গ্রেফতার হলেন ‘খুনি’ মীরু
ওয়ান নিউজঃ সমকালের সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুলের ঘাতক সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পৌর মেয়র হালিমুল হক মীরু গতকাল রোববার রাতে ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছেন।
রাজধানীর শ্যামলী এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর রাত ৩টার দিকে মীরুকে সিরাজগঞ্জে নেওয়া হয়। এ সময় ফরিদ নামের তার এক সহযোগীকেও গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দক্ষিণ বিভাগ ও সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ। সোমবার সকালে তাকে শাহজাদপুরে স্থাপিত বিশেষ চৌকি আদালতে হাজির করা হবে বলে জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গুলিতে আহত সাংবাদিক শিমুল মারা যাওয়ার খবর শুনেই মীরু ঢাকায় এসে আত্মগোপন করেছিলেন। তিনি সাবেক মন্ত্রীসহ একাধিক প্রভাবশালীর বাসায় আশ্রয় খুঁজছিলেন।
এদিকে, মীরু গ্রেফতারের খবর শাহজাদপুরে পৌঁছার পর সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ আনন্দ মিছিল বের করেন। শিমুলের গ্রাম মাদলা-কাকিলামারির বাসিন্দারাও রাস্তায় নেমে আসেন। তারা আনন্দ প্রকাশ করে ছুটে যান শিমুলের বাড়ি। ওই সময় নিহতের স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনের মধ্যে আবারও কান্নার রোল পড়ে; সৃষ্টি হয় আবেগঘন পরিবেশ।
সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি শিমুল নিহত হওয়ার পর থেকেই মীরুকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে আসছিল সাংবাদিক সমাজ। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমকাল পরিবার ও সাংবাদিক ইউনিয়নসহ একাধিক সংগঠন যৌথ মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে মীরুকে গ্রেফতারে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেয়। তবে বেঁধে দেওয়া সময় পার হওয়ার আগেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি পুলিশ ও সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, রাজধানীর আদাবরের একটি বাসায় আত্মগোপনে রয়েছেন হালিমুল হক মীরু। তার মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় বাসাটি শনাক্ত করা সম্ভব ছিল না। তবে আদাবর এলাকায় মীরু রয়েছেন- তা নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে তাকে ধরতে নতুন কৌশল নেওয়া হয়। আদাবর থেকে বের হওয়ার প্রতিটি সড়ক ও আশপাশের এলাকায় ছদ্মবেশে পুলিশের সদস্যরা দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রতিটি দলে এমন একজনকে রাখা হয়েছিল, যিনি মীরুকে ভালোভাবে চেনেন। রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোটরসাইকেলে মীরুকে দেখতে পান পুলিশ সদস্যরা। তিনি কোনো ছদ্মবেশ বা মুখোশ ধারণ করেননি। তাৎক্ষণিকভাবে ডিবি ও সিরাজগঞ্জের জেলা পুলিশের যৌথ দল শিমুলের ঘাতককে গ্রেফতার করে। চালক ফরিদকে গ্রেফতারের পাশাপাশি মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়। গ্রেফতারের পরপরই তাদের পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মিরাজউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মীরু জানান, মোটরসাইকেলে রাজধানীর পল্লবীতে একটি বাসায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। ওই বাসায় একজন আইনজীবীর সঙ্গে তার সাক্ষাতের জন্য সময় নির্ধারণ করা ছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে পূর্বপরিচিত ফরিদের মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন তিনি। ফরিদের গ্রামের বাড়ি নওগাঁ। তবে তার পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। আদাবরে মীরু তার এক ভাইয়ের বাসায় ছিলেন। তবে কোন সম্পর্কের ভাই, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দায়িত্বশীল অপর একটি সূত্র জানায়, মীরু ঢাকায় পালিয়ে এসে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে আশ্রয় নিতে যান। সিরাজগঞ্জের একজন সাবেক মন্ত্রীর কাছে আশ্রয় নিতে গেলেও তার বাসায় ঢুকতে পারেননি। ওই সাবেক মন্ত্রীর সঙ্গে তার আগে থেকে ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি মীরুকে বাসায় ঢুকতে দেননি। ওই সাবেক মন্ত্রী ছাড়া আরও একাধিক প্রভাবশালীর কাছে মীরু পরামর্শ নিতে গিয়েছিলেন।
ডিবির সূত্র জানায়, রোববার রাতে বাসা থেকে বের না হলে মীরুকে ধরা সহজ হতো না। তিনি ভেবেছিলেন, মোটরসাইকেলে রওনা হলে তাকে কেউ সন্দেহ করবে না। গ্রেফতার এড়াতে মরিয়া মীরু মোবাইল ফোনে যোগাযোগ না করে সশরীরে তাই আইনজীবীর কাছে যাচ্ছিলেন। জানা যায়, এর আগে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে মীরুকে গ্রেফতারে `সবুজসংকেত` দেওয়া হয়। র্যাব ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের একাধিক বৈঠকও হয়।
দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ: কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আগে শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ এক জরুরি সভায় সাংবাদিক শিমুল নিহতের ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে মেয়র মীরু ও কে এম নাসিরউদ্দিনকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, হালিমুল হক মীরু ও কে এম নাসিরউদ্দিনকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করার চিঠি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেইসঙ্গে এ দুই নেতাকে কেন দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানানোর জন্য ১৫ কার্যদিবসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.