রামিম হাসান,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
অধিকাংশ শিক্ষকের কর্মবিরতির মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা। শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দারের অপসারন ছাড়া আর শ্রেণী কক্ষে ফিরবেন না বলে জানান আন্দোলনকারী শিক্ষকরা ।
স্কুলে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় শৈলকুপা শহরে অবস্থিত পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে ৩৩ জন শিক্ষক কর্মচারী রয়েছে। ৬ষ্ঠ, সপ্তম এবং নবম শ্রেণীর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৫৬ জন।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকালে বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে স্কুলে গিয়ে দেখা যায় কোন রুমে প্রধান শিক্ষক, কোন রুমে কর্মচারী আবার কোন রুমে শিক্ষক ছাড়াই বার্ষিক পরীক্ষা চলছে।
সহকারী প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান সহ ২৭ জন শিক্ষক কর্মচারী বসে আছে কর্মবিরতীতে। প্রধান শিক্ষকের অপসারনের দাবিতে চলতি মাসের ১৭ তারিখ থেকে এ কর্মবিরতী চলছে বলে শিক্ষকরা জানান। আন্দোলনকারী ব্যবসা প্রশাসন বিষয়ের শিক্ষক রমজান আলী জানান দীর্ঘদিন যাবৎ প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারীদের উপর বিভিন্ন নির্যাতন চালিয়ে আসছে।
প্রধান শিক্ষক কয়েকজন শিক্ষকের নামে নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করেন। এরপর তিনি একজন কর্মচারীকে পিটিয়ে হাসাপাতালে পাঠান। এসব কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নষ্ট হতে চলেছে। প্রধান শিক্ষক দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দার স্কুলে থাকলে তারা আর শ্রেণী কক্ষে ফিরবেন না। কোন পরীক্ষায় অংশ নিবেন না পরীক্ষার খাতাও মূল্যায়ন করবেন না তারা। স্কুলের ২৭জন শিক্ষক কর্মচারী একসাথে এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান।
নবম ও দশম শ্রেনীর বাংলা বিষয়ের শিক্ষিকা সুচরিতা রানী জানান তাদের এক দফার এক দাবী প্রধান শিক্ষক অপসারন না হওয়া পর্যন্ত তারা আর পরীক্ষা সহ কোন কর্যক্রমে অংশ নিবেননা। কর্মচারী আবুল কালাম জানান প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অফিসের কোন কাজে অংশ নিবেন না তারা। বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক আলী নুর সহ অধিকাংশ শিক্ষকের একই দাবি বলে তারা জানান। শিক্ষকরা জানান প্রতি ১৬জন পরীক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক বরাদ্দ থাকার কথা পরীক্ষার রুমে।
মো: বশির উদ্দিন ল্যাব এসিসটেন্ট। তিনি একটি কক্ষে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার রুমে ৪৮জন নবম, সপ্তম ও ৬ষ্ঠ শ্রেনীর পরীক্ষার্থী। তিনি জানান এর আগে তাকে এ দায়িত্ব পালন করতে হয়নি। শিক্ষকরা কর্মবিরতীতে তাই তিনি পরীক্ষার ডিউটি করছেন।
পরীক্ষার মধ্যে শিক্ষকদের কর্মবিরতি নিয়ে প্রধান শিক্ষক দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দার বলেন, কয়েকজন শিক্ষক বে-আইনি ভাবে কর্মবিরতি পালন করছে। এ কারনে তিনি পরীক্ষার কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তার পরীক্ষা নিতে কোন সমস্যা হচ্ছে না বলে জানান। পরীক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে তাদের এ কাজ করা ঠিক হচ্ছে না। তিনি বিষয়টি স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে জানিয়েছেন। তার বিরদ্ধে শিক্ষকদের যে অভিযোগ ছিল তা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এর বাইরে যদি তাদের কোন অভিযোগ থাকে তবে তারা সেটা সভাপতিকে জানাতে পারেন। কোন কর্মচারীকে মারপিঠের ঘটনাটি তিনি অস্বিকার করেন। পরীক্ষার সময় শিক্ষদের অসহযোগীতার বিষয়টি তিনি সব মহলকে অবহিত করেছেন।
পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ব্যাপারে তিনি বলেন সব শাখার শিক্ষক তো কর্মবিরতী পালন করছে না অন্য শাখার শিক্ষক দিয়ে তিনি খাতা মূল্যায়ন করবেন বলে জানান। তিনি আরো জানান কর্মবিরতির বিষয়ে শিক্ষকদের স্বাক্ষরিত যে তালিকা তারা বিভিন্ন যায়গায় প্রেরণ করেছেন তার মধ্যে শিক্ষক সঞ্জয় কুমার সহ অনেকের স্বাক্ষর জাল বলে তিনি দাবি করেন।
শৈলকুপা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি তৈয়বুর রহমান খান বলেন দীর্ঘদিন ধরে সাধারন শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। কিছুদিন আগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার কাছে এক কর্মচারীকে মারার অভিযোগ আসে। তিনি তাকে বলেন বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। এরপর তারা থানায় একটি অভিযোগ দেয়। থানায় অভিযোগটি গ্রহন হয়েছে কিনা জানিনা। তিনি আরো জানান সমস্যা নিরসনে পরীক্ষার আগে তিনি উভয় পক্ষকে মাননীয় সংসদ সদস্যেও বাসায় ডেকেছিলেন কিন্ত একটি পক্ষ আসেননি। পরীক্ষার মধ্যে কর্মবিরতী খুবই দু:খজনক ঘটনা। তিনি বিষয়টি সবাইকে জানিয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সাধারন শিক্ষকদের যে দাবি তা আইনের বিষয়। এ ব্যাপারে তার কিছু করার নেই। তিনি আন্দোলনরত শিক্ষকদের একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরে এসে আলোচনার মধ্যেমে সমস্যা সমাধানের আহবান জানান।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.