খাবারের অভাবে অসহায় তিন শিশুর হাহাকার

শাহীন মাহমুদ রাসেল:

হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ায় খাবার কেনার অর্থ না থাকায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে কক্সবাজার সদরের খরুলিয়ার এতিম তিন শিশুর। যে দিন কেউ অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন সেদিন কোনো রকমে এক বেলার খাবার জোটে এই এতিম শিশুদের। সাহায্য না পেলে সেদিন শুধুমাত্র শাক খেয়ে অথবা না খেয়ে দিন পার করতে হয় তাদের। এ অবস্থা চলছে প্রায় দেড় মাস ধরে।

শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঝিলংজার ৯ নং ওয়ার্ডের মাষ্টার পাড়া গ্রামে খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী নোহা চালক সদ্য প্রয়াত নাছির উদ্দিনের বাড়ীতে গেলে এই এতিম শিশু ও স্বামীহারা সুমি আক্তারের মুখে এমন উদ্বেগের কথা শোনা যায়।

একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে অবুঝ তিন শিশু সন্তানের মুখে নিয়মিত খাবার তুলে দিতে দুশ্চিন্তায় আছেন এই নারী। তাদের নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি। ছেলে-মেয়ের ভরণ পোষণ, লেখাপড়া ও দৈনন্দিন খরচ চালিয়ে দু মুঠো ডাল ভাত মুখে তুলে দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যদিয়ে দিনাতিপাত করছেন সুমি।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০১১ সালের মার্চ মাসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সুমি-নাছির। হতদরিদ্র পরিবারের বড় মেয়ে ও তারা সম্পর্কে খালাতো ভাই-বোন হওয়ার সুবাদে অল্প বয়সে বিয়ে হয় তাদের। নাছির পেশায় ছিলেন একজন ড্রাইভার। স্বামী ছাড়া তার পরিবারে আয় রোজগার করার মত আর কেউ নেই। সুমির বৃদ্ধ বাবা বেঁচে থাকলেও বয়সের ভারে তিনি এখন আর কোন কাজকর্ম করতে পারেন না।

দাম্পত্য জীবনে ২০১২ সালে সুমির কোল জুড়ে আসে এক কন্যা সন্তান। তার নাম রাখা হয় সিদরাতুল মুনতাহা। ২০১৪ সালে আরেক ফুটফুটে ছেলে জিহাদ ও ২০১৬ সালে আরেক কন্যা আসমাউল হুসনার জন্ম হয়।

মেয়ে সিদরাতুলমুনতাহা ক্লাস টু ও
ছেলে জিহাদ বাড়ির পাশেই খরুলিয়া কেজি এন্ড প্রি ক্যাডেট স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। আর ছোট মেয়ের বয়স এখন মাত্র সাড়ে তিন বছর। স্বামী নাছির এবং এই তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুন্দর সংসার গড়ে উঠেছিল সুমির। অনেক সুখ শান্তিতে কাটছিলো তাদের জীবন। কিন্তু সেই সুখের ঘরে হঠাৎ কাল বৈশাশীর হানায় বিধ্বস্ত হয়ে যায় তাদের পরিবার।

গত (৮ জুলাই) নাছির ফজরের নামাজ শেষ করে যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। পরদিন সকালে তার সাথে থাকা নুরুল আমিন নামের এক ড্রাইভার ফোন করে জানান তার স্বামী নাছির বগুড়ায় মারা গেছেন। পরে ভালবাসার মানুষটির কফিনে মোড়ানো নিথর দেহ ফিরে পেলেও মৃত্যুর কারণ জানতে পারেনি এখনো। বাবা বাড়ী ফেরার অপেক্ষায় থাকা শিশুদের সেই স্বপ্ন সেদিন আর্তনাদের অশ্রুজলে পরিণত হয়েছে। তাঁর হঠাৎ মৃত্যুতে স্ত্রী ও সন্তানদের চোখেমুখে এখন শুধু হাহাকার।

খারারের সন্ধানে বের হয়ে ফিরে না আসা বাবার সহায়সম্পদ বলে কিছু নেই। এখন চোখের সামনে অনিশ্চয়তার ছবি আর পেটে উদগ্র ক্ষুধায় জমাট বাধা কষ্টে গুমরে কেঁদে উঠছে এই তিন শিশু। অবুঝ তিন সন্তান নিয়ে সুমির যেন দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। কিভাবে চলবে তার সংসার তা নিয়েই সবসময় ব্যাকুল থাকতে হয় তাকে। কেন মরল, কিভাবে মরল তার স্বামী? সেই প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে বেড়ান প্রতিদিন।

সুমি বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে টাকার অভাবে অবুঝ শিশুদের খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের দৈন্যদশার খবর পেয়ে এক ব্যক্তি কিছুদিন আগে ১০ কেজি চাউল দেন। আজ সেইগুলো শেষ হয়ে গেছে। আমার পক্ষে এই তিন সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তায় রয়েছি। টাকার জন্য এলাকার বিত্তবানদের দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে বেড়াচ্ছি।

তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে আরোও বলেন, পেটে ক্ষুধা থাকায় অবুঝ শিশুগুলো ঘুমাতেও পারছেনা। অপেক্ষায় থাকতে হয় কে কোন সময় সহায়তা নিয়ে আসে। গত বুধবার স্থানীয় এক বাসিন্দার টাকায় সকালে দেয়া হয়েছে আলু ভর্তা-ডাল ও ভাত। দুপুরে চিড়া-মুড়ি। দুপুরে এদিক-ওদিক থেকে টাকা নিয়ে চাল-ডাল কিনে কোনো মতে দুপুরের খাবার দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাতে কী হবে? গত দেড় মাস ধরে এ অবস্থা চলছে।

সরকারি সহায়তা কিংবা সামাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে আর্থিক দৈন্যতা অনেকটা দূর হতো বলে মনে করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.