ছায়ানীড়ের জঙ্গিরা কথা বলত না কারো সাথে

চট্রগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ‘ছায়ানীড়’ ভবনের জঙ্গিরা আড়াইমাস আগে বাসা ভাড়া নিয়েছিল। তারা এলাকার কারো সঙ্গে কথা বলত না। এমনকি ভবনটির অন্য বাসিন্দাদের সাথেও কোনো কথা বলত না। বৃহস্পতিবার সকালে ভবনটিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচালিত অপারেশান ‘এসল্ট-১৬’তে এক নারীসহ চার জঙ্গি নিহত হয়।

বুধবার বিকেলে সন্দেহভাজন জঙ্গি ধরতে ওই ভবনটিতে অভিযানে নামে পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আস্তানা থেকে গ্রেনেড ছুড়ে মারে জঙ্গিরা। এ সময় পাল্টা গুলি ছোড়ে পুলিশ। পরে সেখানে র‌্যাব ও সোয়াট টিমের সদস্যরা উপস্থিত হয়। রাতভর তারা ভবনটি ঘিরে রাখে। ভোরে শুরু হয় অভিযান ‘এসল্ট-১৬’।

অভিযানকালে ভবনটির অন্য ফ্লাটের বাসিন্দারা আটকা পড়ে। ২০ ঘণ্টা পর তাদের উদ্ধার করা হয়।

অভিযান শেষে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুর রহমান জানান, জঙ্গিরা ভবনের বাসিন্দাদের জিম্মি করেনি। ভবন থেকে  ২০ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

ভবন থেকে উদ্ধার হওয়া শাহদাত হোসেন জানিয়েছেন, এই ২০ ঘন্টায় জঙ্গিদের সাথে আমাদের কোন দেখা হয়নি,  আমরা বাসার দরজা বন্ধ করে রেখেছিলাম, তারা আমাদের বাসার দরজায়ও টোকা দেয়নি। আমরা প্রথমে বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বের হতে নিষেধ করে। পুলিশের নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত ভেতরে অপেক্ষা করি।

ছায়ানীড় থেকে উদ্ধার হওয়া বাসিন্দাছায়ানীড় থেকে উদ্ধার হওয়া বাসিন্দা

একই ভবনের অন্য বাসার বাসিন্দা শান্তা বেগম বলেন,  জঙ্গিরা আমাদের কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করেনি।  অভিযানের শেষে দিকে ফায়ার বিগ্রেডের কর্মীরা জানালার গ্রিল কেটে বাসিন্দাদের উদ্ধার করেন।

এর আগে, বুধবার বিকেল ৩টায় সীতাকুণ্ডের নামার বাজারের সাধন কুটিরের নীচতলা ভবনের বাসিন্দা শিশু সন্তানসহ এক দম্পতিকে আটক করে এলাকাবাসী। এই দম্পতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এক কিলোমিটার দূরের প্রেমতলার ‘ছায়ানীড়’ ভবনে পুলিশ ঢোকার চেষ্টা করলে ভবনের ভেতর থেকে গ্রেনেড মারা হয়। এরপরই ওই ভবনটিকে ঘিরে ফেলে অতিরিক্ত পুলিশ, বিশেষ ইউনিট সোয়াট।

এরপর বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় মাইকে পুলিশ জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। কিন্তু জঙ্গিরা আত্মসমর্পণের বদলে ভেতর থেকে গ্রেনেড ছুড়ে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় শুরু হয় অপারেশন ‘এসল্ট-১৬’ এর মূলপর্ব। জঙ্গিদের সঙ্গে সোয়াটের গোলাগুলির এক পর্যায়ে বিকট শব্দের বিস্ফোরণে উড়ে যায় ভবনের সিঁড়ি ঘরের টিনের চালা। এসময় গুরুতর আহত হন সোয়াটের দুই সদস্য। এরপরই গোলাগুলি থেমে গেলে ভবনের বাসিন্দা ৬ পরিবারের ২০ সদস্যকে উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, ঘটনাস্থলে চারজনের মৃতদেহ শনাক্ত করা গেছে, যার মধ্যে একজন নারী। নিহতরা সবাই নব্য জেএমবির সদস্য। ভবনটির ভেতর থেকে বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়া গেছে। মূল অপারেশন শেষ হয়েছে।

সীতাকুণ্ড এলাকায় বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত বিদেশিদের টার্গেট করেই জঙ্গিরা নাশকতার পরিকল্পনা করছিল বলে তিনি ধারণা করছেন।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.