জাকির খানের হত্যার খবরে আলোড়ন নিউইয়র্কে

ওয়ান নিউজ ডেক্সঃ নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত রিয়েলটর জাকির খানের হত্যাকাণ্ডের সম্পূর্ণ রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। যেই বাড়িতে জাকির খান দীর্ঘ ৯ মাস ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন, সেই বাড়ির মালিক মিশরীয় বংশোদ্ভুত মাহরান তাহাই জাকির খানের ১২ বছর বয়সী ছেলের সামনে তাকে খুন করেছেন।

পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে হত্যাকারী মাহরান তাহা বলেছেন, ‘ক্রোধের বশে আমি তাকে খুন করেছি।’

অভিযুক্ত মিশরীয় নাগরিক মাহরান তাহার বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যাকাণ্ড, কুপিয়ে হত্যা করাসহ ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

জাকির খান, একটা সময় কমিউনিটির কাছে যিনি ছিলেন রিয়েল স্টেট বা আবাসন ব্যবসার প্রতীক। ব্রঙ্কসের ‘কনডো কিং’-এর খ্যাতিও অর্জন করেছিলেন। যিনি মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতেন, সেই তাকেই আবাসন সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের জেরে প্রাণ দিতে হলো। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য ঘটনা।

জাকির খানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে নিউইয়র্কের শীর্ষস্থানীয় সবগুলো গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে নানা খবর। বেশিরভাগ খবরে, এ হত্যাকাণ্ডকে অমানবিক এবং অত্যন্ত ঘৃণ্য বলে চিত্রায়িত করা হয়েছে।

নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ সংবাদের শিরোনাম করেছে ’ব্রঙ্কসের বাড়িয়ালা তার ভাড়াটিয়ার ওপর পাগলা কুকুরের মতো আচরণ করেছে, যার ভাড়া বাকি ছিল নয় মাস’। ভিতরের খবরে স্থানীয় প্রতিবেশীর সাক্ষাৎকারে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত মাহরান তাহাকে ভদ্র মানুষ বলেই বর্ণনা করা হয়েছে। এনবিসি নিউজ শিরোনাম করেছে, পুলিশ বলছে নিউইয়র্কের একজন বাড়িওয়ালা বকেয়া ভাড়ার জন্য ভাড়াটিয়াকে কুপিয়ে মেরেছে’। নিউইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে, ভাড়া নিয়ে বিরোধের জের ধরে বাড়িওয়ালা কুপিয়েছে ভাড়াটিয়াকে। ১২ বছরের সন্তানের সামনেই মৃত্যু হয়েছে বাবার-এটা জঘন্য একটি হত্যাকাণ্ড। এর বাইরে এবিসি সেভেন, এ এম নিউইয়র্কসহ সবগুলো সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এ খবর। যেখানে বলা হয়েছে ৯ মাস ধরে বাড়ি ভাড়া পাচ্ছিলেন না মিশরীয় নাগরিক মাহরান তাহা। বাড়ির বিরোধ নিষ্পত্তিতে আদালতে মামলা চলছিল যেটাতে মাত্র ১ দিন আগে হাজিরা দিয়ে এসেছেন জাকির খান। আগামী মার্চ মাসের ২৫ তারিখে আবার কোটে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। তার আগেই ঘটে গেল এ ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড। হত্যার দায় স্বীকার মাহরান তাহার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড এবং কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনগুলোয়।

অবশ্য তার ভাই সবুর খান, সংবাদ মাধ্যমকে এ প্রচারণার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জানিয়েছে, এর বাইরে অন্য কারণ থাকতে পারে। ‘দেখুন, সে বাড়ি কেনা বেচার ব্যবসা করতো। সবাই জানে তার কাছে এক দু্ই মিলিয়ন টাকা হাতের ময়লা। সে ভাড়া না দিয়ে থাকবে শুধু আর্থিক কারণে সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়’ সিবিএস নিউজ নিউইয়র্ককে বলছিলেন সবুর খান।

অবশ্য অন্যান্য গণমাধ্যমের টিভি প্রতিবেদনে যে এলাকায় খুন হয়েছেন জাকির খান সেখানকার স্থানীয় বেশ কজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিবেদকেরা। যেখানে হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত মিশরীয় নাগরিক মাহরান তাহাকে ভালো মানুষ হিসেবেই বর্ণনা করেছেন অনেকেই।

‘হয়তো এমন কিছু হয়েছিল যে সে আর তার রাগ সংবরণ করতে পারেনি, এটা একটা ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড। বিশষত তার সন্তান দেখেছে কেউ একজন তার বাবাকে কোপাচ্ছে, কি বর্বর’ বলছিলেন এনেস্তা চিকারম নামের এক প্রতিবেশী।

যে রিয়েলটর বা বাড়ি বেচা কেনার প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ছিলেন জাকির খান, সেখানে তার বসবাসের ওই ১০০১ নম্বর বাড়িটি জাকির খানেই অধীনে দেখানো আছে। ৯ মাস আগে এ বাড়িটি মোটা দামে বিক্রি করে দেওয়ার কথা জানিয়ে ওই বাড়িটিতে ওঠেন জাকির খান। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে ভাড়া দেওয়া এমন কি বাড়ি কেনার কথা বললেও কোনো রকম টাকা পয়সা না দিয়ে বসবাস করতে থাকায় বাড়ির মালিকানা নিয়ে শঙ্কায় পড়েন মাহরান। এমনকি তার তিন মেয়ে মূল বাড়ির মধ্যে বসবাস না করে মাটির নিচে বা বেজমেন্টে বসবাস করছিলেন বাধ্য হয়ে এমন অভিযোগ করা হয়েছে কারো কারো তরফে।

জাকির খানের হত্যাকাণ্ডে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে শোক আর ক্ষোভ উভয় প্রতীয়মান হয়েছে। পরিচিত মুখ জাকির খানের হত্যাকাণ্ডের পেছনে যত কারণই থাকুক, শুধু ভাড়া পরিশোধ করা হয়নি বলে এমন বর্বরতা মেনে নেওয়া যায় না বলেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই। সদ্য হাস্যোজ্জ্বল, বিনয়ী, কমিউনিটির নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে সামনের সারির মানুষ জাকির খানের মৃত্যুকে একটি অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবেই বর্ণনা করেছেন অনেকেই। শুক্রবার বাদ জুমা জাকির খানের জানাজা অুনষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে পারিবারিক সূত্রে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.