কক্সবাজারে এক মাসে দুই ছাত্রলীগ কর্মী খুন

আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি

মোঃ নেজাম উদ্দিন,
কক্সবাজার সদরে একমাসের মাথায় দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে কক্সবাজার জেলা ব্যাপী বেশ আতঙ্ক বিরাজ করছে। কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ কর্মীরা এমন হত্যাকান্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি করেছে। প্রথমে কক্সবাজারের খুরুস্কুলে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সম্মেলন চলাকালে পুলিশের উপস্থিতিতে ফায়সাল উদ্দিন নামের এক ছাত্রলীগ নেতাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেছে একদল দুর্বৃত্তরা ।৩ জুলাই রবিবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে সদরের খুরুস্কুল ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সম্মেলন চলাকালে ডেইলপাড়ায় এই হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটে।এদিকে গত বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) কক্সবাজার শহরে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছে ইমন নামে এক ছাত্রলীগ নেতা। বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানা যায়। নিহত ইমন উত্তর টেকপাড়ার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাছানের পুত্র। সে ৪ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে , বৃহস্পতিবার সাড়ে ৯টার দিকে পেশকার পাড়ার বাঁকখালী নদীর সিকো বরফ কল পয়েন্টে ইমন হাসান মওলা তার পিতার মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরতে যায়। সেখানে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তার গতিরোধ করে পেশকার পাড়া এলাকার বহু মামলার আসামী আবদুল্লাহ খান, ছৈয়দ আকবর, রমজান, ইমন, সানি ও ফরহাদসহ ৭-৮ জন সন্ত্রাসী। এসময় ইমনকে শরীরে বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে সন্ত্রাসীরা। ছিনিয়ে নেওয়া হয় তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় ইমন মাটিতে ঢলে পড়লে মৃত্যু হয়েছে ভেবে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমনের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি আসিফুল করিম বলেন, নির্মমভাবে এই ছাত্রলীগ নেতাকে খুন করা হয়েছে। অবিলম্বে তার হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। নচেৎ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। এবিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর-উল-গীয়াস বলেন, খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেন জানান,একমাসের মাথায় আমরা ছাত্রলীগের দুজন কর্মীকে হারালাম । যারা ফয়সাল ও ইমনকে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি । সেই সাথে কেনর বার বার ছাত্রলীগ কমীর উপর হামলা হচ্ছে আর কেন প্রশাসন তাদের গ্রেফতার করতে পারছেনা এব্যাপারে আমার জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলবো। যদি আইন শৃংখলা বাহিনী হত্যাকারিদের ধরতে অপারগ হয় তবে আমরা ছাত্রলীগ কর্মীরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করবো।
অন্যদিকে কক্সবাজারে এই মাসের ১ থেকে ৪ তারিখের মধ্যে ৫ জনের লাশ পেয়েছে পুলিশ। তার মধ্যে দুইজন শিশু একজন কিশোর ও আর দুইজন যুবক। দুই যুবককে সরাসরি হত্যা করা হলেও বাকি তিন জনের হত্যা না অপমৃত্যু সন্দেহ থেকে যায়। মাসের শুরুতেই দুটি সরাসরি হত্যা হলেও আরো ৩টি লাশ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (৪ জুলাই) দিবাগত রাত ১টার দিকে সৈকতের ডায়াবেটিক ও নাজিরারটেক পয়েন্টে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসলে তাদের মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। মৃত শিশুরা হলো কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়াপাড়ার বাসিন্দা মুফিজ আলমের ছেলে মো. জায়েদ (৫) এবং মোহাম্মদ আলীর ছেলে রিয়াদ (৬)। কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘সোমবার বিকাল ৩টার দিকে জোয়ার আসে। রাত ১২টার পরে দুই স্থান থেকে দুজনের লাশ পাওয়া যায়।’ তিনি জানান, দুই শিশুকে উদ্ধার করে দ্রæত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে হত্যা না অপমৃত্যু তা এখনো জানা যায়নি। অপরদিকে একইদিন বিকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে তানভীরুল হক তামিম নামের স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় মাহিম নামের আরেক ছাত্রকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।নিহত তামিম টেকনাফের হ্নীলা মহেশখালিয়া পাড়ার বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী মো. নুরুল হকের ছেলে এবং কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির নবম শ্রেণীর ছাত্র। বর্তমানে তাদের বাড়ি কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল সংলগ্ন দক্ষিণ লার পাড়ায়। সোমবার (৪ জুলাই) বিকাল ৪টার দিকে সমুদ্রের লাবণি পয়েন্টে দুই বন্ধু গোসল করতে নামে। সেখানে নিখোঁজ হয় তামিম। ঘণ্টাখানেক পরে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে লাইফ গার্ডের সদস্য ও বীচ কর্মীরা। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এসে কক্সবাজার আশ্রয়ণ প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে দুই রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (৫জুলাই) কক্সবাজার সদরের খুরুস্কুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায় । মৃত ব্যক্তি হলেন উখিয়া কুতুপালং ১নং ক্যাম্পের জি বøকের মাহমুদ হোসেন এর ছেলে মোঃ সালাম(৪০) একই মাসে কক্সবাজার কলাতলী জোনে একজন তরুনির লাশও উদ্ধার করা হয়।
হঠ্যাৎ এমন কক্সবাজারের আইন শৃংখলার চরম অবনতি হওয়াতে স্থানীয়রা শংকিত। মাদক অস্ত্র উদ্ধার ও হত্যার মতো কাজ চলছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। এ নিয়ে পুরো জেলা এখন আতঙ্কে দিন যাপন করছে । অপরদিকে হঠাৎ করে তৎপরতা বেড়ে গেছে মাদক ব্যবসায়ীদেরও দৌরাত্ব। সীমান্ত এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা আবারও গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ফলে নানা কৌশলে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে ঢুকছে ইয়াবা ও আইসের মতো মাদকের বড় বড় চালান। বিজিবি,র‌্যাব ও পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে মাদকের ‘ক্যারিয়ার’রা ধরা পড়লেও মূলহোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এছাড়া জেলার ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার,খুন, গোলাগুলি এবং অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেই চলেছে।অন্যদিকে র‌্যাব-১৫ গত মাসে টেকনাফের জাদিমুরা থেকে ডাকাত সর্দার সৈয়দ হোসেন প্রকাশ পুতিয়াকে একটি বিদেশী পিস্তল, ২রাউন্ড গুলি ম্যাগজিনসহকারে আটক করে।(৩ জুলাই) সাড়ে ৬টার পর কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের ডেইলপাড়া এলাকায় খুরুশকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন থেকে ফেরার পথে ফয়সাল উদ্দিন (২৫) নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ফয়সাল খুরুশকুলের দক্ষিণ ডেইলপাড়ার মৃত লাল মোহাম্মদের ছেলে। তিনি সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাকে হত্যার প্রতিবাদে কক্সবাজার জেলা শহরে ৩জুলাই রাতে তাৎক্ষনিক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

 

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.