ঝিনাইদহে এখনও বিয়েতে গ্রামবাংলার মানুষ আনন্দে কাঁদা খেড় করেন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ

কাঁদা খ্যাইড় একটি গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। গ্রামাঞ্চল থেকে এই আনন্দঘন খেলা বিলীন হতে চলেছ। ঘরের এক কোনায় লুকিয়ে আছেন নানা তাইজুদ্দিন শেখ, নাতিন বৃষ্টি খাতুন খুজে পাগলপ্রায়। বাড়ির মধ্যে তখন চলছে মেয়ের গোসল করানো (গাঁ-ধোয়ানো) শেষে কাঁদা-মাটির খেলা। হঠাৎ নাতিন বৃষ্টি (বড় মেয়ের কন্য) চোখে পড়ে নানা ঘরের কোনায়।

 

ধরে এনে নানার সমস্ত শরীরে কাঁদা ছিটিয়ে দেন।  বৃদ্ধ নানাও কম নয়। তিনি নিজেকে বাঁচাতে আর চেষ্টা না করে এবার শুরু করেন অন্যদের মতোই এই কাঁদা-মাটি খেলা। এক পর্যায় গোটা বিয়ে বাড়ি আনন্দময় হয়ে ওঠে।

 

কনের বাড়ি সহ পাশ^বর্তী বাড়িগুলোর নারী-পুরুষ সবাই অংশ নেন এই আনন্দে। প্রায় দুই ঘন্টা চলে কাঁদা-মাটি মেখে করা আনন্দ। মাইকে গানের সুরে সুরে চলা এই আনন্দ চলবে আরো এক সপ্তাহ। ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব।

 

সকলে মিলে খির খাওয়া চলে শরীরে কাঁদা লেগে থাকা অবস্থায়। কনে তানজিলা খাতুন বিয়ের পিড়িতে বসার আগ পর্যন্ত প্রতিবেশিদের এই আনন্দ আজো মনে করিয়ে দেয় গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যপূর্ণ বিয়ে বাড়ির সব আনন্দের কথা।

 

তানজিলা খাতুন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের তাইজুদ্দিন শেখের কন্যা। আগামী ২৩ জানুয়ারি তার বিয়ে। বিয়ে ঠিক হয়েছে একই উপজেলার ধননঞ্জয়পুর গ্রামের ইয়াসিন আলীর সঙ্গে। এই বিয়ে উপলক্ষ্যে এক সপ্তাহ অর্থাৎ ১৭ জানুয়ারি থেকে চলছে মেয়ের গোসাল করানো পর্ব।

 

গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে দেখা যায় গোটা বিয়ে বাড়িতে অন্যরকম আনন্দ চলছে। কাঁদা-মাটি আর রং মেখে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছে। কারো কোনো কষ্ট নেই। তবে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা আছে। আর প্রতিপক্ষের চিন্তা কেউ যেন পার পেয়ে না যান।

 

এই অবস্থা দেখে মেয়ের ভাই ইয়াসিন আলীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, তারা দুই ভাই দুই বোন। তানজিলা সবার ছোট। তার বিয়েতে গোটা মহল্লার মানুষ আনন্দে মেতেছে।

 

প্রতিদিন মেয়ের গোসল করানো হচ্ছে। আর এই গোসলকে কেন্দ্র করে চললে কাঁদা-মাটি আর রং খেলা। এরপর খাওয়ানো হচ্ছে আনন্দে অংশ নেওয়া সবাইকে। রাতে বিয়ে বাড়িতে চলছে গানের অনুষ্ঠান। যে অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন বাড়ির সকলেই। গান না জানা ব্যক্তিটিও বাদ পড়ছে না কন্ঠ দিতে।

 

তিনি আরো জানান, এটা গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। এটাকে তারা প্রকৃত আনন্দ মনে করেন। যা আজ সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা গ্রামের মানুষ আজো এইসব আনন্দ ধরে রেখেছেন। প্রতিবেশি ইমদাদুল হক জানান, এই আনন্দে তারাও অংশ নিচ্ছেন। গাঁধোয়ানো, খির খাওয়ানো আর রাতে গান-বাজনা হচ্ছে গ্রামবাংলার বিয়ে বাড়ির একটা ঐতিহ্য। শহর থেকে এগুলো হারিয়ে গেলেও আজো তারা ধরে রেখেছেন।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.