কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে চবির ৩৫ এর ঢেউ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

পাহাড় আর সমুদ্রের অদ্ভুত এক আলিঙ্গন যেখানে!

যেখানে আছড়ে পড়ে সুবিশাল জলরাশির ঢেউ! আছড়ে পড়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে!

উত্তরের হিমেল হাওয়ার পরশ জানান দেয় বন্ধু আর বন্ধুত্বের আগমনী বার্তা সে জনপদে!

সমুদ্রের সেই ঢেউ কে ম্লান করে উচ্চারিত হয় বন্ধুত্বের জয়গান; উচ্চারিত হয় “৩৫-এর ঢেউ”!

গত ৫-৬ জানুয়ারী দুই দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ৩৫তম ব্যাচ-এর বন্ধুদের নিয়ে এক মহামিলন মেলা “৩৫ এর ঢেউ”।

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই মিলনমেলায় যোগ দেয় উক্ত ব্যাচের অসংখ্য বন্ধু স্বজনরা।

দীর্ঘ এই ভ্রমণ পথে তারা ফিরে গিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণালী দিনগুলোতে। শাটল ট্রেনের গান, কাটা পাহাড়ের দৌড়, ক্যাম্পাসের সেই অব্যক্ত ও অজানা আড্ডা যা তাদের হৃদয়ের খোরাক হিসেবে বেঁচে থাকবে স্মৃতিপটে।

দীর্ঘ ভ্রমণ পথ মাড়িয়ে তারা অবস্থান নেয় হোটেল অস্টার ইকোতে; যেখান থেকে দেখা যায় দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত।

হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সমুদ্রকে সাক্ষী রেখে প্রেমিকযুগলরা মেতে ছিল আবেগী সব গানে- তুমি আমার কত চেনা, সে কি জান না, এই জীবনের আশা তুমি, তুমি যে ঠিকানা।

অথবা আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য,তোমারই প্রেমেরই জন্য।

দুপুরে খাবারের তালিকায় ছিল মেজবানীর মাংস, কালা ভূনা, খাসির মাংস, হাড় মাংস দিয়ে চনার ডাল, শুঁটকী ভর্তা, বেগুন ভর্তা, সফট ড্রিংক্স এবং মিনারেল ওয়াটার।

দুপুরের খাবার শেষে বিতরণ করা হয় নান্দনিক নকশাপূর্ন পোলো টি-শার্ট। তারপর শুরু হয় সমুদ্র আভিমুখে পদযাত্রা। সৈকতে সব বন্ধু-বান্ধবী একে অপরের হাত ধরে তৈরী করে “৩৫ এর ঢেউ”-এর ম্যুরাল!

সমুদ্র সৈকতে যে যার মত মজা করে, তবে ফটো সেশনে বরাবরই ব্যাচেলরা ছিল এগিয়ে।

পক্ষান্তরে রোমান্টিকতায় ভরপুর ছিল কাপল পার্টি। সমুদ্র দর্শনের পাশাপাশি অনেকে শপিং করতে যায় বার্মিজ মার্কেটে।

অনেকে আবার দেখতে যায় Radiant Fish Aquarium.

রাত ৮টায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা যা রাত্র ৩টা পর্যন্ত চলছিল। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাটা ছিল নান্দনিকতায় ভরপুর।

কেউ একজন নাচের তালে তালে বলে ফেলে ‘দোস্ত হার্টের সমস্যা মনে হয় এক বৎসরের জন্য দূর হয়ে গেল।’

আর একজন কান্না জড়িত কন্ঠে বলে ‘দোস্ত প্রতি বছর এই রকম আয়োজন যদি হত, তাহলে এক বৎসরের জন্য অক্সিজেন পেতাম বাঁচার জন্য’।

রাতের খাবার ছিল খাসির মাংস, রূপচাঁদা মাছ, সবজি, ডাল ও বোরহানী।

সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠিত হয় র্যাফল ড্র পর্ব।

তারপর অনেকে বিচে, অনেকে হোটেল রুমে, আবার অনেকে চা স্টলে ব্যস্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি রোমন্থনে।

০৬ তারিখ সকালে সমুদ্রের নীল গর্জনে সূর্য উদয়’ অবলোকন ছিল অসাধারণ অনুভূতি।

বীচ ফুটবল, বীচ ক্রিকেট, Couple পার্টি রোমান্টিক ফটোসেশন আর ভাবীরা প্রতিযোগিতায় মেতে ছিল, কে কত রোমান্টিক ছবি ফেসবুকে এ আপলোড করতে পারে।

৬ তারিখের সূর্যও ডুব দেয় সাগরের বুকে। ধীরে ধীরে ক্ষীন হয়ে ওঠে বন্ধুত্বের কলরব। কর্মব্যস্ত যান্ত্রিক নগর-জীবনে ফিরে যাওয়ার জোর আহবান জানায় রাতের গাড়ি।

বিদায় নিয়ে নেয় যে যার মতো করে বুকে বুক আর হাতে হাত রেখে। আগামী যে কোনো প্রভাতে আবার মিলবার প্রত্যয়ে যবনিকাপাত হয় এক অপূর্ব উৎসবের।

মন জুড়ে রয়ে যায় কেবলই মুগ্ধতার গল্পমালা।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.