টি অফিস থেকে যে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের সেই মামলায় আসামি করা হয়নি। চকবাজার থানার চাঁদাবাজির মামলায় শাহাদাত হোসেন গ্রেপ্তার হলেও তাকে আমরা কোতোয়ালীর দুই মামলাও গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করব।’

এর আগে মোদিবিরোধী বিক্ষোভে হেফাজত-পুলিশ সংঘর্ষের প্রতিবাদে সোমবার(২৯ মার্চ) দুপুর তিনটা থেকে বিএনপির কর্মসূচি পালন করতে এসে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল নগর বিএনপি। এসময় ককটেলবাজি, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি পুলিশের ওপরও হামলার অভিযোগ রয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তাদের এই হামলা থেকে বাদ যায়নি পুলিশ বক্স, পুলিশের নিরাপত্তার কাজে ব্যবহৃত ঢাল ও স্বয়ং পুলিশ সদস্যরাও—এমন দাবি পুলিশের। যদিও হামলার পর নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাতসহ ১৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ওইদিন গভীর রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় দু’টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। একটি কোতোয়ালী থানা পুলিশের পক্ষ থেকে অন্যটি ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে। প্রত্যেক মামলাতেই নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও নগর কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, নগর যুবদলের সভাপতি-সেক্রেটারি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি-সেক্রেটারি, ছাত্রদলের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ নগর বিএনপির শীর্ষ ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে ট্রাফিকের পুলিশ বক্সে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় নাসিমন ভবন থেকে গ্রেপ্তার ১৫ জনকে আসামি করা হয়নি। সেই মামলায় ৪৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়।

অন্যদিকে সোমবার বিকেলে নগর বিএনপির মহিলা বিষয়ক সহ-সম্পাদক ডা. লুসি খান সিটি নির্বাচনের সময় কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছেন দাবি করে নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনসহ তিন জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছিলেন চকবাজার থানায়। সেই মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন ডা. শাহাদাত। তাকে কোতোয়ালীর দুই মামলাও গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) বিকেল ৫টার দিকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের আদালতে শুনানি শেষে গ্রেপ্তার ১৮ আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। এরমধ্যে শাহাদাত হোসেন চকবাজার থানায় চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার আছেন।

সিএমপির সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী সাহাব উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘চকবাজার থানার চাঁদাবাজির মামলায় ডা. শাহাদাতের বিরুদ্ধে দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। অন্যদিকে কোতোয়ালী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা দুই মামলায় গ্রেপ্তার অন্যদের বিরুদ্ধে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত শুনানি শেষে প্রত্যেককে কারাগারে পাঠিয়ে আগামীকাল রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন।’ -সিভয়েস

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.