জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আর নেই

ওয়ান নিউজ বিনোদন ডেক্সঃ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে স্কয়ার হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। হাসপাতালের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এলআরবির সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ গণমাধ্যমকে জানান, আইয়ুব বাচ্চু বাসাতেই মারা গেছেন। পরে তড়িঘড়ি করে এবিকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তাররা তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। অক্টোবরের ১৬ তারিখেও রংপুরে একটি গানের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন এলআরবি ব্যান্ডের জনপ্রিয় এই ভোকাল। সংগীত জীবনের দীর্ঘ চার দশকে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান তিনি উপহার দিয়েছেন।
১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে সংগীতজগতে প্রবেশ করেন আইয়ুব বাচ্চু। শ্রোতা-ভক্তদের কাছে এবি নামেও পরিচিত তিনি।তার ডাক নাম রবিন। মূলত রক ঘরানার কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক গান ও লোকগীতি দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন তিনি।তার কণ্ঠ দেয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’। গানটির কথা লিখেছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী।


১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে তিনি সোলস ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত রক্তগোলাপ আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি তেমন একটা সাফল্য পায়নি। আইয়ুব বাচ্চুর সফলতার শুরু তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ময়না (১৯৮৮) এর মাধ্যমে।
১৯৯১ সালে বাচ্চু এলআরবি ব্যান্ড গঠন করেন তিনি। এই ব্যান্ডের সাথে তার প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম এলআরবি প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরে ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ ও ‘তবুও’ বের হয়। সুখ অ্যালবামের ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’ উল্লেখযোগ্য গান।


‘চলো বদলে যাই’ সঙ্গীত জগতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। গানটির কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন আইয়ুব বাচ্চু নিজেই। ১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম কষ্ট। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অবিহিত কড়া হয় এটিকে। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ও ‘আমিও মানুষ’। একই বছর তার চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ঘুমন্ত শহরে প্রকাশিত হয়। তিনি অনেক বাংলা ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ বাংলা ছবির অন্যতম একটি জনপ্রিয় গান। এটি তার গাওয়া প্রথম চলচ্চিত্রের গান।


২০০৯ সালে তার একক অ্যালবাম বলিনি কখনো প্রকাশ হয়। ২০১১ সালে এলআরবি ব্যান্ড থেকে বের করেন ব্যান্ড অ্যালবাম যুদ্ধ। এই অ্যালবামে ১০টি গান রয়েছে। ছয় বছর পর তার পরবর্তী একক অ্যালবাম জীবনের গল্প (২০১৫) বাজারে আসে। এই অ্যালবামে ১০টি গান রয়েছে। গানের কথা লিখেছেন সাজ্জাদ হোসাইন এবং সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন আইয়ুব বাচ্চু নিজে।
গিটারে তিনি সারা ভারতীয় উপমহাদেশে বিখ্যাত। জিমি হেন্ড্রিক্স এবং জো স্যাট্রিয়ানীর বাজনায় তিনি দারুনভাবে অণুপ্রাণিত। আইয়ুব বাচ্চুর নিজের একটি স্টুডিও আছে। ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত এই মিউজিক স্টুডিওটির নাম এবি কিচেন। তিনি ২০১০ সালে ঈদের জন্য নির্মিত ট্রাফিক সিগন্যাল ও হলুদ বাতি শিরোনামের নাটকে অভিনয় করেন।


২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর বাচ্চু ফুসফুসে পানি জমার কারণে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি সুস্থ হন।
২০১৪ সালের ১৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘বিসিবি সেলিব্রেশন কনসার্ট’-এ অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন নিয়ে মাইলস ব্যান্ডের হামিন আহমেদের সাথে বাচ্চুর বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই দ্বন্দ্বের সূত্রে বাচ্চু ও তার ব্যান্ড এলআরবি বাংলাদেশ ব্যান্ড মিউজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বামবা) সদস্যপদ প্রত্যাহার করে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.