পাঁজরের হাড় দিয়ে নারী সৃষ্টি প্রসঙ্গে
ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ স্বামীর পাঁজরের হাড় দিয়ে স্ত্রীকে সৃষ্টি করার বিষয়ে অনেকে জানতে চান। এ সংক্রান্ত তর্ক-বিতর্কে অংশ নেন। আসুন, জেনে নেই এ বিষয়ে ইসলাম কী বলে?
সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘নারীকে পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। সে তোমার জন্য কখনোই সোজা হবে না। তার দ্বারা কাজ আদায় করতে হলে এই বাঁকা অবস্থায়ই আদায় করতে হবে। এটি সোজা করতে গেলে ভেঙে যাবে। ভাঙার অর্থ হলো- তালাক ঘটে যাওয়া।’ -সহিহ মুসলিম: ১৪৬৮
হাদিসে নারীদের পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টির কথা এসেছে। কিন্তু কার পাঁজরের হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে- তা হাদিসে বর্ণিত হয়নি।
সুতরাং না বুঝার কারণে অনেকে মনে করেন, স্বামীর পাঁজরের হাড় দিয়ে স্ত্রীকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ কথাটি সম্পূর্ণ গলদ, এর কোনো ভিত্তি নেই। হ্যাঁ, হজরত হাওয়া আলাইহিস সালামকে হজরত আদম আলাইহিস সালামের পাঁজরের হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ কথা সত্য। কিন্তু এর মানে সব স্ত্রীলোককে তার স্বামীর পাঁজরের হাড় দিয়ে সৃষ্টি করার দাবি অযৌক্তিক ও বানোয়াট।
একেতো এর পক্ষে কোনো দলিল-প্রমাণ নেই। দ্বিতীয়ত এটি যুক্তিহীন কথা। কারণ, যে সব মেয়ে বাচ্চা শিশুকালে মারা গেছে, কিংবা বিয়ে ছাড়াই মারা গেছে, তাদের কার হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে? তাদেরতো স্বামীই ছিলো না দুনিয়ায়। সুতরাং স্বামীর পাজরের হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে স্ত্রীদের এ দাবিটিই ভুল।
তাহলে হাদিসের ব্যাখ্যা কী?
হাদিসে যে পাঁজরের হাড় দিয়ে সৃষ্টির যে কথা বলা হয়েছে, এর দ্বারা দু’টি উদ্দেশ্য হতে পারে। যথা-
১. এটি কেবল একটি উপমা। সত্যিই পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি হওয়া উদ্দেশ্য নয়। নারীদের একটি সৌন্দর্য হলো- তারা সাধারণত একটু কথায় আচরণে বাঁকা স্বভাবের হয়। এটি সর্বক্ষেত্রে তাদের দোষ নয়, অনেক ক্ষেত্রেই সৌন্দর্য।
২. নারীরা হজরত আদম আলাইহিস সালামের পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি। স্বামীর পাঁজরের হাড় দ্বারা নয়। -তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম: ১/১৩৭-১৩৮
ইসলামি স্কলারদের মতে, বর্ণিত হাদিসগুলোতে নারীদের প্রকৃতির কথা আলোচনা করা হয়েছে। পাঁজরের হাড়ের গঠন বাঁকা ও অসমান প্রকৃতির। নারী জাতির চিন্তা ভাবনা পুরুষদের মতো নয় বরং কিছুটা ভিন্ন ধরণের। কাজেই তাদের সঙ্গে মতপার্থক্য হতে পারে, তাদের বৈশিষ্ট্যই এমন। নারীরা নরম প্রকৃতির, তারা অত্যন্ত আবেগপ্রবণ, কখনও অনেক কষ্ট পায়, আবার কখনও অনেক রাগ করে। তাই স্বামীদের উচিত নয়, স্ত্রীর নিকট থেকে সবকিছু নিঁখুত আশা করা। বরং উচিত হলো- তাদের ভুল ও সীমাবদ্ধতাগুলোকে না ধরা। তাদের সঙ্গে ভালো ও সহনশীল আচরণ করা। এটাই হাদিসের শিক্ষা।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.