নিজস্ব প্রতিবেদক:
টেকসই অর্থনীতির জন্য জলবায়ু অর্থায়নে জাতীয় বাজেটে জিডিপির ২ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দাবি করেছে নাগরিক সমাজ।
রবিবার (১৯ জুন) ২০২২-২৩ অর্থ-বছরের জাতীয় বাজেটের উপর আয়োজিত সেমিনারে এ দাবির কথা উত্থাপিত হয়েছে।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সংসদ সদস্য ও বিশেষজ্ঞগন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে জিডিপি’র (মোট আভ্যন্তরীন জাতীয় উৎপাদন) কমপক্ষে দুই শতাংশ অর্থ প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবি করেন বক্তারা।
এ ছাড়াও জলবায়ু সক্ষমতা অর্জনে উপকূলীয় সুরক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নকে সরকারের অগ্রাধিকার বিনিয়োগ খাত হিসাবে বিবেচনা করার জন্যও তারা সরকারের কাছে সুপারিশ করেন।
“জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ঃ টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়নের প্রেক্ষাপট” শীর্ষক সেমিনারটি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে যৌথভাবে আয়োজন করে কোস্ট ফাউন্ডেশন, সিপিআরডি (সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এবং সিডিপি (কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশীপ)।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভূ এমপি।
সেমিনারে আরও বক্তব্য প্রদান করেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মোঃ শামসুদ্দোহা, বিএনএনআরসি’র প্রধান নির্বাহী এএইচএম বজলুর রহমান, সিএরআরএল’র প্রদীপ কুমার রায়, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সুজাউল ইসলাম, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের ড. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদসহ আরও অনেকে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক সৈয়দ আমিনুল হক।
আমিনুল হক বলেন, ২০২২-২৩ জাতীয় বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিতান্তই অপ্রতুল। বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ৩০,৫৩১ কোটি টাকার বরাদ্দ খুবই গতানুগতিক এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সরকারের প্রণীত পরিকল্পনার লক্ষ্যসমুহ অর্জনে তা সক্ষম নয়। তিনি আরও বলেন, সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলার উদ্দেশ্যে ডেল্টা প্লান-২১০০, এনডিসি ২০৩০ এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ-২০৫০) প্রণয়ন করেছে যেগুলোর বাস্তবায়নে প্রতি বছর কমপক্ষে ৯৮,১০০ কোটি টাকা বা জিডিপি’র ২.২০ শতাংশ অর্থ প্রয়োজন। বিপরীতে সরকার প্রতি বছর জলবায়ু অর্থায়নে বরাদ্দ দিচ্ছে জিডিপি’র ১.০০ শতাংশেরও অনেক কম এবং চলতি বছর এই বরাদ্দ মাত্র ০.৬৯ শতাংশ।
তিনি মূল আলোচনায় চারটি সুনিদৃষ্ট দাবি উত্থাপন করেন- (১). জলবায়ু অর্থায়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জিডিপির কমপক্ষে ০২ শতাংশ বরাদ্দ ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে (২) উপকূল সুরক্ষা ও বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রমকে সরকারের অগ্রাধিকার বিনিয়োগ খাত হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে (৩) শুধু বাঁধ নির্মাণের জন্য পৃথকভাবে ১০০০০-১২০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে এবং (৪) জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় দারিদ্র-বান্ধব উন্নয়ন যেমন কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুসারে হতে হবে।
ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভূ এমপি বলেন, জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ এবং সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সামগ্রীক দৃষ্টিকোন থেকে এই খাতে বরাদ্দ আরো বাড়ানো উচিৎ। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো উপকূল উন্নবিষয়ক বিষয়ক পৃথক মন্ত্রণালয় বা বোর্ডের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন।
শরীফ জামিল বলেন, বাজেটের মাধ্যমে কিছু পুঁজিবাদী মানুষের উন্নতি ঘটুক তা কাম্য নয়। পরিবেশকে বিবেচনায় না নিয়ে টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, সরকারকে সার্বিকভাবে একটি টেকসই ব্যবস্থার কথা চিন্তা করতে হবে যা হবে অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি পরিকল্পনা।
বজলুর রহমান বলেন, পূর্ব উপকূল, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল এবং মধ্য উপকূলের মানুষের সমস্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট ভিন্ন। তাই সে অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তিনি উপকূলের বিপদাপন্ন নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলায় বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানান।
মোঃ সামসুদ্দোহা বলেন, ধ্বংসাত্মক উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো দেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নেতিবাচক প্রভাবের ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। আমরা ইতোমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু নেতিবাচক দৃষ্টান্ত লক্ষ্য করেছি। তাই সরকারের উচিৎ হবে এই উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলোর ব্যাপারে নতুন করে ভেবে দেখা। তিনি জলবায়ু বিপদাপন্ন অঞ্চলগুলোর মানুষের প্রকৃত চাহিদার ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা পুনরায় পর্যালোচনা করার দাবী জানান।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ডেল্টা “প্লান ২১০০” খুবই অর্থবহ কিন্তু এর জন্য বরাদ্দ নিতান্তই অপ্রতুল। তিনি আরো বলেন যে এবং স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু তহবিল প্রকল্পের ব্যয়ের উপর যথাযথ মনিটরিং আরো বৃদ্ধি করা উচিৎ। বৈশ্বিক পর্যায়ে আরো অধিক তহবিল পেতে ও জলবায়ু তাড়িত সংকট মোকাবেলা করতে সরকারকে তার প্রাতিষ্ঠানিগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে, দুর্নীতি থেকে পূর্ণভাবে উঠে আসতে হবে ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের দক্ষতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:৩১
পরের খবর
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.