নাইক্ষ্যংছডিতে পুলিশ ও বিজিবির যৌথ অভিযানে অপহৃত ৪ ব্যক্তি উদ্ধার :আটক ৮
বিশেষ প্রতিবেদকঃ
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের লংগেদু খালের মুখ হইতে অপহৃত ৪ ব্যক্তিকে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যারা উদ্ধারের জন্য গত ৫ দিন ব্যাপী পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে আসছিল।
অবশেষে গতরাত পুলিশ ও বিজিবির যৌথ অভিযানে অপহৃত ৪ ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন।
এসময় গহীন জঙ্গলে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ৬ উপজাতি ও বান্দরবান সদরের ২ বাঙ্গালী সহ মোট ৮ জন সন্ত্রাসীকে এ ঘটনায় আটক করার খবর জানা গেছে।
এছাড়া পুলিশ বাইশারী ও রামুর আরো ২ ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে বলে সুত্র দাবি করছে।
জানা যায়,প্রযুক্তির সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আরো কয়েক অপহরনকারীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে বাইশারী পুলিশ।
জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির গহীন পাহাড়ে ঘেরা দোছড়ি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের লংগেদু খালের তীর হইতে ২৭ জানুয়ারী ভোর রাত ৪টার দিকে ৪ তামাক চাষীদেরকে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে অপহরন করে গহীন জঙ্গলে নিয়ে যায়।
এ খবরে তাদের উদ্ধারের জন্য বাইশারী তদন্ত কেন্দ্র ও নাইক্ষ্যংছডি থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসছিল।
গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে অপহৃতদের উদ্ধারে বিজিবি ও সেনা সদস্য সহ পুলিশ এবং পুলিশের গোয়েন্দা শাখা একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন।
এ অভিযানে পুলিশের চৌকস ও আলোচিত কর্মকর্তা এসআই আবু মুসা পুলিশ দলের ও বিজিবি দলের জেসিও বাকিবিল্লাহ অভিযান নেতৃত্ব দেন।
অপহরনকারীদের আটকের উদ্দেশ্যে এবং অপহৃতদের উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের এত আন্তরিক ও জোরালো প্রচেষ্টায় এমন উদ্ধারের ঘটনা বলে দাবি করেন স্থানীয় জনগণ।
জানা যায়, গতকাল বিকাল ৩টায় বিজিবির সদস্যগন অভিযানের উদ্দেশ্যে পাহাড়ে ঢুকে পড়েন।
অপরদিকে বাইশারী ও নাইক্ষ্যংছডি থানা পুলিশের দুটি টিম পাহাড়ে কৌশলে প্রবেশ করে।
অন্যদিকে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আলী হোসেনের প্রযুক্তিগত তথ্য উপাত্ত নির্ভর সংবাদে বিকাশে টাকা উত্তোলনের সময় রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের কুখ্যাত সন্ত্রাসী সোনা মিয়া তার সহযোগী সহ সেনা গোয়েন্দার হাতে আটক হয় এবং এস আই আবু মুসার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল কক্সবাজার ও গর্জনিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরো সন্দেহভাজন ২ ব্যক্তিকে আটক করে।
বর্তমানে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও জানা যায়।
তদন্তের স্বার্থে আটককৃতদের নাম প্রকাশে আপাতত অনিচ্ছুক হলেও প্রশাসনের এরকম ত্রিমুখী অভিযান ও উদ্ধার তৎপরতা চলাকালীন বিজিবি সদস্যদের হাতে দোছড়ি এলাকার গহীন জঙ্গলে ঘটনাস্থলের পাশ হইতে সন্দেহভাজন ৬ জন ত্রিপুরা আটক হন।
অন্যদিকে বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস আই আবু মুসার নেতৃত্বে পুলিশের আরেকটি দল সন্ধ্যার পর হইতে বাইশারীর গহীন পাহাড়ে অভিযান চালায়।
অভিযানকালীন সময়ে রাত ১০টার পরে পিএইচপি মালীকানাধীন ১২ নং রাবার বাগানের পাশ হইতে ৪ জন অপহৃতকে মানবেতর অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক আলাপে উদ্ধার হওয়া অপহৃতরা জানায় তাদেরকে আধা ঘন্টা আগে সন্ত্রাসীরা এই জায়গায় ছেড়ে দিয়ে পাহাড়ের দিকে দ্রুত চলে গেছে।
৩১ নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবির এক কমান্ডার জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকাটি বিস্তৃত পাহাড়ে ঘেরা এবং গহীন জঙ্গল হওয়াতে এরকম অপহরন ঘটনা ঘটে চলছে প্রতিনিয়ত।
অপহরন প্রতিরোধে ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে পুলিশকে সাথে নিয়ে বিজিবি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অপহৃত ৪ জনকে উদ্ধারের জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হয়েছে। অপহৃত ৪ জনের উদ্ধার বিষয়টি নিশ্চয়তা করে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি আলমগীর মোঃ শেখ জানান, এই অপহরন ঘটনায় আমরা ইতিমধ্যে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ সহ আটক করে ও আরো সন্দেহভাজন ও মুল অপহরণকারীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ ঘটনায় থানায় মামলা নেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
থানা এলাকার আলোচিত ক্রাইমজোন বাইশারী এলাকার দায়িত্বরত উপ-পুলিশ পরিদর্শক আবু মুসা জানান, উপজেলার দোছড়ি ও বাইশারী ইউপি দুটির মধ্যবর্তী একটি খাল ও খালের উভয় পাশে বিস্তীর্ণ পাহাড় এবং জঙ্গল থাকায় অপহরনের ঘটনা থামানো যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে সেনা,বিজিবি ও পুলিশের আরো দীর্ঘমেয়াদি অভিযান পরিচালনার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে অপহৃত ৪ জনকে উদ্ধারের পাশাপাশি আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো অভিযান চালানো হবে বলেও জানান এই চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.