খালেদার প্রার্থিতা রিট খারিজ, পারবে না নির্বাচনে অংশ নিতে

ওয়ান নিউজঃ  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি রিট শুনানিতে হাইকোর্টের একক বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের করা আবেদনও খারিজ করা হয়েছে।

ফলে খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিলই থাকছে। আর নির্বাচন করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

মঙ্গলবার বিচারপতি জেবিএম হাসানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

একক বেঞ্চের এই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল। আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে করা আবেদন খারিজ হওয়ায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত থেকে বেরিয়ে যান।

আদালতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ মামলায় আদালত বর্জন করায় খালেদা জিয়ার পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।

এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার রিটের বিভক্ত আদেশটি সমাধানের জন্য বিচারপতি জেবিএম হাসানের একক বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

এই আদালতে শুনানি করতে তিন দফা অনাস্থা প্রকাশ করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। গত বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় ও গতকাল সোমবার দুই দফা তারা অনাস্থা প্রকাশ করেন। আদালত প্রধান বিচারপতি বরাবর লিখিত অনাস্থা দিতে বলেন।

আজ খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা লিখিত অনাস্থা দেন। আদালতে খালেদা জিয়ার আবেদনের পক্ষে ছিলেন এজে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান ও মীর হেলাল।

আদালত তাদের এ অনাস্থা আবেদন খারিজের আদেশ দেন এবং প্রার্থিতা চেয়ে খালেদা জিয়ার রিটের ওপর শুনানি করতে বলেন।

এ পর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, আমরা এ কোর্টের ওপর অনাস্থা জানিয়েছি। আপনি আমাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এখন আমরা এই আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে যাব। তা সত্ত্বেও রিটের শুনানি করতে বলছেন কেন?

এর পর আদালত খালেদা জিয়ার রিট আবেদনের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে শুনানি করতে বলেন। মাহবুবে আলম শুনানি শুরু করতে থাকলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত বর্জন করে বেরিয়ে আসেন।

শুনানি নিয়ে আদালত খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিলের বিরুদ্ধে করা রিট আবেদন খারিজ করে দেন।

খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে তিনটি আসনের মনোনয়নপত্রই বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিলের শুনানির পর সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার তিনটি আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বে চার সদস্যের নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত দেন। শুনানিতে প্রার্থিতা বহালের পক্ষে মত দেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

এর বিপক্ষে মত দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চারজন। রিটার্নিং অফিসারের এ সিদ্ধান্ত ও নির্বাচন কমিশনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার পক্ষে রোববার তিনটি রিট করা হয়।

সোমবার শুনানি শেষে আদেশের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার পৃথক তিনটি রিটের ওপর বিভক্ত আদেশ হয়। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ইসিকে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেন।

খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। বেঞ্চের ওপর বিচারপতি মো. ইকবাল কবির এতে দ্বিমত পোষণ করেন। আদালত পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানোর আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.