মো.নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজারঃ
কক্সবাজারের বিলাসবহুল হোটেল সায়মন। যেখানে রয়েছে অনুমোদিত মদের বার । বারে সুন্দর করে সাজানো রয়েছে দেশি ও বিদেশী মদ । যে কেউ বারে গিয়ে অর্ড়ার করলে টেবিলে চলে আসছে যেকোন ব্রান্ডের মদ বা অ্যালকোহল। শুধু এই হোটেল নয় কক্সবাজারের যতগুলো বার রয়েছে দেশের প্রচলিত আইনকে তোয়াক্কা না করে এভাবে বার চালাচ্ছে বার মালিকরা। তাদের ব্যবসা বাড়াতে দেখছে না কার কাছে মদপানের পারমিট আছে কার কাছে নেই! আর এই ভাবে অ্যালকোহল বা মদ পান করার পারমিট না থাকলেও কক্সবাজার আসলে অনায়াসে এই অ্যালকোহল বা মদ পাওয়া যাবে হাতের নাগালেই। মদের বার নিয়ে বসে আছে পর্যটন শহরে প্রায় ১০টি মদের বার। ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা বাড়াতে পারমিট বিহীন উঠতি বয়সী যুবক, ছাত্র ও স্থানীয়দের হাতে তুলে দিচ্ছে এই অ্যালকোহল বা মদের গøাস। যার কারণে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের উঠতি বয়সি ছেলেরা মদ্যপানের দিকে ঝুঁকে পড়ছে । এব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন কোন অদৃশ্য কারণে নিরব ভুমিকা পালন করছে। তারা বলছে, এটি পর্যটন নগরী কিছুটা শীতলতা থাকা দরকার । পর্যটন এলাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক আসে তাদের আনন্দ যেন মলিন না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন না সবসময়।
# উঠতি বয়সী যুবকদের হাতে মদের গøাস
# বারে মদ পানে প্রয়োজন পড়ে না পারমিটের
# হচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়
# প্রশাসন নিরব
স্থানীয়রা মনে করছে, স্থানীয় প্রশাসনের এমন অবহেলার কারণে মানা হচ্ছে না দেশের প্রচলিত আইন। অ্যালকোহল বা মদ ব্যবসায়ীরা এমনভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে। যার কারণে সমাজ দিন দিন অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এদিকে ট্যুরিষ্ট এলাকায় দিনদিন চুরি ছিনতায়ও বেড়েছে বলে জানা গেছে। বিধিমালায় আছে, ২১ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তিকে মদ্যপানের পারমিট বা অনুমতি দেয়া যাবে না। এর বেশি বয়সী যে কেউ পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে মুসলিমদের ক্ষেত্রে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদমর্যাদার কোনো ডাক্তারের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। একজন পারমিটধারীর কাছে এককালীন সর্বোচ্চ তিন ইউনিট এবং মাসে সর্বোচ্চ সাত ইউনিটের বেশি অ্যালকোহল বিক্রি করা যাবে না। তবে বিশেষ পারমিটধারীর কাছে এই পরিমাণ অ্যালকোহল এককালীন বিক্রি করা যাবে। একই ব্যক্তির নামে একই মেয়াদে বিদেশি এবং দেশি অ্যালকোহলের পারমিট ইস্যু করা যাবে না। পারমিটধারী ক্লাব মেম্বাররা ক্লাবের নির্ধারিত স্থানে বসে মদ্যপান করতে পারবেন। এই বিষয়টা কক্সাবাজরের ক্ষেত্রে ভিন্নতায় রূপ নিয়েছে। প্রশাসন অদৃশ্য কারণে নিরব থাকায় যে কেউ গেলে অ্যালকোহল বা মদ কিনে নিয়ে আসতে পারবে বা বারে বসে পান করতে পারে এমনটা নজরে এসেছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল এলাকার বারগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, বেশিভাগ ২০ থেকে ২৫ বছর উঠতি বয়সী তরুন তরণীরা তাদের মদ পানের পারমিট না থাকলেও বারে বসে মদ পান করছে। অ্যালকোহল বা মদ উৎপাদন, কেনাবেচা, পান করা, পরিবহন, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে নিয়মনীতি স্পষ্ট করে প্রথমবারের মতো বিধিমালা করেছে সরকার। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগ থেকে ‘অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২২ জারি করা হয়েছে। ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর আওতায় বিধিমালাটি করা হয়েছে। এতদিন ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’, ‘অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ (লাইসেন্স ও পারমিট ফিস) বিধিমালা ২০১৪’, ‘মুসলিম প্রহিবিশন রুল ১৯৫০ও ‘এক্সাইজ ম্যানুয়াল (ভল্যুম-২)’ ও বিভিন্ন নির্বাহী আদেশ দিয়ে অ্যালকোহল সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রিত হতো। অনেক ক্ষেত্রেই ছিল অস্পষ্টতা। এতে বিভিন্ন সময়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হতো। বিধিমালা অনুযায়ী, মদ কেনাবেচা, পান, পরিবহনের ক্ষেত্রে নিতে হবে লাইসেন্স, পারমিট ও পাস। কোথাও কমপক্ষে ১০০ জন মদের পারমিটধারী থাকলে ওই এলাকায় অ্যালকোহল বিক্রির লাইসেন্স দেওয়া হবে। এদিকে বিধিমালার ৩য় অধ্যায়ে অ্যালকোহল পান, ইত্যাদি সম্পর্কে বিধি-নিষেধ সম্পর্কে বলা হয়েছে, পারমিট ব্যতীত কোনো ব্যক্তি অ্যালকোহল পান করিতে পারিবেন না এবং চিকিৎসার প্রয়োজনে সিভিল সার্জন অথবা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের কোনো সহযোগী অধ্যাপকের লিখিত ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনো মুসলমানকে অ্যালকোহল পান করার জন্য পারমিট প্রদান করা যাবে না বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু এমনটা মানা হচ্ছে না এই পর্যটন শহরে।
সম্প্রতি ককক্সবাজারের হোটেল সায়মন এর বারের খবর নিয়ে জানা গেছে , চেয়ারে অধিকাংশ ছাত্র ও উঠতি বয়সি যুবক যাদের কাছে কোন ধরণের পারমিট নেই । তার পরেও হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের মদ সরবরাহ করছে পান করার জন্য। একইদিন ট্যুরিষ্ট পুলিশ কার্যালয়ের পাশে কয়লার একটি বারে দেখা যায় এটি বার নয় যেন ভাতের দোকান। তিল পরিমান ঠাই নেই । মানুষে ভরা এই বারটি। যারা বসেছে তাদের মদ পানের অনুমতি আছে কিনা ঐ বারের এক কর্মচারির কাছে জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ বলে পাস কাঠিয়ে চলে যান।
হোটেল সায়মনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এএফএস আছাদ এর কাছে বার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আইন মেনে বার পরিচালনার করছেন বলে জানান এবং বিস্তারিত আরো তথ্য দরকার হলে প্রতিবেদককে হোটেল অফিসে গিয়ে কথা বলার অনুরোধ করেন ।
এদিকে কক্সবাজার মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে একটি দেশিয় মদ বিক্রি দোকান রয়েছে যারা শুধু দেশিয় মদ বিক্রি করতে পারবে আর হোটেল এলাকায় ১০টির মতো বারের অনুমতি রয়েছে যেখানে দেশির প্যাকেটজাত মদসহ মদপানে পারমিটধারিদের বিক্রি করা ও বসে পান কার যাবে। ১০টি বারগুলো হলো রেনেসা, কয়লা,সিগ্যাল হোটেল বার, ওশান প্যারাডাইস হোটেল বার,হোটেল সায়মন বার, সি প্যালেস হোটেল বার, সি ক্রাউনসহ আরো কয়েকটি। কিন্তু কক্সবাজারের বিয়ষ বলছে ভিন্ন। এই পর্যটন শহরে মদ বিক্রি করার জন্য কোন বৈধ পারমিটধারির প্রয়োজন পড়েনা । কলেজ পড়–য়া ছাত্ররাও রাতে এসে পর্যটন শহরের বিভিন্ন বারে বসে মদ পান করলেও প্রশাসনের কোন ধরনের নেই। যার কারণে সামাকি অবস্থার দিন দিন অবক্ষয় হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় সচেতন মহল।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন জানান, সমাজ অবক্ষয়ের একমাত্র মাধ্যম এই মাদক। কক্সবাজার শহরে মদ বিক্রির বার রয়েছে যারা বিক্রি করেন তাদের সচেতন হওয়া দরকার কারণ এ মদ কাকে বিক্রি করবে তা নিধারণ করে তাদের পারমিট প্রদান করেছে । কিন্তু স্থানীয় বারগুলো এখন তা অমান্য করে ছাত্র থেকে শুরু করে যাদের পারমিট নেই সবাইকে মদ বিক্রি করছে তাদের ব্যবসা বাড়াতে । যার কারণে সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে দিনদিন।
সি প্যালেসের বার দায়িত্বরত কর্মকর্তা বাবুল হোসেন বলছিলেন, আমরা বারে যারা পারডমটধারি যারা রয়েছে তাদের বিক্রি করে থাকি। যাদের পারমিট নাই তাদের আমরা মদ বা অ্যালকোহল বিক্রি করি না। যারা উঠতি বয়সি যুবকদের হাতে মদের গøাস ধরিয়ে দিচ্ছে তারা সমাজ বিনষ্ট করছে। আর এই বিষয়ে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের খেয়াল রাখা উচিৎ।
কক্সবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ সিরাজুল মোস্তফা জানান, কক্সবাজার শহরে ১টি দেশিয় মদ বিক্রি অনুমোধনসহ ১০ টি বারে অনুমতি আছে। বারে যারা পারমিটধারি তারা বসে মদ পান করতে পারবে। কিন্তু যাদের পারমিট নাই তাদের কোনভাবে মদ বিক্রি করা উচিৎ নয় । আবার আরেকটি বিষয় বলা যায় যেহেতু কক্সবাজার পর্যটন নগরী তাই এখানে কিছুটা ক্ষেত্রে শীতলতা রয়েছে । কারণ এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক আসে। তাদের যেন কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। আবার বিদেশী পর্যটক যারা রয়েছে তারা পাসপোর্ট দেখিয়ে বারে মদ পান করতে পারবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.