জেলা পুলিশ নিয়ন্ত্রণে অনলাইনে বাসের টিকেট সংগ্রহ করা যাবে
কক্সবাজারে অনলাইন বাস টার্মিনাল উদ্বোধন
# পরিবহন খাত ও ট্রাফিক বিভাগে শৃঙ্খলা ফেরাতে এ উদ্যোগ
মো. নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজারঃ
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেছেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রতিদিনই দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজারো ভ্রমণপিপাসু মানুষের সমাগম ঘটে। দেশের অধিকাংশ জেলার সঙ্গে কক্সবাজারের বাস যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। কক্সবাজারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে ৯০টির অধিক পরিবহন কোম্পানির প্রায় ৮ শতাধিক বাস প্রতিদিন যাতায়াত করে। অথচ জেলা শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বাস পার্কিংয়ের ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৭০টি। তা ছাড়া বাস সার্ভিসগুলোর নিজস্ব কাউন্টার রয়েছে ২৫টির মতো। এতে অবৈধ পার্কিং, যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা, যানজট, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা, যাত্রী ও পর্যটকদের ভোগান্তির চিত্র দেখা যায়। জেলার পরিবহন খাত ও ট্রাফিক বিভাগে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশের এ উদ্যোগ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ পর্যটন নগরীতে বাস পরিবহন সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল বাস ব্যবস্থাপনার’ উদ্যোগ নিয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে- অনলাইন বাস টার্মিনাল। অনলাইন বাস টার্মিনাল নামের এই ওয়েব ঠিকানা ব্যবহার করে পর্যটকসহ যেকোনো যাত্রী দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে নিজের পছন্দমতো টিকেট সংগ্রহ নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারবেন। পাশাপাশি বাসের ফিটনেসসহ চালকদের তদারকি এবং মালিকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন, নিরাপত্তা জোরদার ও সুষ্ঠ ট্রাফিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের প্রধান সড়কের সুগন্ধা পয়েন্ট মোড়ে জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনলাইন বাস র্টামিনাল সেবার উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেল।
জানা যায়,দেশের ইতিহাসে এই প্রথম অনলাইন বাস টার্মিনাল চালু হয়েছে কক্সবাজারে। শুধুমাত্র কক্সবাজার থেকে যাওয়া যাত্রীগণ এই সুবিধা পাবেন আপাতত। নাম দেওয়া হয়েছেonline bus terminal( OBT) ”অনলাইন বাস টার্মিনাল” বা ওবিটি ।| ww w.obtcoxsbayar.com এই ওয়েব সাইটের মাধ্যমে সুবিধা পাবে যাত্রী ও পর্যটক, বাস অপারেটর,স্থানীয় সম্প্রদায়,পর্যটন শিল্প,নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ আরো অনেকেই। গুগলে গিয়ে এই নাম দিয়ে সার্চ করলেই চলে আসবে বিস্তাারিত। এই মাধ্যমে যে সকল সুবিধা যাত্রীগণ পাবেন তা হলো, সকল বাস সার্ভিসের শ্রেণিভিত্তিক তালিকা । গন্তব্য অনুযায়ী বাস সার্ভিসের তালিকা । ট্রাফিক বিভাগের তত্ত¦াবধানে প্রতিদিনের শিডিউল ও বাস পরিবহনের ব্যবস্থাপনায় থাকবে দৈনিক বাসের শিডিউল । টিকিট মূল্য, বাসের রেজি নং, গাইডের নাম্বার, বাস ছাড়ার স্থান ও গন্তব্য উল্লেখ থাকবে, সকল বাস, চালক ও গাইডের বিস্তাারিত তথ্য সংযুক্ত থাকবে। বাসের ফিটনেস ও রুট পারমিটের হালনাগাদ তথ্য। কাউন্টারে, বাসের ভিতরে ও বাহিরে থাকবে কিউ আর কোড সংযুক্ত পোস্টার। স্ক্যান করে রিভিউ ও অভিযোগ দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি অভিযোগ ও দুর্ঘটনার ডিজিটাল ডাটা ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। ডিজিটাল বোর্ডে বাসের লাইভ শিডিউল প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে যেমনটা বিমানবন্দর বা ট্রেন ষ্টেশনে রয়েছে।
এদিকে দেশ ও বিদেশীদের জন্য এক অন্যতম এলাকা হচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার । এই পর্যটন নগরীকে বিশে^র কাছে আধুনিক ও আইকনিক হিসাবে তুলে ধরতে যাতায়াত ব্যবস্থা বা পরিবহণ খাতকে আধুনিকতার বাউন্ডারিতে নিয়ে আসতে ট্রাফিক পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিনের ব্যতিক্রম এই উদ্যোগ বলে জানান পুলিশ সুপার। পর্যটন নগরী কক্সবাজার বাংলাদেশের প্রধানতম পর্যটন আকর্ষণ। প্রতিদিন সহস্র পর্যটক সমুদ্র সৈকতের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য কক্সবাজার আসেন। বিমান ও রেল পথে কিছু পর্যটক আসলেও সিংহভাগ পর্যটক বাস যোগে সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কক্সবাজার আসেন। প্রান্তিক জেলা হলেও পর্যটন স্পটের কারণে দেশের প্রায় ৪০টির অধিক জেলার সাথে কক্সবাজারের বাস যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। কক্সবাজারে ৯০টির অধিক পরিবহন কোম্পানীর প্রায় ছয় শতাধিক বাস যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু কক্সবাজারের বিদ্যমান বাস টার্মিনালের পার্কিং সক্ষমতা মাত্র ৬৮টি বাসের। তাই বাস চালকরা যত্রতত্র বাস পার্কিং করে পর্যটন এলাকায় যানজট সৃষ্টি করে। তাছাড়া ৯০টির বেশি পরিবহন কোম্পানী থাকলেও কক্সবাজার শহরে মাত্র ২২টি পরিবহন কোম্পানীর নিজস্ব টিকিট কাউন্টার রয়েছে। এই সুযোগে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠছে কমিশন কাউন্টার। তাই টিকেট, বিশ্রাম প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শ যাত্রী হয়রানির ঘটনা ঘটে। পরিবহনে যাত্রী হয়রানির ঘটনা নিয়ে যাত্রী বা পর্যটকদের অভিযোগ জানানোর নেই কোন সুনির্দিষ্ট মাধ্যম। তাই ট্রাফিক বিভাগ, জেলা পুলিশ, কক্সবাজার বাংলাদেশের প্রধানতম পর্যটন এলাকা কক্সবাজার শহরে বাস পরিবহন সংশ্লিষ্ট সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সমাধান করার উদ্দেশ্যে একটি ডিজিটাল বাস ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই ডিজিটাল উদ্যোগের নাম “অনলাইন বাস টার্মিনাল”।
ট্রাফিক বিভাগ, কক্সবাজার জেলা পুলিশের একটি উদ্যোগ যা পর্যটন এলাকায় একটি স্মার্ট, নিরাপদ এবং পর্যটন-বান্ধব বাস ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা তৈরি করবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এই অনলাইন বাস টার্মিনাল কক্সবাজারে এসি ননএসি ¯স্লিপার, ডাবল ডেকার, স্যুইট ক্লাসসহ বিভিন্ন সুবিধার গ্রীণ লাইন, এনা পরিবহণ , দেশ ট্রাভলস, লন্ডন এক্সপ্রেস থেকে শুরু করে প্রায় ৯১টি পরিবহণের ৩৫৫টি বাস এই ওয়েব সাইটে অন্তরভুক্ত রয়েছে এবং তা দেশের ৪০টি জেলার সাথে সংযুক্ত রয়েছে । কোন বাস কখন ছাড়বে,টিকেটের মূল্য, টিকেট সংগ্রহ, ট্যুরিষ্ট বাস এন্ট্রি পারমিশন, যাবতীয় তথ্য, ও বাসের সংশ্লিষ্ট একজনের নাম্বার, পুলিশের কন্ট্রাক নাম্বারসহ বিস্তারিত দেখা যাবে এই ওয়েব সাইটে। কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশ নিরাপত্তার খাতিরে এই অনলাইন বাস থেকে যারা টিকেট নিবে যাত্রীগণ ঐ বাসের ড্রাইভাবের বিস্তারিত তথ্য থেকে শুরু করে সব জানা যাবে । এমন কি যাত্রীগণ ড্রাইভার গাড়ি কেমন চালাচ্ছেন সেই বাসের যাত্রী সেবা কেমন বা কেউ কোন ধরনের হেনস্থার শিকার হয়েছে কিনা সেই মতামত দিতে পারবেন আর তা কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের ওয়েব সাইড়ে ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাগণ দেখতে পারবেন। যদি কোন গাড়ি যাত্রীদের সাথে খারাপ আচারণ করেছে তবে ট্রাফিক বিভাগ আইনগত ব্যবস্থাও নিতে পারবে।
ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন জানান, অনলাইন বাস টার্মিনাল ধারণাটি একেবারে নতুন হলেও এটা প্রচলিত বাস টার্মিনালের ডিজিটাল রূপান্তর বলা যায়। সাথে রয়েছে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে চালক ও বাস মালিকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন ও নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে যাত্রী ও পর্যটকদের ভ্রমণ যেমন নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে, একই সাথে ট্রাফিক ও বাস ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সহজ হবে।
এই অনলাইন বাস টার্মিনাল (ঙইঞ) বাস ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে বিপ্লব ঘটাবে সেইসাথে মানুষ যেভাবে বাস ভ্রমণের পরিকল্পনা ও বুকিং করে, সুবিধা, দক্ষতা এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করে আরাম, নির্ভরযোগ্যতা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলে মনে করছেন ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ।
পরে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ ফিতা কেটে ও শ্বেত কপোত উড়িয়ে ‘অনলাইন বাস টার্মিনাল’ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এই সেবার আওতায় শহরের ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা রোধ এবং যাত্রী ও পর্যটকদের ভোগান্তি লাঘব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।