দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগের নেপথ্যে
ডেস্ক নিউজ:
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য দীর্ঘদিন নিয়োজিত থাকার পর পদত্যাগের মাধ্যমে দায়িত্ব ছাড়লেন দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল। তাদের এই পদত্যাগ মোটেও সুখকর বলে মনে করছেন না সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগের তিনদিনের মাথায় ও তার প্রথমদিনের কার্যভার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে দুই অতিরিক্ত অ্যাটর্নির পদত্যাগের ঘটনায় আইনাঙ্গনে আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের একাধিক সূত্র জানায়, প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি নিয়োগ পেয়ে মোট ১১ বছর ৮ মাস ১৪ দিন দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে মাহবুবে আলম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ ছাড়ার চেষ্টা করেছিলেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃবৃন্দের কাছে মাহবুবে আলম ছিলেন একমাত্র পছন্দ। তাই মাহবুবে আলমের মেধা ও দক্ষতার ধারেকাছে কেউ না থাকায় তার জীবদ্দশায় অন্য কোনও বিকল্প খোঁজার প্রয়োজন মনে করেনি সরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাহবুবে আলমের মৃত্যুতে অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগে গুরুত্ব দেয় সরকার। তাই অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন সদ্য পদত্যাগী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।
মুরাদ রেজা ২০০৯ সালের ২৭ মার্চ এবং মোমতাজ উদ্দিন ফকির ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দীর্ঘদিনের দায়িত্ব পালন শেষে রবিবার (১১ অক্টোবর) দুজনই রাষ্ট্রপতি বরাবর আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটার শাখায় পদত্যাগপত্র জমা দেন।
এদিকে, গত ১ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান এসএম মুনীর। পরে গত ৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিনকে বাংলাদেশের ১৬তম অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন অতিরিক্ত হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর অ্যাটর্নি জেনারেল হতে না পারায় তারা গত ৮ অক্টোবর পদত্যাগপত্র প্রস্তুত করে রাখেন। এরপর দুই দিন সরকারি ছুটির পর রবিবার (১১ অক্টোবর) আইন মন্ত্রণালয়ের দাফতরিক কার্যক্রম চালু হয়। এর ফলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তারা নিজেদের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করেন।
মূলত অ্যাটর্নি জেনারেল না হতে পারায় ‘ইগো’ দেখিয়ে তারা দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে মোমতাজ উদ্দিন ফকির ২০০১-২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগেও ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে তিনি সমিতির সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে সমিতির বর্তমান সভাপতি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় সমিতির নির্বাচনে আবারও সরব হবেন তিনি। অন্যদিকে মুরাদ রেজা বারের নির্বাচনের সঙ্গে পূর্বে কোনও সম্পৃক্ততা না থাকায় তিনি নিয়মিত আইনজীবী পেশা পরিচালনা করবেন বলেও জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের কয়েকটি সূত্র।
মোমতাজ উদ্দিন ফকির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। আগেও বারে প্র্যাকটিস করতাম। এখন আবার বারের প্র্যাকটিসে নিয়মিত হবো।
তবে এ বিষয়ে মুরাদ রেজার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি বারবার ব্যস্ত পাওয়া গেছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দিতে কোনও নীতিমালা বা আইন নেই বলে জানালেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তাই তিনি সংবিধান মেনে যে কাউকেই নিয়োগ দিতে পারেন। কিন্তু আমি মনে করি, অ্যাটর্নি কার্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও কিছু শর্তারোপ বা নীতিমালা রাখা প্রয়োজন। তাহলে অনেক বিতর্ক এড়ানো সম্ভব হবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.