পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড হাইকোর্টে বহাল

ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ  পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় নিম্ন আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৩৯ জনের রায় বহাল রেখেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ৪ জনকে বেকসুর খালাস ও ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেইসাথে বিডিআরের ২৫৬ জনের বিরুদ্ধে দেয়া বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

এর মধ্যে ১৬০ জনের যাবজ্জীবনদণ্ডপ্রাপ্তদের ১৪৮ জনের রায় বহাল রাখা হয়েছে। খালাস দেয়া হয়েছে ১২ জনকে। ১৮২ জন আসামির আপিল খারিজ করে ১০ বছরের সাজা বহাল রেখেছেন।

সোমবার বেলা সোয়া ৩টার পর থেকে হাইকোর্ট এ রায় ঘোষণা শুরু করেন।

বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ এই রায় দেন।

এর আগে সকাল ১০টার পর থেকে হাইকোর্ট দ্বিতীয় দিনের মতো রায় পড়া শুরু করেন। বিরতির পর দুপুর ২টা ৩৬ মিনিটে আবারও রায় পড়া শুরু হয়। যা শেষ হয় বিকেল পৌনে ৫টার দিকে।

আদালত সূত্র বলছে, জজ আদালতে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৫২ জনের মধ্যে আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং চারজনকে হাই কোর্ট খালাস দিয়েছে। সর্বোচ্চ সাজার আদেশের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে।

জজ আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে; আর হাই কোর্টে খালাস পেয়েছেন ১২ জন।

জজ আদালতে খালাস পাওয়া যে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছিল, তাদের মধ্যে ৩১ জনকে হাই কোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।

এছাড়া চারজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড এবং ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রাখা হয়েছে।

এ মামলার সাড়ে আটশ আসামির মধ্যে আরও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিল জজ আদালত। তাদের মধ্যে ১৮২ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, আট জনকে সাত বছরের কারাদণ্ড, চারজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে হাই কোর্ট। খালাস পেযেছেন ২৯ জন।

বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই রায় ঘোষণা করে। হাইকোর্টের বিশেষ এই বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

আসামির সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য ২০১৫ সালে এই বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে নাম বিজিবি) সদরদপ্তরে রক্তাক্ত বিদ্রোহের এই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান।

বিডিআর জওয়ানদের ওই রক্তাক্ত বিদ্রোহের পর ৫৭টি বিদ্রোহের মামলার বিচার হয় বাহিনীর নিজস্ব আদালতে। আর হত্যাকাণ্ডের বিচার চলে বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত মহানগর দায়রা জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে।

ঢাকার জজ আদালত ২০১৩ সালে এ মামলার রায়ে ৮৫০ আসামির মধ্যে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এছাড়া ২৫৬ আসামিকে তিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা কার্যকরের অনুমতি (ডেথ রেফারেন্স) ও আপিল এরপর আসে হাইকোর্টে। শুনানি শেষ হওয়ার সাত মাস পর হাই কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ রোববার রায় দেয়া শুরু করে। যা আজ শেষ হলো।

তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে আসামি পক্ষ।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.