জ্বলছে রাখাইন : দাবি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা চৌকিতে এআরএসএ’র সশস্ত্র হামলার পর রাখাইন রাজ্যের অন্তত ১০টি এলাকা জ্বলছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ধারণকৃত চিত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

মানবাধিকার কর্মী এবং রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলমানদের অভিযোগ, নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করছে মিয়ানমারের সেনারা। এছাড়া আগুন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, শুক্রবার আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) ‘জঙ্গি হামলায়’ একশ জন নিহত হয়েছে। রোহিঙ্গা চরমপন্থী জঙ্গিরা সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার সময় বিভিন্ন স্থানে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। অথচ রোহিঙ্গারা আগুন ধরিয়ে দেয়ার সেই দোষ সেনাবাহিনীর ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। নির্বিচারে মানুষ হত্যার অভিযোগও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে মিয়ানমার সরকার।

rohingya

তবে সরকারের এক মুখপাত্র এ ব্যাপারে কোনো রকম মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন, সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়া এবং নির্বিচারে হত্যার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মানের স্বাধীনভাবে পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাকে ঢুকতে দেয়া উচিত মিয়ানমার সরকারের।

এইচআরডব্লিউ বলছে, একশ কিলোমিটারজুড়ে আগুন জ্বলছে। ২০১৬ সালে অতিষ্ঠ রোহিঙ্গা মুসলমানরা হামলা চালানোর পর দেড় হাজারের বেশি বাড়ি পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

এইচআরডব্লিউ’র এশিয়ার উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন এক বিবৃতিতে জানান, স্যাটেলাইটের এই তথ্য যথেষ্ট উদ্বেগের এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলো মিয়ানমার সরকারকে রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রকাশ করার জন্য শিগগিরই নোটিশ পাঠাবে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসে রোহিঙ্গা নিধনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মুখপাত্র স্টেফান দুজারিকের দেয়া বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগের বিষয়টি উঠে আসে।

rohingya

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন গুতেরেসে। ইতোমধ্যেই তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে। গত কয়েকদিনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নজর এড়িয়ে বেঁচে আসা নারী, পুরুষ ও শিশুদের অনেকেই এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

কয়েকশ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে অপেক্ষা করছেন। সোমবার বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী জোরপূর্বক ৯০ জন রোহিঙ্গা মুসলমানকে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দিয়েছে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ এবং ব্যাপক তাণ্ডবের মুখে গত বছর প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

রাখাইন রাজ্যে এআরএসএ’র সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথভাবে অভিযান চালানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।

বর্তমানে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। বাংলাদেশের কাছে এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা চরম উদ্বেগের কারণ।

সূত্র : আল জাজিরা

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.