ঝিলংজার তিন হাটবাজারের রাজস্বের কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে সিন্ডিকেট!

নিজস্ব প্রতিবেদক::
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের তিন হাটবাজার নিয়ে ইউএনও’র রহস্যজনক ভূমিকার কারণে রাজস্বের কয়েক কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে চিহ্নিত সিন্ডিকেট। উপজেলা প্রশাসনের সাথে লাগোয়া উপজেলা, লিংকরোড এবং খরুলিয়া এই তিনটি বাজার থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে সাড়ে চার কোটি টাকা ইজারা আদায় করা হয়ে থাকে। এরমধ্যে খরুলিয়া বাজারের সর্বশেষ সরকারী ডাক মূল্য ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা বলে জানা যায়। এছাড়াও উপজেলা বাজার ৫০ লাখ এবং লিংকরোড বাজার ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু এতো বিপুল রাজস্ব আদায়ের সুযোগকে একটি কুচক্রি মহল নিজেদের পকেট ভর্তি করার সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। নামমাত্র মূল্যে খাস পরিশোধ করে বাকী টাকা লুটে নিচ্ছে চক্রটি। অভিযোগ উঠেছে- বাজার সভাপতি ইউএনও’র যোগসাজসে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তিন বাজারের ইজারা লব্দ আয় এভাবে লুটে নেওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। চলতি বাংলা সন ১৪২৯ সনের এখনও ৪ মাস অতিবাহিত হয়েছে। সচেতন মহলের দাবী এখনও সুযোগ আছে বাজার তিনটি সঠিক নিয়ম মেনে ইজারাদারদের কাছে হস্তান্তর করলে বাকী ৮ মাস থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ টাকা রাজস্ব পাবে। তাদের দাবী- বাজার তিনটি যেন ন্যায় সঙ্গত ভাবে খোলা ডাকে দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ- নানা অজুহাত সৃষ্টি করে বিগত কয়েক বছর ধরে বাজার তিনটি ইজারা না দিয়ে খাস আদায়ের জন্য বাধ্য করা হয়। কিন্তু নামে খাস আদায় হলেও অঘোষিত ভাবে তিন বাজারই চিহ্নিত একটি সিন্ডিকেটের কাছে অবৈধ ভাবে ইজারা দেওয়া হয়। ফলে খাস আদায়ের নামে সরকার পায় নামমাত্র টাকা। আর অবৈধ ইজারাদাররা লুটে নেন কয়েক কোটি টাকা। মাঝখানে তেলেসমাতির জোরে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যাক্তিরা পান ঘুষ হিসেবে কোটি টাকা। আর এভাবে কৌশলে বাজার দখল করার বন্দোবস্ত করেছে বাজার সভাপতি ইউএনও এবং তাঁর অফিস সহকারী উত্তম চক্রবর্তী।
অনুসন্ধানে জানা যায়- সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সি.এ উত্তম চক্রবর্তী উক্ত সিন্ডিকেটের প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। তিনিই মূলত বিভিন্ন কৌশল খাটিয়ে আইনে ফাঁকফোকর দিয়ে তিনটি বাজারকে অবৈধ ইজারাদারদের হাতে তুলে দিয়েছেন। নিজেও বাজার তিনটিতে অবৈধ ইজারাদারদের সাথে ভাগ বন্টনে অংশীদার বলে নিশ্চিত করেছে সিন্ডিকেটটির একাধিক সদস্য। এর মধ্যে খরুলিয়া বাজারটি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও শরীফ মেম্বারের অধীনে, লিংকরোড বাজারটি মেম্বার কুদরত উল্লাহর অধীনে এবং উপজেলা বাজারটি নাছির মেম্বার ও উত্তম কুমার চক্রবর্তী নিয়ন্ত্রণ করছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
খরুলিয়া বাজারের সাবেক এক ইজারাদার জানান, তার সময়ে প্রতি হাটে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা কালেকশন করতেন। বর্তমানে খাস কালেকশনে নিলেও এখনো সম পরিমাণ হাছিল আদায় হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পূর্বের ইজারা আদায় পদ্ধতি এবং পরিস্থিতির সম্পর্কে জ্ঞাত থাকায় ব্যবসায়ীদের উপর চাপ প্রয়োগ করে জোর পূর্বক ইজারা সমপরিমাণ অর্থ আদায় করে নিচ্ছে খাস আদায়ের নামে নিয়োজিত এই সিন্ডিকেটটি।
উপজেলা বাজারের হাছিল আদায়কারী জলিল জানান- বাজার থেকে দৈনিক ২০ হাজার টাকা হাসিল তুলে নাছির মেম্বারের হাতে দিয়ে দেন। তবে ওই টাকা থেকে কত টাকা খাস আদায়ে জমা দেন আর কত টাকা নিজেরা রাখেন তা জানাতে চাননি। জলিল নিজেকে বাজারটির হাছিল আদায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত চাকরিজীবি দাবী করলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায় অবৈধ ইজারাদার সিন্ডিকেটে উক্ত বাজারে তারও একটি অংশীদারিত্ব রয়েছে। এবিষয়ে নাছির মেম্বারের বক্তব্য জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া জানান- উপজেলা বাজার নিয়ে ডিসি কার্যালয়ের একটি নির্দেশনা আছে তাই দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। লিংকরোড বাজার নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। আর খরুলিয়া বাজার পুন দরপত্র আহ্বান করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বলে দাবী করেন। কি সমস্যায় পড়ছেন জানতে চাইলে বলেন- উপজেলা চেয়ারম্যান ফাইল আটকে রেখেছেন। একারণে সামনে অগ্রসর হতে পারেননি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান- বাজার তিনটি সঠিক নিয়ম মেনে ইজারা দিতে পারলে সরকার বিপুল রাজস্ব পেতো এটা ঠিক। কিন্তু কি কারণে এটা হয়নি তা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিবেন বলেও আশ্বাস দেন। এছাড়াও কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান প্রতিবেদককে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.