নাইক্ষংছড়ি সীমান্তবাসীর রাতগুলো দুঃস্বপ্নের

 

 

আবদুর রশিদ নাইক্ষংছড়িঃ

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে উত্তেজনার কারণে বাংলাদেশ সীমান্তের মানুষের ঘুম দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে মিয়ানমারের পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষীর মাঝেও অতিরিক্ত চাপ পড়েছে। সীমান্তে দুই দেশের অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ফলে সীমান্তে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে মিয়ানমার সীমান্তের দূরত্ব ৯.৬৫কিমি বা ৬ মাইল আর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন সদর থেকে ১.২৮ কিমি ০.৮ মাইল বা ১ মাইলেরও কম। তুমব্রু বেতবুনিয়া বাজার থেকে মাত্র আধা কিমি মিয়ানমার সীমান্তের দূরত্ব। কাঁটা তারের বেড়া ঘেঁষে বাংলাদেশের বসতি গ্রাম রয়েছে অন্তত ৩০টি। এসব গ্রামের মানুষ বর্তমানে চরম আতংকে দিনযাপন করছে। ঘুমধুম সীমান্তের বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী উম্মে সালমা, শিক্ষক হামিদুল হক, কৃষক দিল মোহাম্মদ জানান, সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দিলে গ্রামের মানুষ অজানা আতংকে থাকে। কখন কি হচ্ছে এমন আতংকের কারণে তারা ঘুমাতে পারে না।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদে কর্মরত সরকারি এক চাকুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘দেশের কিছু মানুষ রোহিঙ্গা ইস্যুকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছেন। কেউ মিয়ানমার সেনা বা বিজিপির দোষ দিচ্ছেন, আবার কেউবা দোষ চাপাচ্ছেন রোহিঙ্গাদের বা রোহিঙ্গা জঙ্গীদের প্রতি। অথচ শংকিত সেসব সীমান্তবাসীর কথা কেউ লিখছেন না। তাদের রাতের ঘুম এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, স্বাধীন দেশে অপশক্তি, পরাশক্তি সকল প্রকারের অপঘাত প্রতিহত করতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পাশাপাশি আমাদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে। জানমালের নিরাপত্তা দিতে সরকারের তরফ হতে সমস্ত প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গৃহীত রয়েছে। তবে সীমান্ত এলাকার মানুষদের সতর্ক থাকতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ জানান তিনি।

সোমবার সকালে বাংলাদেশের দিকে আবারো দুই রাউন্ড গুলি ছুড়েছে মিয়ানমার বাহিনী। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. এরশাদুল হক জানান, সোমবার মিয়ানমার বাহিনীর ছোড়া একটি বুলেট সকাল ৮টায় ঘুমধুমের তুমব্রু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং অপর একটি বুলেট তুমব্রু বাজারে পড়ে। যার কারণে এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।

এদিকে রবিবার বিজিবি মহাপরিচালকের সীমান্ত পরিদর্শনের পর সীমান্ত জনসাধারণের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ওই মতবিনিময় সভায় জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সরওয়ার কামাল, ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ উপস্থিত ছিলেন। এসময় তারা সীমান্তের মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার অনুরোধ জানান এবং রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে যাতে কেউ মদদ না দেন সেদিকে লক্ষ্য রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.