চকরিয়ায় সাংবাদিকদের উপর হামলায় আসামীরা অধরা

চকরিয়া প্রতিনিধি:
জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় অনুপ্রবেশকারী যুবলীগ নেতা ও পাহাড় খেকো হাসানুল ইসলাম আদরের বিরুদ্ধে পাহাড় কেটে মাটি লোপাট ও পরিবেশ ধ্বংস করার অভিযোগে ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর গত রবিবার (১মে’২১) পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার’র ইন্সপেক্টর মাহবুবুল ইসলামের নেতৃত্বে চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে পাহাড়কাটার বিভিন্ন পয়েন্টে সরজমিন তদন্ত করতে আসেন। ওই সময় রিপোর্ট সংগ্রহ শেষে ফিরে ফেরার পথে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের গেটের সামনে হাসানুল ইসলাম আদরের পরিকল্পনায় তার ভাই হাবিবুল ইসলাম নয়নসহ ২০/২৫জনের একটি সন্ত্রাসীদল দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে তিনজন সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। মারধর করে লুট করে নিয়ে যায় ব্যবহৃত মোবাইল সেট ও পকেটে থাকা নগদ টাকা।

এ ঘটনায় ৩ মে দুপুরে নির্যাতিত সংবাকর্মী দৈনিক আমার সংবাদের চকরিয়া প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বাদি হয়ে থানায় মামলা (নং-২, জি.আর-১৭৮/২১) দায়ের করেন। এতে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী পাহাড় খেকো হাসানুল ইসলাম আদরসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১২জনসহ মোট ২২ জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলা রুজু হলেও গত ৩দিনেও পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

 

সন্ত্রাসী হামলার শিকার দৈনিক যুগান্তর চকরিয়া প্রতিনিধি মনসুর মহসিন, দৈনিক আমার সংবাদ প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ ও দৈনিক আজকের দেশ-বিদেশের প্রতিনিধি মোস্তফা কামাল অভিযোগ করে জানান, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে সমাজের অনিয়ম, পাহাড় নিধন করে পরিবেশ ধ্বংস, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ছড়াখালের উপর বেইলী ব্রীজ নির্মাণকাজে গুরুতর অনিয়ম ও দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট সাফারী পার্কের সীমানা প্রাচীর মাটি লুটের কারণে হুমকিতে পড়ার বিষয়ে বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রচার করা কি সংবাদকর্মীদের অপরাধ হতে পারে?। জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে উক্ত অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রচার করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ডুলাহাজারা ইউনিয়ন ছাত্রদল থেকে অনুপ্রবেশকারী যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদরের পরিকল্পনায় তার বড় ভাই হাবিবুল ইসলাম নয়নের নেতৃত্বে তিনজন সাংবাদিকের উপর উক্ত পরিকল্পিত হামলাটি হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রেকর্ড হলেও এদিকে কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি, অন্যদিকে হামলাকারীরা এখনো দলীয় পদে বহাল তবিয়তে রয়েছে।

তারা আরো জানান, অনুপ্রবেশকারী যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদর ২০১৭সালে অর্থের বিনিময়ে দুই মাস মেয়াদের জন্য ডুলাহাজারা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়কের পদটি বাগিয়ে নিলেও বিগত ৪ বছর ধরে রয়েছে বহাল তবিয়তে। তার পিতা মকছুদ আহমদ মেস্ত্রী ডুলাহাজারায় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন, আদরের বড় ভাই হাবিবুল ইসলাম নয়ন ইউনিয়ন ছাত্রদল সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আদরসহ তার পুরো পরিবার উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়ার অনুগত ও বিশ^স্থ পরিবার হিসেবে পরিচিত। তারা আন্দোলন সংগ্রামে জিয়ার সৈনিক এক হও, হাসিনা হটাও শ্লোগান দিয়ে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে সবসময় সরব অবস্থানে থাকতো। একইভাবে ছাত্রদল থেকে অনুপ্রবেশকারী যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদরের শ^াশুর মহিউদ্দিন মেম্বার চকরিয়া পৌরসভা বিএনপির বর্তমান উপদেষ্টা ও ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং তার (আদর) শ^াশুরী সাবেক পৌর কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম উপজেলা মহিলা দলের সাবেক সভানেত্রী ও প্রভাবশালী বিএনপি নেত্রী হিসেবে পরিচিত।

এছাড়াও মামলার অভিযুক্ত আসামী তানভীর হাসান ফাহিম ডুলাহাজারা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও অপর আসামী মোঃ আনাছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছে। তারা ছাত্রলীগের এই পদকে পূজি করে এলাকার নিরীহ লোকজনকে হয়রাণীসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত। তাদের ছায়া হিসেবে রয়েছে অনুপ্রবেশকারী যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদর। এই আদর এক সময় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের সহকারি থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখখোলে প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানাভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণী করা হত। এনিয়ে হামলার শিকার সংবাদিকরা কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের কাছে আহবান জানিয়েছেন, সাংবাদিকদের উপর হামলাকারী মামলার অভিযুক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের।

এদিকে, পেশাগত দায়িত্বপালনকালে তিনজন সাংবাদিকের উপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদসহ অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবী জানিয়ে ইতিমধ্যে চকরিয়া প্রেসক্লাবের প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ক্লাবের সভাপতি এম জাহেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এম মিজবাউল হকসহ নেতৃবৃন্দরা হামলার পরিকল্পনাকারী ও হামলাকারী আসামীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করার জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নিকট জোর দাবী জানানো হয়।

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: মারূফ আদনান জানিয়েছেন, পেশাগত দায়িত্বপালনকালে তিন সাংবাদিকের উপর হামলার বিষয়টি প্রমাণিত হলে এবং ছাত্রলীগের পদ নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সোহেল জানান, হাসানুল ইসলাম আদর কর্তৃক হামলার পরিকল্পনা, দলীয় পদবীর অপব্যবহার ও অনুপ্রবেশকারী হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত হয়েছেন বলে জানান।

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, তিন সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রত্যেক আসামীদের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.