ডেস্ক নিউজ:
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ১২ বছরের যাত্রার অবসান ঘটাতে সরকার গঠনের চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন রাজনৈতিক বিরোধীরা। সামনের সপ্তাহে পার্লামেন্টে এই জোট অনুমোদন পেলে ইসরায়েলে নেতানিয়াহু যুগের অবসান ঘটবে। চুক্তি অনুযায়ী তার জায়গায় প্রধানমন্ত্রী হবেন ৪৯ বছর বয়সী ধনকুবের প্রযুক্তি ব্যবসায়ী নাফতালি বেন্নেত। ডানপন্থী এই রাজনীতিবিদ তার চেয়ে ভিন্ন দর্শনের দলের সঙ্গে জোট গড়ে ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।
বেন্নেত যে কারণে পরিচিত
ডানপন্থী দল ইয়ামিনা পার্টির প্রধান নাফতালি বেন্নেত। এই দলটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী আর পশ্চিম তীরের বড় অংশে বসতি সম্প্রসারণ করতে চায়। এলাকাটি ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকেই ইসরায়েলের দখলে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, নেতানিয়াহু কেবল তখনই বসতি সম্প্রসারণ শুরু করেন যখন ভোট পাওয়া কৌশল হিসেবে সেই আইডিয়া তৈরি করেন বেন্নেত। ইরান বিষয়েও বেন্নেতের অবস্থান কঠোর।
তবে নতুন সরকার তৈরি হতে যাচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের একাধিক দল নিয়ে। এই দলগুলো মূলত নেতানিয়াহুকে সরাতে জোটবদ্ধ হয়েছে। ফলে আশা করা হচ্ছে এই সরকার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের মতো বিতর্কিত বিষয়গুলো পাশে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করে, করোনাভাইরাস মহামারির পর অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার ওপরেই বেশি মনোযোগ দেবে।
ছোট দলের নেতা হয়েও যেভাবে প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বেন্নেত
২০১৯ সালের এপ্রিলের পর থেকে এখন পর্যন্ত চার দফা ইসরায়েলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এর কোনওটিতেই একটি ভারসাম্যপূর্ণ সরকার গঠন করা যায়নি। সর্বশেষ গত মার্চে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইয়ামিনা পার্টি ১২০ আসনের পার্লামেন্টে মাত্র সাতটি আসনে জয় পেয়েছে। তবে আসনগুলো ১৩টি দলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায় সাতটি আসন পেয়েও কিংমেকার হয়ে উঠতে পেরেছেন বেন্নেত। নতুন সরকারে প্রথম দুই বছর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন বেন্নেত। তারপরে এই দায়িত্ব পাবেন আরেক বিরোধী রাজনীতিক ইয়ার লাপিদ। জোট গঠনের চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের আগস্টে লাপিদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন বেন্নেত।
বেন্নেতের ইতিহাস
নাফতালি বেন্নেত জন্মগত ইসরায়েলি নাগরিক। আমেরিকান অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান তিনি। সামরিক বাহিনীর একটি এলিট কমান্ডে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এছাড়া প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি পেমেন্ট নিরাপত্তা বিষয়ক কোম্পানি সিয়োটা ইনকর্পোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এই কোম্পানিটি ১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারে আরএসএ সিকিউরিটি কোম্পানির কাছে বিক্রি হয়ে যায়। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব পালন করেন নাফতালি বেন্নেত। তার সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর বেন্নেত ইহুদি সেটেলার কাউন্সিলে যোগ দেন। ২০১২ সালে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান হিসেবে তিনি রাজনীতিতে নামেন। এরপরে তিনি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী এবং অল্প সময়ের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
ধর্মীয় কিছু ইস্যুতে খানিকটা মডারেট বলে ইসরায়েলে পরিচিত বেন্নেত। তিনি বহুত্বাদী উপাসনার প্রচারক আবার সমকামী অধিকারের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল।
নিজের বক্তব্যে বেন্নেত
বেন্নেত এক সময় বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।’ আবার বিশ্বশক্তিদের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরকে তিনি ‘চরম বিপর্যয়’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.