পাহাড়ে যাবেন, জানুন ‘পাড়া-কাহন’
ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ পাসিং পাড়া: বান্দরবানের কেওক্রাডাংয়ের খুব কাছের জনবসতি পাসিং পাড়াকে বিবেচনা করা হয় দেশের সবচেয় উঁচু গ্রাম হিসেবে। রুমা উপেজলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে কেওক্রাডাং পাহাড়। যাত্রা পথ অত্যন্ত দুর্গম ও কষ্টসাধ্য। এই কষ্ট সহ্য করতে পালেই পাসিং পাড়ায় পৌঁছাতে পারবেন।
বাংলাদেশের অন্য কোথাও এত উঁচুতে কোন জনবসতি নেই। তবে দুর্গম এ পাহাড়ি এলাকার দৃশ্য খুব মনোরম। একবার পৌঁছে যেতে পারলেই মেঘের উপর আপনি ভাসবেন। পাসিং পাড়ায় মেঘের এত ভিড় যে আপনার পাশের জনকে খুঁজে পেতেই কষ্ট হয়ে যাবে। কারণ কেওক্রাডাং এর প্রায় ৩০৬৫ফুট উচ্চতায় এই পাসিং পাড়া যেন মেঘের রাজ্যে একটি গ্রাম।
এখানকার জনবসতি বলতে গুটি কয়েক বাঁশের ঘর। প্রায় সারা বছর মেঘের ভিতরেই থাকে এই পাসিং পাড়ার লোকজন। পাসিং পাড়া থেকে নিচের দিকে নেমে গেলেই জাদিপাই পাড়া। এখান থেকে ঘণ্টা খানেক নিচের দিকে নামলেই দেখা মিলবে জাদিপাই জলপ্রপাত। অপরূপ প্রকৃতিতে ভরপুর এই পাসিং পাড়া। আশেপাশের সমস্ত চরাচর যেন একটি মেঘের সমুদ্র।
দার্জিলিং পাড়া: কেওকারাডাং পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত আমাদের বাংলার দার্জিলিং বা দার্জিলিং পাড়া। সমুদ্র সমতল হতে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের গড় উচ্চতা হল ৬৬৮৬ ফুট। আর আমাদের দার্জিলিং এর উচ্চতা কম বেশি ২৮০০ ফুট। উচ্চতায় কম বেশি যাই হোক না কেন সৌন্দর্য্য এখানে অফুরান। আর এখানকার পাহাড়ে ঘেরা সবুজ বনানী, পাখির কোলাহল আর কেওকারাডাং এর চূড়া ছুয়ে আসা মৃদুমন্দ বায়ু আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে। আর বাসিন্দাদের মাচার উপর সুন্দর করে তৈরী করা বাড়ি, কিচির মিচির শব্দের কথা বার্তা ও পরিশ্রমী মুখগুলোর আতিথেয়তায় আপনি মুগ্ধ হয়ে পারবেন না। দার্জিলিং পাড়ায় জনবসতি খুবই কম। মাত্র ৩০টি পরিবার বসবাস করে।
রুমানা পাড়া: রুমানা পাড়া, একটা বম পাড়া। আগে নাম ছিল সানকুপ পাড়া, সেটা ছিল ‘সানকুপ’ নামক কারবারির নামে। রুমা খালের শেষে পাড়াটার অবস্থান বলে এর নাম রুমানা পাড়া হয়েছে পরে। অন্যান্য বম পাড়ার মতোই রুমানা পাড়াও যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। পাড়া-প্রধানকে বলা হয় ‘কারবারি’। পাড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও আছে একটা গির্জা। বমরা পিতৃতান্ত্রিক এবং মেয়ে বিয়ে দেয়ার সময় স্বর্ণালঙ্কার এবং গৃহস্থালি অনেক কিছু দিয়ে বিয়ে দিতে হয়। এটা যৌতুক-প্রথার মতো হলেও ঠিক যৌতুক হিসেবে গণ্য হয় না, প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাড়ার ঘরগুলো বাঁশের তৈরি, চাল দেয়া শন বা খড় দিয়ে। জানালাগুলো থাই-জানালার মতো স্লাইডিং, তবে স্লাইডিং প্যানেলটা তৈরি হয় বাঁশ দিয়ে, এবং বেশ সাবলীল। রুমানা পাড়ার লোকজন বাজার করতে যায় রুমা বাজারে, সেটা মোটামুটি দুই দিনের কাজ। একদিন লাগে গিয়ে বাজার করতে, সেখানে একরাত থাকে, তার পরদিন বাজার নিয়ে ফিরে আসে তারা। কারবারিরা বংশপরম্পরায় কারবারি হয়ে থাকেন। তাঁরা সরকার থেকে রেশন পান, এবং সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারে করে সেই রেশন পাড়ায় পৌঁছে দেয়।
এনেঙ পাড়া কেউ কেউ বলেন এনঙ পাড়া। এটা একটা ত্রিপুরা পাড়া। এই পাড়াটার অবস্থান ভৌগোলিকভাবে বেশ আকর্ষণীয়, কারণ চারদিকে উঁচু উঁচু পাহাড় দিয়ে ঘেরা এমন পাড়া আর সচরাচর নাকি দেখা যায় না।
এছাড়া সংসং পাড়া, জাদিপাই পাড়া, মোল্লাই পাড়া, সইরাটং পাড়া, সাইকত পাড়া, পায়দল জিন্না পাড়ার, ঔলাওয়া পাড়ায়, ঙুইখয় পাড়া, ফাদাপ পাড়া, হ্যাংম্যান পাড়া, পাংখু পাড়া, কাইন্দং পাড়া, রুনাজন পাড়া, চিমবুরু পাড়া, ঠান্ডা ঝিড়ি পাড়া, নাইতং পাড়া, মিনঝিড়ি পাড়া, বেথেল পাড়া, আমতুলী পাড়া, সামাখাল পাড়া, ক্যাইতাই পাড়া, ছাংদলা পাড়া, ডটং পাড়া, বলিপাড়া, ঔলাওয়া পাড়া ছাড়াও পুরো বান্দরবান জুড়ে রয়েছে প্রায় ১১০০ পাড়া।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.