তবু জয়ের হাতছানি টাইগারদের সামনে

ওয়ান নিউজ ক্রীড়া ডেক্সঃ টেস্টে বাংলাদেশের স্বপ্নের দিন আসে কমই। কিন্তু শ্রীলঙ্কার মাটিতে শততম টেস্টটা বারবার বাংলাদেশের রঙেই রাঙা হচ্ছে। তবে কেন যেন এই ঐতিহাসিক টেস্টের রোজকার শেষের চিত্র প্রায় এক। দিনের শেষে ব্যাটে-বলে কোনো না কোনোভাবে খানিকটা হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হচ্ছে টাইগারদের। শনিবার কলম্বোর পি.সারা ওভালে দ্বিতীয় সেশনে সাকিব-মোস্তাফিজ যে লঙ্কাকাণ্ড করলেন, তাতে ৫টি উইকেট হারালো খোদ লঙ্কানরাই। কোণঠাসা লঙ্কানদের এক ধাক্কাতে খাঁদের কিনার থেকে যখন গভীর অতলে ঠেলে ফেলার মুহূর্ত, তখনই দল বেধে না হলেও হতাশা আসে। অসাধারণ দিনটির মাঝে রয়ে যায় খানিকটা না পাওয়া অতৃপ্তি। স্বপ্নের দিন হতে হতেও হয় না। একটুর জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে লঙ্কানদের অল আউট করা গেল না চতুর্থ দিনটায়। ২ উইকেট বাকি। তবু কিন্তু বিদেশের মাটিতে জয় হাতছানি দিয়ে ডাকছে টাইগারদের!

এইবার দ্রুত এই ম্যাচের চিত্রটা দেখে নেওয়া যাক। শ্রীলঙ্কা ১৩৯ রানে এগিয়ে থেকে দিন শেষ করেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেটে ২৬৮ রান তাদের। সকালের প্রথম আধ ঘণ্টাতে শেষ ২ উইকেট চাই-ই-চাই টাইগারদের। বিপন্ন শ্রীলঙ্কা নইলে পরাজয়ের লজ্জা এড়িয়ে ফেলার দিকে আরো খানিকটা এগিয়ে যাবে। প্রথম ইনিংসে ৩৩৮ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরিতে ৪৬৭ রানের জবাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। আর চতুর্থ দিন তো স্বাগতিকদের আঘাতের পর আঘাতে বিপর্যস্ত করেও শেষ বিকেলে সামান্য হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়। যেমনটা বাংলাদেশের প্রথম দিন হয়েছে বল হাতে, দ্বিতীয় দিন ব্যাট হাতে, তৃতীয় দিনেও বল হাতে খানিকটা।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ লিড নিয়েছিল ১২৯ রানে। তৃতীয় দিনটা শ্রীলঙ্কা শেষ করে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৪ রানে। ২৫ রানে দিন শুরু করে দিমুথ করুনারত্নে এদিন প্রথম ইনিংসে দিনেশ চান্ডিমালের ভূমিকা পালনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু একের পর এক জুটি গড়তে না পারলেও নিজের সেঞ্চুরিটা ঠিকই তুলে নিয়েছেন কঠিন চাপের মুখে। ১২৬ রান করে সাকিবের তৃতীয় শিকার হয়েছেন। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট করুনারত্নে। সাকিব ও মোস্তাফিজ ৩ উইকেট করে নিয়েছেন। মেহেদী ও তাইজুলের শিকার ১টি করে উইকেট।

চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনটিকে প্রায় স্বপ্নের এক সেশনে রূপ দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান। দুজনে মিলে ওই এক সেশনেই ৫ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাকে করে তুলেছেন উজ্জ্বল। কিন্তু করুনারত্নে ও দিলরুয়ান পেরেরা সপ্তম উইকেটে জুটি বেঁধে বাংলাদেশের সেই স্বপ্নের পথে বড় বাঁধা হয়ে উঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। রান বেশি না নিলেও চা বিরতির আগে-পরে মিলিয়ে সপ্তম উইকেটে দুজনে খেলে ফেলেন ২২.৩ ওভার! কিন্তু বিষফোঁড়া হয়ে উঠার আগেই জুটি ভেঙে দিয়ে বাংলাদেশকে উৎসবে ভাসান সাকিব। তিনি এবার সরিয়ে ফেলেন সবচেয়ে বড় কাঁটাটাই। আউট করেন একপ্রান্ত আগলে রেখে প্রতিপক্ষকে হতাশা উপহার দিয়ে চলা করুনারত্নেকে।

বাংলাদেশকে দিনের দ্বিতীয় এবং নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই উপুল থারাঙ্গাকে বোল্ড করে উইকেট উৎসবে ভাসান মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম সেশনেই ওই একটাই সাফল্য। তবে কয়েকটি সুযোগ মিস করেছে টাইগাররা। কিন্তু টাইগাররা সত্যিকার অর্থে জ্বলে ওঠে লাঞ্চের পর। খাবার কি খুব মুখরোচক ছিল?

ফিরে এসে আবার সেই দ্বিতীয় ওভারে বাংলাদেশের সাফল্য। সেই শুরু। এরপর বাংলাদেশকে একটু পরপরই উইকেট উৎসবে ভাসাতে থাকেন মোস্তাফিজ-সাকিব। মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয় এবং নিজের প্রথম ওভারেই মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন দুই দুই বার আউট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া কুশল মেন্ডিসকে (৩৬)। তার একটু পর আবারও লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন মোস্তাফিজ। ফেরান প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে হতাশায় পোড়ানো দিনেশ চান্ডিমালকে। শ্রীলঙ্কার রান তখন ৩ উইকেটে ১৬৫।

কুশল মেন্ডিসের আউট অবশ্য রিভিউ সাফল্যের ফসল। অফ-স্টাম্পের সামান্য বাইরে পিচ করা মোস্তাফিজের দুর্দান্ত বলটি কুশলের ব্যাটে আলতো একটা ঘষা দিয়ে চলে যায় উইকেটকিপার মুশফিকুর রহীমের গ্লাভসে। বাংলাদেশি ফিল্ডাররা কট বিহাইন্ডের আবেদন করলেও ভারতীয় আম্পায়ার সুন্দরম রভি সেই আবেদন নাকচ করে দেন। মোস্তাফিজ আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে নেন রিভিউ। টিভি আম্পায়ার দক্ষিণ আফ্রিকার মারিয়াস এরাসমাসের অনেক দেখেশুনে দেওয়া সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে ভাসায় আনন্দে। আউট! কুশল ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। শ্রীলঙ্কা ১৪৩ রানে হারায় দ্বিতীয় উইকেট।

চান্ডিমালের উইকেটটিও মোস্তাফিজ-মুশফিকের যুগলবন্দির ফসল। মোস্তাফিজের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান চান্ডিমাল। একটু পর মাত্র ৭ রানেই আসেলা গুনারত্নেকে ফেরান সাকিব। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে রানের খাতাই খুলতে দেননি মোস্তাফিজ। এরপর সাকিবের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ডিকভেলা ফিরে গেছেন ৫ রান করে।

৪৭ রানের মধ্যে ৫ উইকেট। শ্রীলঙ্কা তখন ১৯০ রানে ৬ উইকেট হারানো দল। গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ানো করুনারত্নে ১২৬ করে ফেললেন। সাকিব তাকে তুলে নিলেন। শ্রীলঙ্কার লিড তখনো ১০০ হয়নি। লেজ বেরিয়ে গেছে। তখন একটু মারতে থাকে বিপদে পড়া লঙ্কানরা। রঙ্গনা হেরাথকে (৯) হারায় তাইজুলের কাছে। কিন্তু দিলরুয়ান পেরেরা ২৬ ও সুরঙ্গা লাকমাল ১৬ রানে অপরাজিত। সকালে দ্রুত তাদের বিদায় করে ঐতিহাসিক জয়ের পথে ছুটতে পারবে মুশফিকের দল?

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.