পর্যটনের নতুন সম্ভবনা দ্বার খুলে দিয়েছে মেরিন ড্রাইভ
মোঃ নোমান, রামু
পশ্চিমে নীল সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউ , অন্যপাশে সুউচ্ছ পাহাড়, পাহাড়ে বুক ছিড়ে গড়িয়ে পড়া ঝর্ণা, লাল কাঁকড়াদের হুড়োহুড়ি, সাগরের পাশাপাশি বড়, ছোট খালে জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য, সবুজ গ্রামের চিত্র পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলছে ১২০ কিলোমিটারের মেরিন ড্রাইভ সড়ককে। জেলা শহরের কলাতলী হয়ে খোলা জিপ, মাইক্রোবাস বা অটোরিকশায় মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ হয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া যাবে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় বা টমটমে করে যাত্রাকালে মেরিন ড্রাইভের পূর্ণ সৌন্দর্য দর্শন করা যায়। আর যেতে যেতেই দেখা যাবে বিশাল বিশাল সুপারি বাগান, প্রাকৃতিক পাহাড়, দৃষ্টিনন্দন সারি সারি ঝাউবাগান, বিদেশী চিংড়ি উৎপাদনকারী হ্যাচারী, ঝর্ণার চোখ জুড়ানো দৃশ্য। শোনা যাবে সাগরের পানির গর্জন আর পাহাড়ের পাখির সুরেলা সুর। সব মিলিয়ে প্রকৃতিটা দারুণ উপভোগ্য। মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রথমেই পিকনিক স্পট দরিয়ানগর। দুরদুরান্ত থেকে আগত পর্যটক এবং স্থানীয়রা ছুটে আসে দরিয়ানগরে। অন্যতম শুটিং স্পটে পরিণত হওয়াটা পর্যটকদের জন্য উপরি পাওনা। দরিয়ানগর থেকে হিমছড়ি যাত্রাপথে চোখে পড়বে পাহাড়ে বুক ছিড়ে গড়িয়ে পড়া ঝর্ণার অপরুপ দৃশ্য । মেরিন ড্রাইভের পাশে দাঁড়ানো ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড় সহজে মন কাড়ে পর্যটকদের। হিমছড়ি হয়ে ইনানী যাত্রাপথে বিশাল বিশাল সুপারি বাগান, প্রাকৃতিক পাহাড়, দৃষ্টিনন্দন সারি সারি ঝাউবাগান, রেজুর মোহনায় নদী আর সাগরের মিলন সহ নানান দৃশ্য। এছাড়াও ইনানী বিচের অদুরেই পাটুয়ারটেক সী-বীচ।
পাটুয়ারটেক সী-বিচের একটু পূর্বে পাহাড়ের নিচে রহস্যময়ী কানা রাজার গুহা। কানা রাজার গুহার পাশেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক ফইল্লা চাকমার মাচাং ঘর। ইনানী ও মনখালি পার হতে দক্ষিণে জাহাজপুরা নামকস্থানে টেকনাফ গর্জন ফরেস্ট নামে খ্যাত চির সবুজ এই বন পর্যটকদের খুবই আকর্ষণ করে। ইনানী তে আসা কয়েকজন পর্যটক মুখরিত হয়ে বলেন, কক্সবাজারের মনোরম পরিবেশ দেখে খুব ভালই লেগেছে। এইখানে এসে উপভোগ করলাম সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। পাথরের উপর ছোটাছুটির স্মৃতি ক্যামেরাবন্দি করা। এই যেন নিজ দেশেই ক্যারিবিয়ান দ্বীপ। অন্যদিকে মেরিন ড্রাইভ রোড কক্সবাজারের পর্যটনকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক দম্পতি কাসেম চৌধুরী এবং নাহার চৌধুরী মুগ্ধতার সুরে তারা বলেন, ইনানী বীচের সৌন্দর্য সম্পর্কে এতোদিন শুনলেও আজ নিজেরা এসে মুগ্ধ আর মোহিত হলাম। স্থানীয় কক্সবাজার সদর থেকে মেরিনড্রাইভ ভ্রমণে আসা সাহেদ আরা রানা বলেন, কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ যাওয়ার পথে অনন্যসুন্দর নৈসর্গিক দৃশ্য মুছে দেয় নগর জীবনে চাপে থাকা সব দুঃখ-বেদনা। মেরিন ড্রাইভ রোড স্থানীয়দের কাছে ও পর্যটনের অন্যতম স্থান হয়ে উঠছে। সুত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুনে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ কাজ শেষ হবে। রাস্তার শোভা বর্ধনের জন্য প্রায় আড়াই লাখ ঝাউ গাছ রোপন করা হয়েছে। এছাড়া কৃঞ্চচূড়া, সোনালু, ফলানু, মিনঝিরি, বকুলসহ বিভিন্ন জাতের ফুলের চারা রোপনের কাজ চলছে। স্থানীয় জালিয়াপালং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী জানান, মেরিন ড্রাইভ সড়ক উপকুলের মানুষের জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। পর্যটন খাতের আওতায় পড়ায় উপকুলের পরিবার গুলো স্বচ্ছল হয়ে উঠেছে । বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে মেরিন ড্রাইভ পর্যটন খাত। উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি কবি আদিল চৌধুরী বলেন, মেরিন ড্রাইভ বিশ্ব পর্যটনে কক্সবাজারকে ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরবে। মেরিন ড্রাইভের পাশেই আন্তর্জাতিক মানের হোটেল সহ পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠায় দেশি-বিদেশী পর্যটকরা সহজেই কক্সবাজার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া মেরিন ড্রাইভের বদৌলতে ব্যবসায়ীরা পর্যটন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.