ঝিনাইদহ পওর বিভাগের ৫৪টি বাসা ছাড়া নিয়ে উত্তেজনা চরমে
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের লিজ দেওয়া বাড়ি থেকে অমানবিক ভাবে ৫৪টি পরিবার উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারী নিজেরে মধ্যে সরকারী বাসা নেওয়ার জন্য এই পাঁয়তারা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক দপ্তরে লিখিত অবিযোগ দেওয়া হয়েছে। লিজ গ্রহীতাদের ভাষ্য, পওর বিভাগের পরিক্যাক্ত এ সব বাসা বাড়ি নিজেরা টাকা খরচ করে সংস্কার করে বসবাসের উপযোগী করেছেন। এখন তাদের জোর করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন কলেজের প্রভাষককে মস্তান, পুলিশ ও পেশি শক্তির মাধ্যমে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ সব পরিবারের ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা করায় অন্যত্র বাসা নিয়ে যাওয়াও তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে দাবী করা হয়েছে, সংস্কার বিহীন এ সব পরিত্যক্ত বাসাবাড়ি ৫৪টি পরিবার লিজ নিয়ে বসবাসের উপযোগী করেন। আগে এ সব পরিত্যক্ত ভবনে গাজা, মদ, হিরোইন, ফেনসিডিলসহ অসামাজিক কাজের আখড়া ছিল। লিজ গ্রহীতারা টাকা খবর করে বিদ্যুৎ সংযোগ, পানির লাইন, ভবনের জানালা দরজা মেরামতসহ অবকাঠোমো উন্নয়ন করেন। তারা ব্যাংকের মাধ্যমে বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য ব্যায় পরিশোধ করে আসছেন। অথচ বেআইনী ভাবে তাদের উচ্ছেদ করার জন্য নোটিশ জারী করা হয়েছে।
লিজ গ্রহীতারা অভিযোগ করেন, এ সব বাসাবাড়ি তারা মেরামত করলেও ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বাসা মেরামতের ভুয়া কোটেশন দেখিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুস সবুর খান প্রাধানমন্ত্রীর বরাবর দুই পাতার একটি অভিযোগ পাঠিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮ জন কর্মচারী কর্মকর্তাদের কোয়াটার নিজেদের নামে বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করছেন।
এদের মধ্যে কারো কারো নামে একাধিক বাসা বরাদ্দ আছে। তারা ভাড়া দিয়ে সরকারী টাকা কোষাগারে না দিয়ে পকেটস্থ করছেন। এক সম্প্রসারণ উপ-দর্শক ঝিনাইদহে একটি ও হরিণাকুন্ডুতে দুইটি বাসা নিজের নামে বরাদ্দ নিয়ে ১৫ বছর ধরে ভাড়া না দিয়ে বসবাস করছেন। হরিণাকুন্ডুর এসডিইর বাসা দুইটি তিনি ভাড়া দিয়ে খাচ্ছেন। পাম্প অপারেটর আবু রেজা, অফিস সহকারী আব্দুল মজিদ, অফিস সহায়ক আহম্মদ আলী, ডিইও জাহাঙ্গীর হোসেন, হিসাব করনিক ফারজানা ইয়াসমিন, অফিস সহায়ক দিয়ানত আলী ও সম্প্রসারণ উপ-দর্শক বাদশা আলমগীরের বিরুদ্ধে সরকারী ভাড়া ফাঁকির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এদের মধ্যে চারজন একেবারেই ভাড়া দেন না। বাকীরা মাত্র ৫% ভাড়া দিয়ে বসবাস করেন। লিজ গ্রহীতাদের অভিযোগ পওর বিভাগের এক উপ-সহকারী প্রকৌশলী, সম্প্রসারণ উপ-দর্শক ও কার্য সহকারী তাদের কাছে প্রতিটি বাসার জন্য ত্রিশ হাজার টাকা দাবী করেছিলেন। টাকা না দেওয়ায় এখন তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। লিজ গ্রহীতাদের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি টারবাইন পাম্পকে ঘিরে মহা দুর্নীতি করা হচ্ছে। পাম্পটি দীর্ঘ ৭/৮ বছর নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলেও ২০১৫ সালে ১০ লাখ টাকা ও ২০১৬ সালে সাড়ে ১২ লাখ টাকা মেরামত বাবাদ তুলে নিয়েছে। আবার পাম্প চালক আবু রেজা খান প্রতি মাসে ওভার টাইম বাবদ হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পওর বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল সিদ্দিকী জানান, মন্ত্রানালয় থেকে চিঠি আসার কারণে তাদেরকে বাসা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। তাছাড়া তাদের লিজের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, জোর করে কারো উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। বরং ষাট ভাগ ভাড়াটিয়া চলে গেছে। কিছু মস্তান প্রকৃতির ভাড়াটিয়া আমাদের নামে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল সিদ্দিকী মনে করেন। তিনি বলেন কর্মচারীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির কারণে ভাড়াটিয়া এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকারী বাসা না ছাড়ার চক্রান্ত করছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.