কমিউনিটি পুলিশ বাদ নয়, চালু হচ্ছে ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘বিট পুলিশিং’ কার্যক্রম

ইমাম খাইর#
পুলিশ হেডকোর্টারের নির্দেশনা অনুযায়ী কক্সবাজার জেলার সকল ইউনিয়নে ‘বিট পুলিশিং’ কার্যক্রম চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি মো: আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীকে আরো বেশি জনমুখী করতে, মানুষের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছে দিতে ‘বিট পুলিশিং’ কার্যক্রম চালু হতে যাচ্ছে।

বর্তমানের ‘কমিউনিটি পুলিশিং’ কার্যক্রম দরকার নাই- এমন নয়। এ বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয় নি। তবে, বিট পুলিশিংকে জোর দেয়া হচ্ছে।

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মুঠোফোনে ডিআইজি মো: আনোয়ার হোসেন এসব কথা বলেন।

ডিআইজি এও বলেন, কমিউনিটি নিয়ে যে পুলিশিংটা ছিল এইটাকেই ‘বিট পুলিশিং’ নামে চালু করা হবে।

তিনি বলেন, কমিউনিটি পুলিশে সম্পৃক্ত অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। অভিযোগসমূহ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার সদর মডেল থানা ও উখিয়া থানা পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি মো: আনোয়ার হোসেন।

এ সময় তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলা পুলিশে যারা যোগদান করেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বার্তা হলো কক্সবাজারের জনগনকে নিয়ে কাজ করা, পুলিশ যাতে সম্পূর্ণ পেশাদারিত্ব নিয়ে আইনের প্রয়োগ করে। যে কারণে কক্সবাজার জেলা পুলিশকে ঢেলে সাজানো হয়েছে, তার উদ্দেশ্য যেন বাস্তবায়ন হয়।

মাদক কারবারিদের নতুন তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, সীমান্ত দিয়ে কীভাবে মাদক চোরাচালান হয়, কীভাবে তা রোধ করা যায়, তার জন্য কঠোরভাবে কাজ করা হবে। ইতোমধ্যে সেই লক্ষ্যে পুলিশকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। কাজে গতিশীলতা বাড়ানো হবে এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে পুলিশ কাজ করবে। জেলা পুলিশে সবাই নতুন হলেও কাজের বেলায় তারা খুব সতর্ক থাকবে। কাজের বেলায় জনকল্যাণকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। থানায় কোনও দালালের সুযোগ নেই। সাধারণ মানুষের জন্য পুলিশের দরজা সবসময় উন্মুক্ত থাকবে। সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে কাজ করবে পুলিশ।

জেলা পুলিশে কনস্টেবল থেকে পুলিশ সুপার পর্যন্ত সম্পূর্ণ রদবদলের পর প্রথম কক্সবাজার পরিদর্শন করলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো: আনোয়ার হোসেন।

মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে চকরিয়া থানায় নতুন যোগ দেওয়া পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ডিআইজি।

এদিকে, কমিউনিটি পুলিশ বাদ দেয়া হবে কিনা? জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেছেন, যেহেতু জেলা পুলিশের সবাই নতুন, কমিউনিটি পুলিশে কারা দায়িত্বে আছে তা যাচাই বাছাই করা হবে।

বর্তমানের ‘কমিউনিটি পুলিশিং’ কার্যক্রম বিলুপ্তির বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসে নি। এমন বক্তব্যও কেউ দেন নি- জানালেন পুলিশ সুপার।

তিনি বলেন, বর্তমানে কমিউনিটি পুলিশে যারা দায়িত্বে আছে তাদের সাথে আমরা বসব। কথা বলব।

সুত্র মতে, গ্রামাঞ্চলে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং শহরের মহল্লাগুলোকে বিটে বিভক্ত করে একজন উপ-পুলিশ পরিদর্শককে (এসআই) এর দায়িত্ব দেওয়া হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত এ পুলিশ কর্মকর্তারাই এলাকার আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজ রাখবেন ও প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থা নেবেন।

বিট পুলিশিংয়ের মূল ধারণা হচ্ছে, পুলিশ কর্মকর্তারাই সেবা নিয়ে যাবেন মানুষের কাছে। তবে মামলাসহ কিছু আইনগত বিষয়ে থানায় যেতে হবে।

বর্তমান করোনার পরিস্থিতিতে চরম বিপদে না পড়লে মানুষ থানামুখী হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ অবস্থায় বিট পুলিশিং চালুর সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

উন্নত দেশগুলোর আদলে এলাকাভিত্তিক বিট ভাগ করে পুলিশিং কার্যক্রমের বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশ প্রবিধানে (পিআরবি) উল্লেখ রয়েছে।

২০১০ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) প্রথমবারের মতো বিট পুলিশিং চালু হয়। এরপর সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশালসহ কিছু ইউনিটে কার্যক্রম চললেও দেশব্যাপী পরিচালনার নির্দেশনা ছিল না। এখন সারাদেশে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে ‘বিট পুলিশিং’ কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে। এতে করে এলাকার আইন শৃঙ্খলার উন্নতির পাশাপাশি পুলিশী সেবা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেনজীর আহমেদ আইজিপির দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সারা দেশে বিট পুলিশিং ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। গত ১৬ জুন এক ভিডিও বার্তায় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের যে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন তিনি, এর মধ্যে বিট পুলিশিং অন্যতম। পরে ২১ জুন রাতে আরেকটি ভিডিও কনফারেন্সে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে ইউনিট প্রধানদের নির্দেশনা দেন আইজিপি।

আইনি পরিভাষায়, বিট হলো একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা। পুলিশ অধীক্ষেত্রের একটি ছোট অংশকে বলা হচ্ছে বিট। সুতরাং বিট পুলিশিং হলো কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্টসংখ্যক বা বিশেষ পুলিশ সদস্যদের স্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করা। এ ধারণাটি এসেছে লন্ডন মহানগর পুলিশের কার্যপদ্ধতি থেকে। জাপানের কোবান পদ্ধতিতেও প্রতিটি কোবান বা পুলিশ বক্সের অধীন একটি নির্দিষ্ট এলাকা রয়েছে।

এদিকে, কক্সবাজার জেলার থানাগুলোতে বর্তমানে কমিউনিটি পুলিশের যে কমিটি রয়েছে তাদের কার্যক্রম খুবই গঠনমূলক ও শক্তিশালী। যেখানে আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি রয়েছে।

তবে, গুটি কয়েকজনের প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকান্ডের কারণে সম্প্রতি কমিউনিটি পুলিশ নিয়ে মাঠে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

যারা বিতর্কিত তাদের বাদ দিয়ে এই প্ল্যাটফর্মকে আরো বেশী গতিশীল করা যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.