চট্টগ্রামে সহকর্মীর জামিন না হওয়ায় আদালত ভাংচুরে আইনজীবীরা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামে মানব পাচার আইনে করা একটি মামলায় গ্রেফতার হওয়া এক আইনজীবী ও তাঁর স্ত্রীর জামিন আবেদন বুধবার বিকেলে নামঞ্জুর করা হলেও সন্ধ্যায় তা মঞ্জুর করেছেন আদালত। প্রথমে জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা এজলাসে ভাঙচুর, মামলার নথি তছনছ ও বিচারকের খাসকামরার বাইরের জানালার কাচ ভাঙচুর করেন।

আইনজীবীরা দুই ঘণ্টাব্যাপী চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সামনে স্লোগান দিয়ে দুজনের জামিন চেয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ এলেও আইনজীবীদের বাধার মুখে ফিরে যায়। চট্টগ্রাম আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া জানান, মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে বাংলাদেশ বিমানে করে সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করতে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরের অভিবাসন পুলিশ ফজলুল কাদের ও আক্তার বানু নামের দুই যাত্রীকে আটক করেন। তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও পরিচয় গোপন করে ওমরাহ করতে যাচ্ছিলেন। আক্তার বানুর প্রকৃত নাম রেজিয়া আক্তার। দালালদের সহায়তায় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে ওমরাহের নামে সৌদি আরব যাচ্ছিলেন। এ ঘটনায় বিমানবন্দরের অভিবাসন শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম দুজনকে আসামি করে মানব পাচার আইনে রাতে থানায় মামলা করেন। অপর দিকে দুই আসামিকে বিমানবন্দরে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন আইনজীবী জামাল ও তাঁর স্ত্রী। রাতে র‍্যাব তাঁদের দুজনকে গ্রেফতার করে পতেঙ্গা থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ফজলুল ও আক্তার বানু স্বীকার করেছেন, আইনজীবী জামাল ও তাঁর স্ত্রী দালালের মাধ্যমে তাঁদের সৌদি আরবে পাঠাচ্ছেন। তাঁদের কাছে ওই আইনজীবীর ভিজিটিং কার্ডও পাওয়া গেছে। এ জন্য এই ঘটনায় গ্রেফতার চারজনকে আদালতে পাঠিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়।

আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী জামাল হোসেন বলেন, তাঁর এক আত্মীয় বিদেশে চলে যাওয়ায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। গ্রেফতার দুজনকে তিনি চেনেন না। এ ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী জানান, অভিবাসন পুলিশের করা মামলার এজাহারে আইনজীবী জামাল ও তাঁর স্ত্রীর নাম নেই। র‍্যাব তাঁদের ধরে পতেঙ্গা থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। দুই আসামির মিথ্যা স্বীকারোক্তিতে পুলিশ তাঁদের এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে। এ জন্য তাঁদের নির্দোষ দাবি করে প্রতিদিন হাজিরার শর্তে জামিন দিতে অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সাহাদাত হোসেন ভূঁইয়ার আদালতে প্রায় ১০০ আইনজীবী দাঁড়িয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানিতে বলা হয়, সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে পুলিশ আইনজীবী ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে। অপরাধ আমলে না নেওয়ার আগ পর্যন্ত আদালত চাইলে জামিন দিতে পারেন। জামিনে গেলে আসামি পলাতক হবেন না। কিন্তু আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে এজলাস থেকে নেমে যান।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিকেল সাড়ে চারটায় জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পরপরই বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা এজলাসে বিচারকের আসনের পেছনের কাচের কিছু অংশ ভাঙচুর ও টেবিলের নিচে থাকা বেশ কিছু নথি তছনছ করেন। পরে তাঁরা বাইরে এসে ওই বিচারকের খাসকামরার বাইরে জানালার কাচও ভাঙচুর করেন। এরপর প্রায় ৩০০ আইনজীবী স্লোগান দিতে থাকেন। বিকেল পাঁচটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ এলেও আইনজীবীদের বাধার মুখে ফেরত চলে যায়। ঘটনার পরপরই উপস্থিত সাংবাদিকেরা মুঠোফোনে ও চিত্র সাংবাদিকেরা কাচ ভাঙার ছবি তুলতে চাইলে আইনজীবীরা ক্যামেরা কেড়ে নেন। পরে ক্যামেরা ফেরত দেন। কয়েকজন সাংবাদিকের মুঠোফোনও ফেরত দেওয়া হয়।

পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম মো. শাহজাহান কবিরের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে আবারও ওই আইনজীবী ও তাঁর স্ত্রীর জামিনের আবেদন করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ পারভেজ শুনানি শেষে জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা চলে যান।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.