ডেস্ক নিউজ:
১৬ কোটিরও বেশি জনগোষ্ঠীর জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বার্ষিক বাজেট তৈরি করছেন শেখ হাসিনা সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। যা মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে যা ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বেশি।
করোনাকে সামনে রেখে এবারের বাজেটে অনেকগুলো পাহাড় টপকাতে হবে। বাজেট সংশ্লিষ্টরা বলছেন মূল বাজেট বাস্তবায়নই এখানে বড় কাজ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে করোনায় কর্মহীনদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা। খাদ্য মজুত বাড়িয়ে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা, রাজস্ব আয় বাড়ানো, করোনার টিকা নিশ্চিত করা, চলমান অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব সংগ্রহ, বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমানো ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো ইত্যাদি। জানা গেছে, আগের বেশ কয়েক বছরের মতো এবছরও অর্থনীতির প্রয়োজনেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আগামী বৃহস্পতিবার (৩ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশের ৫১তম বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন। বর্তমান সরকারের এটি হবে টানা ১৩তম এবং অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের তৃতীয় বাজেট।
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন বাজেট হবে করোনা মোকাবিলা করে এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ প্রত্যয়ের বাজট। আগামী বাজেট হবে সাধারণ মানুষের বাজেট। দেশের মানুষ বাঁচানোর ও ব্যবসায়ী বাঁচানোর বাজেট।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব ও বৈদেশিক অনুদান মিলিয়ে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। কর বাবদ পাওয়া যাবে ৩ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর বহির্ভূত কর ১৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া পাওয়া যাবে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা বাবদ পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
এবারের বাজেটের অনুদানসহ ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ। অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা (জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ)।
প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে তিনটি খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। খাত তিনটি হচ্ছে- স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা। নতুন বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় টিকাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল থাকছে। চলতি বাজেটের চেয়ে যা প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে বরাদ্দ থাকছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বহুদিন উৎপাদনের চাকা ঘোরেনি। নিম্ন আয়ের মানুষ জীবিকা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে আছে। এসব বিবেচনায় রেখে এবার সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আকার ও বরাদ্দ দুটোই গুরুত্ব পাচ্ছে।
বোরোর উৎপাদন ভালো হলেও আগামীতে আমনের ফলন কেমন হবে তা আগাম বলা যাচ্ছে না। প্রয়োজন হতে পারে চাল আমদানির। এ কারণে সরকার এ বছর খাদ্যেকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ৩০০ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ পাচ্ছে খাদ্য খাত। সব মিলিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় বরাদ্দ পাচ্ছে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা।
করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এ বছর সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। এমনিতেই প্রতিবছর সুবিধাভোগীদের সংখ্যা ১০ শতাংশ হারে বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, যোগ্যদের ৪৬ শতাংশ এখনও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাইরে রয়েছে।
এবারের বাজেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা।
করোনায় জাতীয় কল সেন্টার ৩৩৩-এ কল করার মাধ্যমে মানুষকে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এমন সব উদ্যোগের পরিধি বাড়ানোর জন্যও বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘মানুষ যাতে এই বাজেটের সুফল পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নটাই বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে কবে। এখন সবার আগে টিকা দরকার। এজন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এই খাতে সুশাসনও প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.