চট্টগ্রামে গ্ল্যাস্কো কারখানার শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

জে.জাহেদ,চট্টগ্রাম ব্যুরো:

গ্ল্যাস্কোযস্মিথক্লাইন বাংলাদেশ লিমিটেড কারখানার কার্যক্রম পুনরায় চালু করার দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে প্রতিষ্ঠানটির চাকরি হারানো কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় তারা কারখানার সামনে থেকে মিছিল নিয়ে এসে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে চট্টগ্রামের দিকের একপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে গত দু’মাস আগে ঢাকার একটি হোটেলে মিটিং করে চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার ফৌজদারহাট শিল্প এলাকায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক গ্ল্যাক্সো স্মিথক্লাইন বাংলাদেশ লিমিটেড কারখানার উৎপাদন বন্ধ করার পাশাপাশি কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এরপর থেকে ওই কারখানার কর্মকর্তা-শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রথমে প্রতিবাদ শুরু করে। এরপর দীর্ঘ এক মাস দিনের বেলায় অবস্থান ধর্মঘট পালন শেষে এবার মহাসড়কে নেমে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছেন।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি তপন দত্ত বলেন, গ্ল্যাক্সো বন্ধ করার অর্থ হচ্ছে এ দেশের মানুষকে মানসম্পন্ন ওষুধ সুলভে পাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়া। এছাড়া আর কোনো কারণ নেই। আমরা আগেই বলেছিলাম শান্তিপ‚র্ণ উপায়ে আন্দোলনে সুফল না এলে আমাদের রাজপথে নামা ছাড়া উপায় থাকবে না।
ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আজম বলেন, গ্ল্যাক্সোর সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরাম শাকী (পাকিস্তানি নাগরিক) দু’বছর ধরে কারখানা সরিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করেছে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় কর্মরত ইরাম শাকী কিছু বাংলাদেশিকে সাথে নিয়ে কারখানার সম্পর্কে নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়েছে গত দু’বছর ধরে। কারখানা বন্ধ করার তৎপরতা আড়াল করার জন্য কারখানায় আধুনিকায়ন ও কর্মসহায়ক পরিবেশ তৈরির নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।
কারখানা বন্ধের এই ষড়যন্ত্র কার্যকর করতে কাঁচামাল আমদানি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। উৎপাদিত অনেক ওষুধ গুদামে থাকার পরও বাজারজাত করা হয়নি।
ওই কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি গ্ল্যাক্সো স্মিথক্লাইন (জিএসকে) বাংলাদেশ লিমিটেডের কারখানা বন্ধের পেছনে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র রয়েছে। বাংলাদেশের আইন না মেনেই কারখানাটি বন্ধ করা হয়েছে তিনি দাবি করেন।
ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ওষুধ ব্যবসায় গ্ল্যাক্সো লোকসানের কথা বললেও প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছরই মুনাফা করেছে। গত দুই বছরে অবকাঠামো সংস্কার ও কর্মসহায়ক পরিবেশ তৈরির নামে নানা খাতে অপ্রয়োজনীয় খরচ করে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। ঢাকায় করপোরেট অফিসের নামেও প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।
অবকাঠামো সংস্কার, ভ্যাকুয়াম যন্ত্র সংগ্রহ, বজ্রনিরোধক দÐ বসানোর নামে অস্বাভাবিক ব্যয় দেখানো হয়েছে। তারপরও লাভজনক ছিল প্রতিষ্ঠানটি।
উল্লেখ্য, ১৯৬৩ সালে ফৌজদারহাট শিল্প এলাকায় কারখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত হয় এটি।
প্রতিষ্ঠানটির মালিকানার ৮১ দশমিক ৯৮ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ১৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ১ দশমিক ১৮ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং দশমিক ৯১ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
গত জুলাইয়ে ঢাকায় একটি হোটেলে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় লোকসানের কারণ দেখিয়ে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর থেকে সীতাকুÐের ফৌজদারহাটে কারখানায় বিক্ষোভ করে আসছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা।
কারখানায় ১৫০ জন কর্মকর্তা ও ২৫০ জন কর্মী রয়েছেন। সারা দেশে তাদের এক হাজার কর্মী রয়েছেন বলে জানা গেছে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.