জলকেলীতে রাখাইনদের মাঝে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস
১৭ এপ্রিল, মঙ্গলবার, দুপুর ৪ টা। নানা রং-এ নিজেদের রাঙ্গিয়ে কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধ মন্দির সড়কে তপ্ত রৌদ্রে দাঁড়িয়ে আছে রাখাইন সম্প্রদায়ের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকল বয়সের নর-নারী। সবারই একটি মাত্র লক্ষ্য সাংগ্রাই পোয়ে অর্থ্যাৎ জলকেলী উৎসবের মাধ্যমে একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর মধ্য দিয়ে পুরনো দিনের সকল গ্লানি-দুঃখ-বেদনা ধুয়ে মুছে নতুন বছরে পর্দাপন করা। কিন্তু বিকেল ৫টা না গড়াতেই প্রকৃতির নির্মম পরিহাস থেমে থেমে বাতাস আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বৃষ্টির ফোটা। এরপরও থামাতে পারেনি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি রাখাইন সম্প্রদায়ের জলকেলী অর্থ্যাৎ পানিখেলাকে। বরাবরের মতই আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা একে অপরের গায়ে জল ছিটিয়ে সুখী-স্বাচ্ছন্দময় আর সম্ভাবনার রাখাইন বর্ষ ১৩৮০ কে বরণ করে নিয়েছে উৎসাহ-উদ্দিপনা আর আনন্দের মধ্যে দিয়ে। ১৭ এপ্রিল দুপুরে কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধ মন্দির সড়কে রাখাইন ডেভলাপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আরডিএফ)’র আয়োজনে সাংগ্রাই পোয়ে উৎসবের উদ্বোধন করতে তাই ফুটে উঠলো সবার কণ্ঠে। এদিকে সাংগ্রাই পোয়ে উৎসবকে সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে শহরের বৌদ্ধ মন্দির সড়কস্থ (মগ পুকুর) প্রাঙ্গনে জলকেলী উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ট্যুরিষ্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান। এসময় আরডিএফের পরিচালক অধ্যক্ষ ক্যথিংঅংসহ রাখাইন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে রাখাইন সম্প্রদায়ের জলকেলী উৎসবকে সামনে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে রাখাইন পল্লীগুলোকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। চলছে জমকালো অনুষ্ঠানমালা। রাখাইনদের সর্ববৃহৎ এ সামাজিক উৎসব দেখতে কক্সবাজারে পর্দাপন করেছে দেশী-বিদেশী অনেক পর্যটক। শুধু পর্যটক নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বারতাকে সামনে রেখে রাখাইন সম্প্রদায়ের উৎসবে যোগ দিয়েছে হিন্দু-মুসলিম-খ্রীষ্টান সকল সম্প্রদায়ের লোকজন। ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ উৎসব চলবে আগামী ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত। এই তিন দিন রাখাইন সম্প্রদায়ের নর-নারীরা মেতে থাকবে আনন্দ উৎসবে। বৌদ্ধ মন্দির সড়কে আরডিএফ’র আয়োজনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর পরই শুরু হয়ে যায় রাখাইন সম্প্রদায়ের নর-নারীদের বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দের জোয়ার। শহরের বিভিন্ন রাখাইন পল্লী ঘুরে দেখা গেছে রাখাইন সম্প্রদায়ের নর-নারীরা মেতে উঠেছে জলকেলী উৎসবে। তারা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর মধ্যে দিয়ে পুরনো দিনের সকল ব্যাথা, বেদনা, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। রাখাইন তরুন-তরুনীরা নতুন ও আকর্ষণীয় পোষাক পরিধান করে সেজেগুজে রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং রাখাইন পল্লীতে তৈরি করা জলকেলী উৎসবের প্যান্ডেলে গিয়ে একে অপরকে পানি নিক্ষেপ করে আনন্দ প্রকাশ করছে। পাশাপাশি চলছে নানা রকমের নাচ-গানের আসর। ঢাক-ঢোল আর কাঁসার তালে তালে নেচে আনন্দ প্রকাশ করছে সবাই।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.