কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী শনিবার
প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
‘শতবর্ষের কোলাহলে, একসাথে সকলে’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে আগামী ২৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রথম পুনর্মিলনী।
এ উপলক্ষে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় সংবাদ সম্মেলন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পুনর্মিলন উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী। বিদ্যালয়ের শহীদ শাহ আলম-বশির মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী বলেন, ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় তার গৌরবের ১৪২ বছর পালন করতে যাচ্ছে প্রাক্তন ছাত্রদের পুনর্মিলনীর মাধ্যমে। ২৫ ডিসেম্বর দিনব্যাপি আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে বিদ্যায়লটির প্রাক্তন ছাত্রদের পুনর্মিলনী উৎসব। ১৪২ বছরের বিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন আয়োজন আর হয়নি । এটি প্রথম আয়োজন প্রাক্তন ছাত্রদের । র্দীঘ বছরের পথ চলার সেই দু:খ ঘোচাতে একত্রিত হতে যাচ্ছে প্রাক্তন ছাত্ররা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এবং বিদেশের বহু প্রাক্তন ছাত্রসহ ১৮১৯ জন প্রাক্তন ছাত্র নিবন্ধন করেছেন।
বিদ্যালয়ের ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হলো কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় । একটু পিছনে গিয়ে যদি বিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাই, ১৮৭৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রথমে মাদ্রাসা হিসেবে যাত্রা শুরু করে । এরপর বৃটিশ সরকারের প্রভাবে ও স্থানীয় জনগণের ইচ্ছায় বিদ্যালয়টি (এম.ই.) মিডল ইংলিশ বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় ১৯০৮ সালে । ১৯২৩ সালের ৪ ই জানুয়ারী এটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে (ঐ.ঊ) উন্নীত করা হয় এবং এর মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মেট্রিকুলেশান পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অনুমতি পায়।
১৯২৫ সালে সর্বপ্রথম বিদ্যালয় থেকে ৬ জন ছাত্র মেট্রিকুলেশান পরীক্ষার জন্য নির্বাচত হয় । তম্মধ্যে ৪ জন প্রথম বিভাগে, ১ জন ২য় বিভাগে কৃতকার্য হয়ে তাক লাগানো সাফল্য সৃষ্টি করে । এরপর ১৯৫২ সালের দিকে কক্সবাজার মডেল হাই স্কুল এবং ১৯৭০ সালে জাতীয়করণের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়টি কক্সবাজার উচ্চ বিদ্যালয় নাম ধারণ করে।
বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে বিদ্যালয়টির ভূমিকা বিশেষ তাৎর্পযপূর্ণ । বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে বিদ্যালয়ের প্রাত্তন ছাত্র শ্বৈলেশ্বর চক্রবর্তী ও নির্মল লালা শহীদ হন। ১৯৫২ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারে প্রথম ভাষা আন্দোলনের মিছিল বের হয় তৎকালীন দশম শ্রেণীর ছাত্র খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অত্র বিদ্যালয় থেকে। খালেদ মোশাররফ পরবর্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার এবং স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের সেনাপ্রধান । এরপর ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মহান মক্তিযুদ্ধে বিদ্যালয়ের ছাত্রদের অবদান অনস্বীকার্য। শহীদ সুভাষ দাশ , শশী কুমার বড়ুেয়া , স্বপন ভট্টাচার্য্য , শামসুল আলম বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন । এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহ আলম ও বশির মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত শহীদ মিনার টি জেলার স্বাধীনতাত্তোর প্রথম শহীদ মিনার।
এছাড়া কক্সবাজারের ইতিহাসের সাথে মিশে থাকা বিদ্যালয়টি অবদান রেখেছে উচ্চ শিক্ষা ও নারী শিক্ষা প্রসারেও । ১৯৬২ সালে কক্সবাজার কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও নিজস্ব ভবন হওয়ার আগে বিদ্যালয়ে কলেজের শ্রেনী কার্যক্রম চলত, এছাড়াও সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে এই বিদ্যালয়ে সহ শিক্ষা চালু ছিল। স্বল্প সংখ্যক মেয়েরা এখানে পড়তো।
তিনি জানান, পুনর্মিলনী উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের মাননীয় সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পূণর্মিলনী উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এম এম সিরাজুল ইসলাম, মো. ওমর ফারুক, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, প্রাক্তন ছাত্র নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, পুণর্মিলনী উদযাপন কমিটির মহাসচিব মো. তারেক, যুগ্ম মহাসচিব রিয়াজ উদ্দিন ও মো. জিয়াউল হুদ, প্রধান সমন¦য়ক মোহিব্বুল মোক্তাদির তানিম এবং সদস্য সচিব সাঈদ বিন জেবর প্রমুখ।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.