টাকার লোভে সন্ত্রাস-দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত না হওয়ার আহ্বান

ডেস্ক নিউজ:
তাৎক্ষণিকভাবে নগদ মোটা টাকার লোভে মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিতে দেশের যুব সমাজকে সম্পৃক্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই ধরনের কোনো কাজের সাথে কেউ যেন সম্পৃক্ত না হয়। এগুলো হয়ত তাৎক্ষণিকভাবে নগদ মোটা টাকা দিতে পারে। কিন্তু আসলে এখানে জীবনের নিশ্চয়তা থাকে না। আর মাদক, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের কিন্তু খুব কঠোর অবস্থানটা বজায় থাকবে, এটা মাথায় রাখতে হবে।

রোববার (১ নভেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবস-২০২০’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আজকে সারাবিশ্ব স্থবির হয়ে গেছে। আমরা সাথে সাথে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। সেই সাথে সাথে আহ্বান করেছি আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। সেখানেও আমরা আমাদের যুব সমাজকে ধন্যবাদ জানাই। যখন ধান কাটা নিয়ে সমস্যা ছিল যখন আহ্বান করলাম, আমাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ থেকে শুরু করে সকলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। যেকোনো কাজেরই মর্যাদা আছে। যে জিনিস খেয়ে আমাদের জীবন বাঁচে আর সেই ফসলের মাঠে কাজ করলে কারো মর্যাদাহানি হয় না। বরং এই কাজ করে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর ফলে মনে করি আমাদের ছাত্র এবং যুবদের সম্মান জাতির কাছে, আন্তর্জাতিকভাবেও অনেক অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিজের কাজ নিজে করতে কোনো লজ্জা নাই দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে আরেকটি বিষয় আমি বলতে চাই- সব জায়গায় একটা জবাবদিহিতা থাকতে হবে এবং দেশকে ভালবাসতে হবে। দেশের মানুষের প্রতি একটা দায়িত্ববোধ থাকতে হবে এবং এই দায়িত্ববোধটা নিয়েই আগামী দিনে চলতে হবে, সেটাই আমরা চাই।

কারিগরি শিক্ষার দিকে সরকারের গুরুত্ব দেয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারিগরি শিক্ষা জানলে দেশে বিদেশে কাজ করার সুযোগ হয়। সেখানেও আমার যুবকদের প্রতি একটি আহ্বান থাকবে। কারণ আমরা জানি অনেক সময় দালালদের খপ্পরে পরে জমি-জমা বিক্রি করে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে বিদেশে ছুটে যায় সোনার হরিণ ধরতে। তারপর দেখা যায় সেখানে তো না কাজ পাওয়া যায়, না চাকরি পাওয়া যায়। অকাতরে জীবনটা দিতে হয়।

তিনি বলেন, বাবা-মা ভাইবোন তাদের কি অবস্থাটা দাঁড়ায়? অথচ এটা কিন্তু প্রয়োজন নেই। আমরা বিদেশে পাঠানোর জন্য আমাদের প্রত্যেকটা ডিজিটাল সেন্টারে সমগ্র বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা আছে। কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে কোথায় সঠিক চাকরি, বেতন আছে কিনা? বেতন পাবে কিনা, প্রতারণার শিকার হচ্ছে কিনা, সেগুলোর তথ্য নেওয়ারও সুযোগ এখন আছে। অর্থাৎ তথ্য প্রযুক্তির যুগে আজকে বিশ্বটা একটা গ্লোবাল ভিলেজ, একটা ছোট্ট জায়গা। সেখান থেকে সব খবর পাওয়া যায়। সেটা নিশ্চিত করেই কিন্তু এই সোনার হরিণ ধরার জন্য বিদেশে পাড়ি জমানো ভাল, যেতে হলে সবকিছু জেনে যাওয়া ভাল।

আর তাছাড়া নিজের দেশেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সমগ্র বাংলাদেশে একশোটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেয়ার পদক্ষেপসহ যুব সমাজকে নিজস্ব উদ্যোগে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তবে এটা ঠিক, একটা সমস্যা এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। এমনকি খেলাধুলা সংস্কৃতি চর্চা; বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে ছিল, সেখানে কিন্তু বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকেনি। সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সবকিছুই যেন স্থবির করে দিয়েছে। সবথেকে দুঃখজনক আমাদের ছাত্রছাত্রীরা স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে যেতে পারছে না। এটা শুধু আমাদের দেশে না, বিশ্বব্যাপী এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে আবার আপনারা জানেন যে, করোনাভাইরাসের একটা প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে দেখা দিচ্ছে। ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে অনেক দেশ ইতিমধ্যে লকডাউন ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের সবাইকে কিন্তু সুরক্ষিত থাকতে হবে। যেকোনো কাজে সবাই মাস্ক ব্যবহার করবেন। আমি হয়ত মাস্ক ছাড়া বক্তৃতা দিচ্ছি, আপনারা ভাবছেন আমি মাস্ক ছাড়া কেন? আমার আশপাশে কিন্তু বেশি লোক নাই।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাস্ক সারাক্ষণ পরে থাকতে হবে তা নয়। কিন্তু যখন কারো সাথে মিশবেন, কোন জনসমাগম বা মার্কেটে যাবেন তখন অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করে নিজেকে সুরক্ষিত করবেন অপরকেও সুরক্ষিত করবেন। করোনাভাইরাস থেকে যেভাবে আমরা মানুষকে রক্ষা করেছি, সেটার যেন ধারাবিহকতা থাকে। কারণ এটা প্রত্যেকের নিজ নিজ একটা দায়িত্ব।

যুব সমাজের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাসের এই অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য আমরা যে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি, যেন আমাদের অর্থনীতির গতিটা অব্যাহত থাকে। কাজেই আবারও এখন সময় এসে গেছে, এখন থেকে বাইরে থেকে আমাদের দেশে যারা আসবে, তাদের পরীক্ষা করা, তাদের কোয়ারাইটানে রাখা, এটা আমাদের এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা পোর্টে এখন থেকে আবার সেই আগের মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ ঢুকতে গেলেই করোনাভাইরাস নিয়ে ঢুকছে কিনা এটা পরীক্ষা করতে হবে। কারণ আমার দেশের মানুষের সুরক্ষাটা নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.