কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ
পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে পাহাড় কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দৌছড়ি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোঃ হোছন ও তার ভাই আনোয়ারের বিরোদ্ধে। দিনে দুপুরে নিজ এলাকা থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পাহাড় কেটে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে ইউপি সদস্য মোঃ হোছেন ও তার ভাই। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। বেপরোয়াভাবে পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের তুলাতলী গুরিন্যাকাটা সড়কের পূর্ব পাশে একটি পাহাড়ী টিলা কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ও তার লোকজন ।
জানা গেছে, প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে অবাধে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও তার ভাই আনোয়ার হোসেন। মাঝেমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালালেও থেমে নেই পাহাড় কাটা। এমনকি ফসলি জমির মাটিও রেহায় মিলছে না এই পাহাড় খেকোর কাছ থেকে । বন ও পরিবেশ আইন অমান্য করে সরকারদলীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় একটি চক্র দেদার মাটি কেটে বিক্রি করছে।
পাহাড় কাটা ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রশাসনের তেমন কোনো আইনি পদক্ষেপ না থাকার কারণে তারা এভাবে পাহাড় কাট শুরু করেছে । পাহাড়খেকো ও মাটি বেপারিদের বেপরোয়া কর্মকান্ড সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হলে পাহাড় কাটার উৎসব শুরু হয়। মূলত পাহাড় কেটে ইটভাটাগুলোতে মাটি বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা বলে বছরজুড়েই পাহাড় কাটছে ইউপি সদস্য ও তার ভাই মোঃ আনোয়ার হোসেন। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্নভাবে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে কমিশনের বিনিময়ে এই চক্রকে সহায়তা দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলনের অপরাধে লাখ লাখ জরিমানা করা হয়। অভিযান শেষে আবারও পাহাড় কাটায় ব্যস্ত হয়ে যায় পাহাড় খেকোরা।
এদিকে, দিনের পর দিন পাহাড় কাটায় জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়,দোছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার সহযোগিতায় পাহাড়-টিলা ধ্বংস করা হচ্ছে। সড়ক নির্মাণ কিংবা মেরামতের অজুহাতসহ নানা কৌশলে কাটা হচ্ছে পাহাড় ও টিলা। এক ড্রাম ট্রাক পাহাড় কাটা মাটি বিক্রি করা হয় ১২শ টাকা থেকে ১৪শ টাকা। আর ফসলি জমির মাটি বিক্রি হয় ১৮৫০ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা দোছড়ি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের তুলাতলী গুরিন্যাকাটা ইউপি সদস্য মোঃ হোছেন ও তার ভাই আনোয়ার হোসেন নেতৃত্বে বিশাল আকার পাহাড় কেটে সাবার করে মাটি বিক্রি করার অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষক বলেন,নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা দোছড়ি ইউনিয়নের প্রতিটি অলিগলির সড়ক এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ইটভাটায় ব্যবহারের জন্য ডাম্পার ও মিনি ট্রাকে পাহাড় কেটে মাটি নেওয়া হয়। এসব ট্রাক চলাচল করায় এবং মাটি পড়ে সব সড়কের অবস্থা বেহাল। এতে চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ।প্রশাসনেরর নজরদারি নেই। যার জন্য অবাধে এসব পাহাড় কেটে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা।
এই ব্যাপারে অভিযুক্ত কাছে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মোঃ হোছেন বলেন, আমি এই পাহাড় কাটার সাথে জড়িত নই ।
এব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সালমা ফেরদৌসির সরকারী মোবাইল নাম্বারে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান মোঃ ইমরান প্রথমে পাহাড় কাটা হচ্ছেনা বলে অস্বীকার করলেও পরে তিনি এ ব্যাপারে অবগত নয় বলে জানান।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.