ডেস্ক নিউজ: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক যুগের শাসনের অবসান হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহু হুঁশিয়ার করে বলেছেন, প্রস্তাবিত নতুন জোট সরকার দেশটির ‘নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক’ হতে পারে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
উগ্র-জাতীয়তাবাদী নেতা নাফতালি বেনেট মধ্যপন্থি ইয়াইর লাপিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন এমন ঘোষণার পর নেতানিয়াহু ডানপন্থি রাজনীতিবিদদের আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা যাতে কোনো ধরনের চুক্তিতে সমর্থন না দেন।
নতুন জোট সরকার গঠনের জন্য বুধবার পর্যন্ত সময় হাতে পাবেন লাপিদ। তিনি সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে, তা হবে দেশটির সবচেয়ে বেশি দিন প্রধানমন্ত্রী থাকা নেতানিয়াহুর ক্ষমতার অবসান।
নেতানিয়াহু দুর্নীতির মামলায় বিচারাধীন। গত মার্চে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে চূড়ান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হন তিনি। গত দুই বছরে দেশটিতে চতুর্থবারের ওই নির্বাচনে জোট গঠনে মিত্র পেতে ব্যর্থ হন নেতানিয়াহু। গতকাল রোববার তিনি বলেন, ‘বামপন্থি কোনো সরকার গঠন করবেন না। এ ধরনের সরকার ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক হবে।’ তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
একাত্তর বছর বয়সী নেতানিয়াহু ১২ বছর ধরে দেশটির শাসন ক্ষমতায় রয়েছেন। একটি প্রজন্ম ধরে তিনি ইসরায়েলি রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন।
নেতানিয়াহু বেনেটের বিরুদ্ধে ‘জনগণকে ভুল পথে চালিত করা’ এবং ‘শতাব্দীর সবচেয়ে বড় জালিয়াতি’ করার অভিযোগ এনেছেন।
এর আগে এক টেলিভিশন ভাষণে ৪৯ বছর বয়সী বেনেট ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, জোট গঠন করতে তাঁর দল আলোচনায় অংশ নেবে।
‘নেতানিয়াহু কোন ডানপন্থি দল গঠন করার চেষ্টা করছেন না, কারণ তিনি ভালোভাবেই জানেন যে, তা সম্ভব নয়। তিনি পুরো জাতি, পুরো দেশ তাঁর নিজের ব্যক্তিগত অবস্থান পোক্ত করার জন্য পেতে চাইছেন’, বলেন বেনেট।
‘আমার বন্ধু ইয়াইর লাপিদের সঙ্গে একটি জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সরকার গঠনের জন্য সবকিছু করব’, যোগ করেন বেনেট।
এই ঘোষণার আগে ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো তাদের প্রতিবেদনে বলেছিল, জোটের শর্ত অনুযায়ী, বেনেট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতানিয়াহুর জায়গা নেবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর ৫৭ বছর বয়সী লাপিদকে সে জায়গা ছেড়ে দেবেন। তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কোনো চুক্তি করা হয়নি।
প্রস্তাবিত জোট সরকারে ইসরায়েলি রাজনীতির ডান, বাম ও মধ্যপন্থি—সবারই সন্নিবেশ ঘটবে। এই দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতৈক্য না থাকলেও তারা নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে একমত।
নেতানিয়াহু জোট সরকার গঠনে ব্যর্থ হওয়ার পর লাপিদকে, যিনি সাবেক একজন অর্থমন্ত্রী, ২ জুন পর্যন্ত নতুন সরকার গঠনের সময় দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচনে তাঁর ইয়েশ আতিদ পার্টি দ্বিতীয় অবস্থানে আসে। প্রথম অবস্থানে ছিল নেতানিয়াহুর ডানপন্থি দল লিকুদ পার্টি।
ইসরায়েলের ১২০ আসনের পার্লামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি আসন পেয়েছে বেনেটের দল, যা প্রস্তাবিত বিরোধী জোট গঠনে নিশ্চিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিতে সক্ষম।
গত শনিবার রাতে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি বেনেট এবং আরও একটি সম্ভাব্য জোট দলের নেতাকে জোট গঠনের প্রস্তাব দেয়। যাতে করে পালাক্রমে তিনজনই প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। তবে নেতানিয়াহুর সে প্রস্তাব গ্রহণ করেননি নেতারা। গতকাল রোববারও একই প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি।
ইসরায়েলের নির্বাচন পদ্ধতি অনুযায়ী, সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার শর্ত থাকায় কোনো একটি দলের পক্ষে এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন লাভ করা সম্ভব নয়। জোট সরকার গঠনের জন্য ছোট ছোট দলগুলোকেও দরকার হয়।
লাপিদকে প্রাথমিকভাবে সরকার গঠনের জন্য ২৮ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ১১ দিন ধরে গাজা সহিংসতার কারণে এই সময় কমে এসেছে।
সহিংসতার কারণে দলটির সম্ভাব্য জোট সহযোগী আরব ইসলামিস্ট রা’ম পার্টি নিজেদের পিছিয়ে নিয়েছে। ইসরায়েলের শহরগুলোতেও মিশ্র আরব ও ইহুদি বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষেরও খবর মিলেছে।
তাই বলা যায়, গাজায় হামলা করে ফায়দা হলো না বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর। ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার সব পথই কার্যত রুদ্ধ হয়ে গেলো এই ইসরায়েলি শাসকের।
গত মার্চে ইসরায়েলের নির্বাচনের পর লিকুদ পার্টির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বিরোধী দল ইয়েস আতিদ পার্টির নেতা ইয়াইর লাপিদকে নতুন সরকার গঠনে সময় বেঁধে দেন ২৮ দিন। কিন্তু, ক্ষমতা ছাড়ার সময় ঘনিয়ে এলে গাজায় বাধিয়ে দেন যুদ্ধ। গত ১০ মে থেকে ২১ মে পর্যন্ত যুদ্ধ চালান।
যুদ্ধবিরতি পরপরই ইসরায়েলের বিরোধী দল ইয়েস আতিদ পার্টির সঙ্গে ইয়ামিনা পার্টি একাট্টা হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর একযুগের ক্ষমতার অবসান ঘটাতে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নিয়েছে। আগামী বুধবার ১২০ আসনের ইসরায়েলি পার্লামেন্টে আস্থা ভোট করারও ঘোষণা দিয়েছে তারা।
জেরুজালেম পোস্ট বলছে, ইসরায়েলের বিরোধী দলগুলো যে চুক্তিতে সম্মত হয়েছে তাতে আগামী দুই বছরের জন্য ইয়ামিনা পার্টির প্রধান নাফতালি বেনেট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।
মেয়াদের বাকি দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন ইয়েস আতিদ পার্টির নেতা ইয়াইর লাপিদ।
ইসরায়েলের ইয়ামিনা পার্টির নেতা নাফতালি বেনেট বলেন, ‘নেতানিয়াহু চেষ্টা করেও আর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। ইসরায়েলকে নেতানিয়াহু এক ব্যক্তির রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আজ আমি ঘোষণা করছি, বন্ধু ইয়াইর লাপিদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছি।’
জোট সরকার ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন নেতানিয়াহু। জোট সরকার নিয়ে তিনি সতর্কবার্তাও দিয়েছেন।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘প্রস্তাবিত এই জোট সরকার বামপন্থিদের সরকার হবে। এ ধরনের সরকার ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে। এ ছাড়া এমন সরকার ইসরাইলের ভবিষ্যতকেও বিপদের মধ্যে ফেলবে।’
এদিকে, নতুন জোট সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই গাজার যুদ্ধবিরতি স্থায়ী করতে ইসরায়েল ও মিসরের প্রতিনিধিরা কায়রো ও তেল আবিবে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.