ঝলমলে বাড়িটি এখন নিস্তব্ধ
সোয়েব সাঈদ
বেগম রওশন সরওয়ার আলম চৌধুরী। তিনি কেবল রত্নাগর্ভা মা নন, একজন সফল সমাজসেবকও। তিনি সমাজের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন নীরবে। ব্যক্তি জীবনে সফল এ মহিয়সী নারীর মৃত্যুর সংবাদে কেবল রাজনৈতিক, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অঙ্গন নেমে আসে শোকের ছায়া। অঝরে কেঁদেছেন পাড়া-প্রতিবেশীসহ সর্বস্তুরের নারী-পুরুষ।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সাংসদ ও রাষ্ট্রদুত মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর সহধর্মিনী হলেও তিনি মানুষের মাঝে স্থান করে নিয়েছিলেন আপন মহিমায়। নিজের ৩ ছেলে, ৪ মেয়েকে সফল মানুষ হিসেবে গড়া তোলার পাশাপাশি তিনি এলাকার অসহায়-গরীব মানুষেরও সেবা করে গেছেন।
মৃত্যুর খবরে রামুর মন্ডলপাড়ার ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর দ্বিতল বাড়িটির চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে মানুষের কান্নার রোল। কান্নাজড়িত কন্ঠেই অনেকে জানালেন, একসময় এলাকার অনেক মানুষের দিন যেত অনাহারে-অর্ধাহারে। রওশন সরওয়ার আলম চৌধুরীই সেসব অভাবগ্রস্ত মানুষের পাশে সহায়তার হাত প্রসারিত করতেন।
বড় ছেলে রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল জানান, ৭৩ বছর বয়সী মা রওশন সরওয়ার আলম চৌধুরী আজীবন সন্তান, আত্মীয়-স্বজন ও সমাজের সর্বস্তুরের মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। বাবার মৃত্যুও পর তিনি পরিবারের হাল ধরেছিলেন। পরিবারের সবাই তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ছিলো। এখন মাকে হারিয়ে পরিবারের সবাই বাঁধন ছিন্ন হলো।
মেঝ ছেলে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, ১৯৬৩ সালে বিয়ের পর থেকে মা রওশন সরওয়ার আলম চৌধুরী রামুর মন্ডলপাড়া গ্রামে বসবাস করে আসছিলেন। বিয়ের পর বাবার অনুরোধ থাকা সত্তে¡ও তিনি গ্রাম ছেড়ে চলে যাননি। বরং গ্রামের মানুষকে নিজের আপনজন করে নিয়েছিলেন।
রওশন আলম চৌধুরীর মেয়ে নাজনীন সরওয়ার কাবেরী কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সম্প্রতি তিনি ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যান। কিন্তু মায়ের শারীরিক অবস্থান অবনতি হওয়ায়র খবর পেয়ে তিনি মৃত্যুর আগে দেশে চলে আসেন।
দীর্ঘদিন চিকিৎসাধিন থাকার পর গত রবিবার (৪ ফেব্রæয়ারি) বিকাল ৪টা ৫মিনিটে চট্টগ্রাম ম্যাক্স হাসপাতালে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন রওশন সরওয়ার আলম চৌধুরী। সোমবার (৫ ফেব্রæয়ারি) বেলা ২টায় রামু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জানাযায় শরিক হন, জেলার বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবি নেতৃবৃন্দ সহ হাজার হাজার শোকার্ত জনতা।
এরআগে দুপুরে ছেলে সোহেল সরওয়ার কাজল, সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল ও তানভীর সরওয়ার রানা’র কাঁধে চড়ে বেগম রওশন সরওয়ার আলম চৌধুরীর শেষ বিদায়কালে সৃষ্টি হয় শোকাবহ পরিবেশ। মহিয়সি এ নারীর শূণ্যতা এখন সর্বত্র। যেমনিভাবে নিস্তব্ধতা নেমেছে ঝলমলে বাড়িটিতে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.