ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর দীর্ঘ সময় পর আমরা এখন জানি যে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, ঘর ও কাপড় পরিষ্কারের মাধ্যমে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কমানো যায়। কিন্তু এমন কিছু কাপড় রয়েছে যেগুলো সরাসরি সাবান-পানি বা ওয়াশিং মেশিনে পরিষ্কার করা যায় না। সেক্ষেত্রে আমাদের ড্রাই ক্লিনিংয়ের দ্বারস্থ হতে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো ড্রাই ক্লিন কি পোশাককে ভাইরাসমুক্ত করতে পারে?
এক্ষেত্রে প্রথমে জানতে হবে ড্রাই ক্লিনিং প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে। এই ‘ড্রাই ক্লিনিং’ টার্মটিই হলো ভুল ব্যবহার। কারণ এ প্রক্রিয়ায়ও আপনার কাপড় কিন্তু ঠিকই ভিজে যায়। এতে পানির পরিবর্তে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। ড্রাই ক্লিনিংয়ের মাধ্যমে পোশাক পরিষ্কার করতে রাসায়নিক দ্রাবক, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পারক্লোরিথিলিন ব্যবহূত হয়। এছাড়া গ্রিন ড্রাই ক্লিনিংয়ে তরল কার্বন ডাই-অক্সাইড, সিলিকনভিত্তিক দ্রাবক কিংবা একটি ভেজা পরিষ্কারের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এরপর পোশাকগুলোতে ইস্ত্রি, স্টিম দেয়া হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগের চিকিৎসক ও মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক পিটার চিন-হং বলেন, ড্রাই ক্লিন প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক দ্রাবক নয়, বরং উচ্চ তাপমাত্রা ভাইরাসকে হত্যা করতে সক্ষম। এ প্রক্রিয়ায় চাপ ও ইস্ত্রি করার সময় উচ্চ তাপমাত্রা বেশ নির্ভরযোগ্য। ভাইরাস তাপকে ঘৃণা করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মতে, ১৬৭ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি তাপমাত্রায় ফ্লু ভাইরাসগুলো মারা যায়। করোনাভাইরাস নিয়ে অধ্যয়নগুলো ২০ মিনিট ধরে ১৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রার প্রস্তাব দেয়। ঘরে করা গরম পানি সাধারণত ১৩০ ডিগ্রি বা তার চেয়েও বেশি তাপমাত্রায় পৌঁছতে পারে।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক ও পেশাগত স্বাস্থ্যের অধ্যাপক মেলিসা পেরি বলেন, করোনাভাইরাস হত্যা করার ক্ষেত্রে ওয়াশিং মেশিনে পরিষ্কারের তুলনায় ড্রাই ক্লিনিং কম বা বেশি কার্যকর এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ড্রাই ক্লিনিং কেবল বিশেষ ধরনের পোশাকগুলোর জন্যই ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যদিকে সাধারণ পোশাক ও বিছানাপত্রের জন্য নিয়মিত পরিষ্কারই যথেষ্ট।
অধ্যাপক চিন-হং বলেন, সম্প্রতি কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়া, অবকাশ বা ভ্রমণ থেকে ফিরে এসে পোশাকগুলো ড্রাই ক্লিনিং করার বিষয়টিকে আমি অগ্রাধিকার দেব। আবার স্বাস্থ্যসেবার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে প্রয়োজনীয় কর্মী হিসেবে কাজ করলে আপনি আরো ঘন ঘন ড্রাই ক্লিনিং করতে পারেন। তবে আপনি যদি অসুস্থ না হয়ে থাকেন এবং ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার আশঙ্কা না থাকে তবে ড্রাই ক্লিনিংয়ের মতো অতিরিক্ত কাজের দরকার নেই। অধ্যাপক পেরি বলেন, পোশাকের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে যথারীতি ড্রাই ক্লিনিং করতে হয়। তবে সাধারণের চেয়ে বেশি ড্রাই ক্লিনিং করার কোনো প্রয়োজন নেই।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.