নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি: ৭০ এমপির কপালে জুটছে না নৌকার টিকিট।
ওয়ান নিউজঃ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং ভোটে পাস করে আসতে পারবেন অন্তত একশ’ আসনে এমন এমপি
প্রার্থী খুঁজছে আওয়ামী লীগ। দশম সংসদে নৌকা প্রতীকে এমপি হয়েছেন ২৩৪ জন। দুই এমপির মৃত্যুতে গাইবান্ধা-১ ও সুনামগঞ্জ-২-এ দুটি আসন ফাঁকা রয়েছে।
আগামী নির্বাচনে বর্তমান সংসদের বিতর্কিত, দলীয় নেতাকর্মীদের পাশ কাটিয়ে চলেন, জনবিচ্ছিন্ন এমন প্রায় ৭০ এমপির কপালে নৌকার টিকিট জুটছে না। বিতর্কের মধ্যে না থেকেও কিছু এমপি মনোনয়ন পাবেন না- কারণ তাদের চেয়ে অনেক প্রতিশ্রুতিশীল প্রার্থীর সন্ধান রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
আবার বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত; কিন্তু ভোটে পাস করে আসার সমূহ সম্ভাবনা থাকায় অনেক বিতর্কিত এমপির হাতেও পুনরায় উঠতে পারে নৌকার টিকিট। দলের নেতারা জানান, আগামী নির্বাচনকে তারা খুব ‘সিরিয়াস’ মনে করছেন। তাই পাস করে আসতে পারবেন না এমন এমপিদের আগামী নির্বাচনে নৌকায় না তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুধু এমপিকেন্দ্রিক না হয়ে, তৃণমূলেও নির্বাচনী বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন দলীয় নেতারা। ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারির ৯০ দিন আগে- ডিসেম্বর বা নভেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন খবরও তৃণমূলে দেয়া হয়েছে। বিজয় দিবসের টানা অনুষ্ঠানের কারণে নভেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তাই পুরোদমে নির্বাচনী প্রস্তুতির আগে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আগে ভাগেই সবুজ সংকেত দেয়ার বিষয়টিও ভাবছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। বিষয়টি ক্ষমতাসীনদের জন্য আগে থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতির পাশাপাশি দলীয় কোন্দল মেটাতেও অনেক সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের বেশ ক’জন নেতা বলছেন, আওয়ামী লীগের মাথায় এখন শুধু আগামী নির্বাচন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ক্ষমতার ধারাবাহিকতাও চান তারা। আর বিএনপি যে কোনো চাপের মুখে থাকলেও আগামী নির্বাচনে তারা অংশ নেবে। তাই জনপ্রিয় প্রার্থী ছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বেশ বেকায়দায় পড়বে- এমন চিন্তা শাসক দলের হাইকমান্ডের। জনপ্রিয় প্রার্থীর স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত সেলিনা হায়াৎ আইভীকে। দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলেছেন, সারাদেশে আইভীর মতো প্রার্থী খুঁজতে।
তবে বর্তমান অনেক এমপি যারা ইতিমধ্যে নিজের বলয় সৃষ্টি করে ফেলেছেন, মনোনয়ন না পেলে কলহ-বিবাদে লিপ্ত হতে পারেন তাদের হাত থেকে দলীয় রাজনীতি বের করার চেষ্টাও হবে বিভিন্ন উপায়ে। আর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সংসদীয় দলের বৈঠকে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দলীয় এমপিদের উদ্দেশে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে অনেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন। এ নিয়ে কলহ-বিবাদ করা যাবে না। তবে বিতর্কিত কিছু এমপিকে এখনো পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। নিজ এলাকায় গণসংযোগ বাড়াতে বলা হয়েছে।
খুলনা-৬ পাইকগাছা-কয়রার এমপি অ্যাডভোকেট শেখ মো. নূরুল হকের বিরুদ্ধে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে মামলা হয়েছে। সর্বশেষ এ এমপির পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারকে বাড়ি থেকে উৎখাত চেষ্টার। সে জন্য কয়েক ফুট উঁচু দেয়াল তুলে তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উঁচু দেয়ালের নিচ দিয়ে মাটিতে বুক লাগিয়ে এবং গাছ বেয়ে অবরুদ্ধ ওই পরিবারের নারী সদস্যরা আসা যাওয়া করেন। অমানবিক এ বিষয়টি আলোড়ন তুলেছে দেশজুড়ে।
দলীয় নেতারা বলছেন, এ রকম এমপিদের হাতে নৌকা প্রতীক দিলে আগামী নির্বাচনের তরী পার হওয়া সম্ভব হবে না। শুধু খুলনার নুরুল হকই নন; বিতর্কিত এমপির তালিকাও অনেক লম্বা।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.