কেন বিক্ষোভ, কী চায় ভাসানচরের রোহিঙ্গারা?

ডেস্ক নিউজ:
কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের একটি অংশ সোমবার সেখানে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছে। প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের দুজন কর্মকর্তাসহ একটি প্রতিনিধি দল সোমবার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পটি পরিদর্শনের জন্য গিয়েছিলেন। তারা সেখানে পৌঁছানোর পরপরই রোহিঙ্গারা বিক্ষোভ করে। পরে এক পর্যায়ে কিছু ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।

ভাসানচরে কী ঘটেছে?
সোমবার বেলা ১১টার দিকে জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন দুজন কর্মকর্তাসহ প্রতিনিধি দলটি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে সেখানে গিয়েছিলেন। দলটিতে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর কর্মকর্তারা ছিলেন। এই প্রথমবার ইউএনএইচসিআর-এর কোনো প্রতিনিধি দল ভাসানচরে গেছেন।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানিয়েছে, দলটিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি নামার পরে সেখানে রোহিঙ্গাদের একটি দল মিছিল করে হেলিকপ্টারটির দিকে এগোতে শুরু করে। সে সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। তখন রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ভাসানচরে ওয়্যারহাউজ নামে একটি ভবনের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।

এক পর্যায়ে ইটপাটকেল দিয়ে ভবনটির কিছু জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়। সে সময় পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার।

রোহিঙ্গারা যা বলছেন
ভাসানচরে বাস করছেন এরকম কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা। তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানিয়েছেন যে, জাতিসংঘের যে প্রতিনিধি দলটি ভাসানচরে গিয়েছিলেন, তাদের সাথে রোহিঙ্গারা কথা বলতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু ভাসানচরে অবস্থানরত প্রায় ১৯ হাজারের মতো রোহিঙ্গাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন রোহিঙ্গাকে ‘ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। শুধু তাদেরকেই কথা বলতে দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল।

রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের অনেকেই যে আর থাকতে চান না, সেখানে তাদের নানাবিধ অসুবিধার পুরো চিত্র ফোকাল পয়েন্টের সদস্যরা তুলে ধরেন না কারণ তারা নিয়োগপ্রাপ্ত।

এই কারণে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের কাছে তাদের আসল অবস্থা কী, সেই বার্তা পৌঁছবে না এমন আশঙ্কা থেকে তারা চেয়েছিলেন শুধু ফোকাল পয়েন্ট নয় অন্যদেরও কথা বলতে দেয়া হোক।

কথা বলার সুযোগ না পেয়ে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। একটি অংশ ভাঙচুর করার পর ওখানে অবস্থানরত বাকি রোহিঙ্গারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

যদিও পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, পরে জাতিসংঘের দলটি রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেছেন। বিক্ষোভের কারণে একটু দেরিতে তারা কাজ শুরু করেন। এখন ভাসানচরের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

রোহিঙ্গারা কেন ভাসানচরে থাকতে চান না
গত ডিসেম্বর মাস থেকে কয়েক দফায় কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে স্থানান্তর করা হয়। তারা নিজেদের ইচ্ছাতেই সেখানে স্থানান্তরিত হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা অভিযোগ করছেন, সেখানে নিয়ে যাওয়ার আগে যেসব প্রতিশ্রুতি তাদের দেয়া হয়েছিল সেগুলো সব পূরণ করা হয়নি। তাদের মাসিক ভাতা, প্রতিটি পরিবারকে গরু দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল যা সবাইকে দেয়া হয়নি বলে রোহিঙ্গারা দাবি করছেন।

সেখানে শিশুদের পড়াশোনার জন্য কোনো স্কুল তৈরি করা হয়নি। তাদের প্রতিমাসের খাওয়ার যে রসদ দেয়া হয় তা ন্যূনতম কিছু সামগ্রী বলে অভিযোগ করেছেন রোহিঙ্গারা।

তাদের কক্সবাজারে আত্মীয়স্বজনদের সাথে সাক্ষাত করতে দেয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল বলে রোহিঙ্গারা দাবি করেছেন। কিন্তু শুধু চরেই তাদের অবস্থান করতে হয়।

এছাড়া খারাপ আবহাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে অনেকের মধ্যেই। ইতিমধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। খুব নিচু চরটিতে প্রায়শই পানি প্রবেশ করে, যা ঠেকানোর জন্য যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। তার একটি ভেঙে গেছে বলেও জানা গেছে। এখন রোহিঙ্গারা আশংকা করছেন যে সামনে বৃষ্টির মৌসুম শুরু হলে, কোনো সাইক্লোন তৈরি হলে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে।

এসব আশঙ্কা এবং সুযোগ সুবিধার অভাবে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে ফিরে যেতে চান। ইতিমধ্যেই ভাসানচর থেকে কিছু রোহিঙ্গার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এসব অভিযোগ নিয়ে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে আবাসন প্রকল্পটির পরিচালক এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছিলে। তবে কোনো ধরনের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। সূত্র: বিবিসি বাংলা

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.